Jhulan Goswami: সবচেয়ে বেশি কী মিস করবেন? অবসরের আগের দিন সব ভাগ করে নিলেন ঝুলন…

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কেরিয়ার শুরু হয়েছিল, শেষটাও হতে চলেছে তাদের বিরুদ্ধেই। কেরিয়ারে প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি, আফসোস, নানা বিষয়ে খোলামেলা ঝুলন গোস্বামী।

Jhulan Goswami: সবচেয়ে বেশি কী মিস করবেন? অবসরের আগের দিন সব ভাগ করে নিলেন ঝুলন...
Jhulan Goswami: সবচেয়ে বেশি কী মিস করবেন? অবসরের আগের দিন সব ভাগ করে নিলেন ঝুলন...
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 23, 2022 | 5:32 PM

দীপঙ্কর ঘোষাল

একটা সময় থামতে হয়। কঠিন সত্য, তবু মেনে নিতে হয়। আগামিকাল, শনিবার লর্ডসে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে নামছেন কিংবদন্তি ঝুলন গোস্বামী (Jhulan Goswami)। মেয়েদের ওয়ান ডে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বাধিক উইকেট শিকারি। ২টো ওয়ান ডে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছেন। অল্পের জন্য ট্রফি ছোঁয়া হয়নি। লর্ডসে কেরিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলতে চলেছেন। সেই লর্ডস, যেখানে ২০১৭ বিশ্বকাপ ফাইনালে অল্পের জন্য হার ইংল্যান্ডের কাছে। আবেগের মাঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শেষ বার বোলিং করতে দেখা যাবে কিংবদন্তিকে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কেরিয়ার শুরু হয়েছিল, শেষটাও হতে চলেছে তাদের বিরুদ্ধেই। কেরিয়ারে প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি, আফসোস, নানা বিষয়ে খোলামেলা ঝুলন গোস্বামী। কিছুক্ষণ আগেই ভার্চুয়াল সাংবাদিক সম্মেলন করেন বিশ্বের অন্যতম সেরা পেসার। উপস্থিত ছিলেন TV9Bangla-র প্রতিনিধিও।

কিছুদিন আগেই অবসর নিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটের আর এক কিংবদন্তি মিতালি রাজ। কেরিয়ারে এই প্রথম মিতালিকে ছাড়া ওয়ান ডে সিরিজ খেলছেন ঝুলন। শুধুমাত্র সতীর্থ নয়, তাঁরা খুব ভালো বন্ধু। অবসরের আগের দিন মিতালিকে নিয়ে প্রশ্নে ঝুলন বললেন, ‘কেরিয়ারের শুরুতে ভাবিনি, এত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলব। মিতালারি সঙ্গে অনূর্ধ্ব ১৯ থেকে খেলেছি। প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করেছি। মাঠে এবং বাইরে দারুণ একটা সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের কেরিয়ারের শুরুর দিক এবং এখনকার মধ্যে বিরাট পার্থক্য এসেছে। একটা সফর ছিল…। বিশ্বাস রেখেছিলাম, আমরা ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের চিত্র বদলে দিতে পারি। আমাদের বিশ্বাস ছিল, বিশ্বের সেরা তিনটে দলের মধ্যে থাকতে পারি। এটা রাতারাতি হয় না। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। প্রতিনিয়ত আলোচনা করতাম। প্রচুর ওঠা-পড়া গিয়েছে। আমাদের মধ্যে বিশ্বাসটা ছিল, পারব। শুধুমাত্র আমরাই (মিতালি-ঝুলন) নই, টিম হিসেবে সবাই মিলে লড়াই করেছি।’

দীর্ঘ ২০ বছরের বেশি সময়ের আন্তর্জাতিক কেরিয়ার। ঘরোয়া ক্রিকেট ধরলে অনেক অনেক বেশি। এক জন পেসারের জন্য এত বছর খেলা এবং ধারাবাহিক পারফর্ম করা সহজ নয়। সফরটা কেমন ছিল? ঝুলন বলছেন, ‘আমি খুব লাকি যে, দীর্ঘদিন ভারতীয় ক্রিকেটে খেলতে পেরেছি। পরিবার পাশে না থাকলে এটা সম্ভব হত না। চাকদার মতো একটা জায়গা থেকে উঠে এসে পেশাদার ক্রিকেটে পা রাখা সহজ ছিল না। মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে শুরুর দিকে কোনও ধারনাই ছিল না। রোজ সকালে প্রায় আড়াই ঘণ্টার ট্রেন জার্নি, অনুশীলন, ফের ওই লম্বা পথ পেরিয়ে আবার বাড়ি ফেরা। এই ক্রিকেট থেকে অনেক কিছু পেয়েছি। স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।’

অবসরের আগের দিন কী অনুভূতি হচ্ছে? যদি কেরিয়ারের সেরা মুহূর্ত বাছতে বলা হয়, কোনটা বাছবেন? ঝুলনের মতে, ‘আমার কাছে সেরা মুহূর্ত, যে দিন অধিনায়কের কাছ থেকে অভিষেক ক্যাপ পেয়েছিলাম। ম্যাচের প্রথম ওভার ছিল আমার আন্তর্জাতিক কেরিয়ারেরও প্রথম ওভার। আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত সেটাই। কেন না, ক্রিকেটের শুরু থেকেই দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখেছি। সে দিন সেটা পূরণ হয়েছিল এবং দীর্ঘ একটা সফরের শুরু হয়েছিল। ১৯৯৭ সালে ইডেন গার্ডেন্সে প্রথম বার বল গার্ল হিসেবে মেয়েদের ক্রিকেট ম্যাচ (অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড) দেখেছিলাম। সে দিন ভেবেছিলাম, এক দিন আমিও দেশের হয়ে খেলব। জীবনে প্রচুর পরিশ্রম করেছি দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন পূরণের জন্য।’

আগামী বছর মেয়েদের আইপিএল শুরু হচ্ছে। ঝুলনকে কি খেলতে দেখা যেতে পারে? ‘এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি। বোর্ডের তরফেও সরকারিভাবে ঘোষণা হয়নি। তবে আমরা আশাবাদী, মেয়েদের আইপিএল শুরু হবে। সরকারি ঘোষণা হোক, তারপর সিদ্ধান্ত নেব,’ বলছেন ঝুলন।

ক্রিকেট কেরিয়ারে একটা অধ্যায় শেষ হচ্ছে। জাতীয় দলে পেস বোলিংয়ের পরবর্তী প্রজন্ম খুঁজে আনার বিষয়ে কি ঝুলন গোস্বামীকে কোনও ভূমিকায় দেখা যেতে পারে? ‘এত কিছু ভাবিনি। গত দু ম্যাচে যেমন পারফর্ম করেছি, এই সিরিজ ভালোভাবে শেষ করতে চাই। এই মুহূর্তে আমার কাছে কালকের ম্যাচটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর পর বিরতি নেব। একটা সময় আবেগটা নিয়ন্ত্রণে আসবে। তারপর ঠাণ্ডা মাথায় ভাবব আমার কী করা উচিত,’ বলছেন ঝুলন।

জীবনে কোনও আফসোস? কোন বিষয়টা সবচেয়ে বেশি মিস করবেন? হাসি ধরে রাখলেন। চাপা হতাশা ধরা পড়ল পরিষ্কার। বলছেন, ‘আফসোস বলতে, দুটো বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছি, একটাও অন্তত জিততে পারলে ভালো লাগত। দল, মেয়েদের ক্রিকেট, সকলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশ্বকাপের জন্য আমরা চার বছর ধরে প্রস্তুতি নিই। ট্রফি জিততে পারলে পরিশ্রম পূর্ণতা পায়। আমরা দুটো ওয়ান ডে বিশ্বকাপ ছাড়া, টি ২০ বিশ্বকাপও খেলেছি। তবে ট্রফি আসেনি। এই একটা আফসোস থাকবেই। আর অন্য প্রশ্নে আসি, ‘

ইংল্যান্ডের মাটিতেই কেন অবসরের সিদ্ধান্ত নিলেন। ইডেন গার্ডেন্সে কোনও ম্যাচ খেলে অবসর নিলে আরও ভাল হত না? ‘ গত বিশ্বকাপ থেকে প্রতিটা সিরিজ শেষ ভেবেই খেলেছি। তার আগেও অনেক সময় থামার কথা ভেবেছি। বিশেষত, চোটের সময় খুব খারাপ লাগতো মাঠের বাইরে থেকে ম্যাচ দেখতে। মনে হত, পেসারের বদলে ব্যাটার হলে হয়তো এত চোট পেতাম না, ম্যাচ মিস করতাম না। আর ইডেন প্রসঙ্গে বলি, আপাতত ঘরের মাঠে আমাদের শুধু টি ২০ রয়েছে। দল পরবর্তী টি ২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কেরিয়ার শুরু করেছিলাম, তাদের বিরুদ্ধেই শেষ করছি। লর্ডস প্রতিটা ক্রিকেটারের কাছে স্বপ্নের জায়গা। আমি খুশি। কোনও আফশোস নেই।’ যদিও ইডেন প্রসঙ্গে কথা বলার সময় গলা ধরে আসছিল ঝুলনের।

এই দীর্ঘ কেরিয়ারে আপনার কাছে সবচেয়ে গর্বের মুহূর্ত কোনটা। কী বেশি মিস করবেন? নাকি একটু স্বস্তি হবে, আর ট্রেনিং এসব করতে হবে না…। ঝুলন বলছেন, ‘আমার কাছে সেরা মুহূর্ত, ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে, দেশের জার্সিতে মাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া। এই মুহূর্তটা সারা জীবন মিস করব। তবে এটাই জীবন। একটা সময় থামতেই হয়।’