সাইনির হাত ধরেই নতুন পরিচিতি পেয়েছে মিয়ামস্ কেক, নেপথ্যে ছিলেন তাঁর মা
২০১৬-তে শুরু হয় মিয়ামস্ কেক-এর যাত্রা। ব্যবসায় প্রাথমিকভাবে খানিকটা বেগ পেতে হলেও আজকের দিনে ‘মিয়ামস্ কেকস’ বেশ পরিচিত নাম
কেকের প্রতি মানুষের ভালবাসা যেন চিরন্তন। জন্মদিন হোক বা শেষ পাতের ডেজার্ট — সেই ব্রিটিশ আমল থেকে সময়ে অসময়ে মুখমিষ্টির সঙ্গী হয়েছে কেক। সেই ভালবাসাকে সঙ্গে নিয়েই শহরের আনাচে কানাচে তৈরিও হয়েছে বহু বেকারি। স্বাদে, গন্ধে পুরনো সেই বেকারিগুলিকে টেক্কা দিচ্ছে নতুন বেকারিগুলি। সাম্প্রতিক সময়ে তৈরি হওয়া এই বেকারিগুলির মধ্যে বেশ নজর কেড়েছে ‘মিয়ামস্ কেকস’। প্রিয়জনের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা কেক থেকে বিভিন্ন স্বাদের পেস্ট্রি — একগুচ্ছ সম্ভার নিয়ে হাজির হয়েছেন সংস্থার কর্ণধার সাইনি সাহা।
২০১৬-তে শুরু হয় মিয়ামস্ কেক-এর যাত্রা। ব্যবসায় প্রাথমিকভাবে খানিকটা বেগ পেতে হলেও আজকের দিনে ‘মিয়ামস্ কেকস’ বেশ পরিচিত নাম। শহরের মানুষের কেকপ্রীতির কথা বেশ ভালভাবেই আঁচ করতে পেরেছিলেন সাইনি। আর সেই কারণেই গতে বাঁধা চাকরি ছেড়ে নিজের মতো করে শুরু করেছিলেন এই সংস্থা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাইনির এই সংস্থা মন জয় করে নিয়েছে বহু মানুষের।
সাইনির বড় হয়ে ওঠা এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে। এমবিএ শেষ করার পরে শহরের একটি বহুল পরিচিত পাঁচতারা হোটেলে কাজ শুরু করেন তিনি। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই হোটেলের চাকরি তাঁর কাছে গতানুগতিক মনে হতে থাকে। সিদ্ধান্ত নেন যে নিজের জন্য কিছু একটা করতে হবে। পাশে পেয়ে যান মা — সুনীতা সাহাকেও। সমস্ত রকম ভাবে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন সাইনির হবু বর সঙ্কল্প সরকার।
কিন্তু কী করা যায়? প্রাথমিকভাবে মা ও বরের সঙ্গেই আলোচনা করেন সাইনি। ভাল করে খতিয়ে দেখেন এমন কী রয়েছে যা তাঁর ভবিষ্যত তৈরিতে সাহায্য করবে। সাইনি সিদ্ধান্ত নেন, কেকের ব্যাবসা করবেন। চাকরি ছেড়ে লেগে পড়েন কাজে। হোটেলে কাজ করার সুবাদে বেশ খানিকটা সুবিধাও হয়। শুরু হয় ‘মিয়ামস্ কেকস’-এর যাত্রা।
ছেলেবেলা থেকেই আঁকার প্রতি ভালবাসা ছিল সাইনির। সেই অসম্পূর্ণ প্রেমের প্রতিচ্ছবিই তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন এই বেকারি শিল্পে। বলা যায়, এই ভালবাসাই বৈচিত্র নিয়ে এসেছে ‘মিয়ামস্ কেকস’-এর তৈরি কেকগুলিতে। চোখ ধাঁধানো নকশা থেকে অনবদ্য স্বাদ, নিজগুণেই স্বল্প সময়ে শহরের বুকে পরিচিতি পেয়েছে এই বেকারি।
সাইনির প্রতিটি কেক জুড়ে রয়েছে নতুনত্বের ছোঁয়া। কোনও কেক জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বাংলা বর্ণমালা। আবার কোনও কেকে ফুটে উঠেছে মাতৃ দিবসের থিম। কখনও বা ফিফা বিশ্বকাপ। মিয়ামস্ কেক-এ গ্রাহকদের জন্য রয়েছে তাঁদের পছন্দের সব নকশাই।
সাইনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে প্রতিটি কেকের মধ্যে নিজস্বতা থাকা উচিত। গ্রাহকরা ঠিক যেমন নকশার কেক চান, সাইনি কেকের মধ্যে নিজের দক্ষতায় ঠিক তেমন নকশাই ফুটিয়ে তোলেন। কখনও কোনও কেকের নকশার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এক বা দুই লাইন জুড়ে দেওয়া হয়। কখনও বা ফুটে ওঠে গ্রাহকের নিজের প্রতিচ্ছবি। সাইনির মতে, “গ্রাহকেরা প্রিয়জনের জন্য বেশিরভাগ সময়েই কাস্টমাইজড কেকের অর্ডার দিয়ে থাকেন। প্রত্যেকটি কেকের মধ্যে সম্পূর্ণ নিজস্বতার খোঁজ করেন তাঁরা। এই ধরনের কেকগুলির সঙ্গে জুড়ে থাকে আবেগ। আমরা চেষ্টা করি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সেই আবেগকেই কেকের মধ্যে ফুটিয়ে তোলার। সেই সঙ্গে জিভে জল আনা স্বাদ তো রয়েছেই। এই প্রচেষ্টা এবং স্বাদই মিয়ামস্ কেকের জনপ্রিয়তার মূল কারণ।”
শুধু মাত্র কলকাতাতেই নয়, শহর ছেড়ে বিদেশের মাটিতেও নাম ছড়িয়েছে মিয়ামস্ কেকস -এর। বর্তমানে বিদেশ থেকেও বহু মানুষ কেকের অর্ডার দেন। অর্ডার আসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও। সাইনি মনে করেন, কোনও সংস্থার সুনাম ও সফলতার নেপথ্যে সর্বদা সংস্থার গ্রাহকদের অবদান অনস্বীকার্য। যেহেতু গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী তিনি কেক তৈরি করতে পেরেছেন, সেহেতু মিয়ামস্ কেকও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে অভূতপূর্বভাবে। অপূর্ব নকশা তো বটেই, পাশাপাশি গুণমান ও অতুলনীয় স্বাদই হয়ে উঠেছে সাইনির তুরুপের তাস। জন্মদিন হোক অথবা ভ্যালেন্টাইনস ডে, বিবাহ বার্ষিকী হোক বা অন্য কোন উদযাপন— এক লহমায় মন ভাল করে দেয় ‘মিয়ামস্ কেকস’ –এর কাস্টমাইজড কেকগুলি।
সাইনি সাহা এক কথায় আজকের নারীদের কাছে আত্মনির্ভরতার প্রতীক। সাইনির গর্বে গর্বিত তাঁর মাও। গতে বাঁধা জীবন ও চাকরির চার দেওয়াল থেকে বেরিয়ে এসে নিজের ভালবাসা, শখকে পেশা হিসেবে ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে সাইনির মা যে ভাবে তাঁর পাশে থেকেছেন, তা এক কথায় অনস্বীকার্য। যে কোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রেই সাফল্যের শিখরে পৌঁছতে প্রয়োজন হয় প্রচেষ্টা ও অসামান্য আত্মবিশ্বাসের। সেই পথকেই আরও বিস্তৃত করেছেন সাইনির মা। সত্যিই তিনি রত্নগর্ভা। সাইনির পথ চলার গল্প আজ বহু মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা।