Ravi Shastri MS Dhoni: আপনি যেই হোন…চোখ লাল করে ধোনিকে ভর্ৎসনা ক্ষিপ্ত শাস্ত্রীর
ঘটনাটি ২০১৮ সালের ভারতীয় দলের ইংল্যান্ড সফরের সময়কার। একসময়ে রান তাড়ায় পটু মহেন্দ্র সিং ধোনি তখন কেরিয়ারের শেষ লগ্নে। লক্ষ্য ছিল ৩২৩ রান। অথচ মাত্র দুটো বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শম্বুক গতিতে ৫৯ বলে ৩৭ রান করেন ধোনি।
কলকাতা: রীতিমতো বোমা ফাটাচ্ছেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধর। তাঁর বই ‘Coaching Beyond: My Days with the Indian Cricket Team’-এ ২০১৮ সালের একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন শ্রীধর। যেদিন তৎকালীন কোচ রবি শাস্ত্রী প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনির উপর। এমনিতে শাস্ত্রী (Ravi Shastri) ও ধোনির সম্পর্ক খুবই ভালো। সেই শাস্ত্রী হঠাৎ প্রিয় এমএসের উপর কেন ক্ষেপে গিয়েছিলেন? শ্রীধর বলেছেন, একসময় রান তাড়া করায় দক্ষ ধোনি তখন কেরিয়ারের শেষ লগ্নে। ব্যাটের ধার কমে এসেছে। কিন্তু তাঁর মতো বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের (MS Dhoni) ব্যাটিংয়ে জেতার তাগিদ দেখতে না পাওয়ায় ভীষণ ক্ষিপ্ত হন শাস্ত্রী। টিম মিটিংয়ে ধোনির চোখে চোখ রেখে সাফ বলে দিয়েছিলেন, “জেতার চেষ্টা না করেই ম্যাচ হেরে বসার মানসিকতা এখানে চলবে না। তাতে আপনি যেই হোন। এমনটা দ্বিতীয়বার হলে আমার অধীনে সেটাই হবে তাঁর শেষ ম্যাচ।” বিস্তারিত TV9 Bangla-র এই প্রতিবেদনে।
শ্রীধর শুনিয়েছেন ২০১৮ সালের কথা। ভারতীয় দল তখন ইংল্যান্ড সফরে গিয়েছে। জো রুটের শতরানে ভর করে লর্ডসে ভারতকে ৩২৩ রানের বড়সড় লক্ষ্য দেয় ইংরেজরা। প্রবল চাপে থাকা ভারত রান তাড়া করতে নেমে দ্রুত তিন উইকেট হারায়। একটা সময় স্কোর ছিল ৬০-৩। ক্রিজে তৎকালীন অধিনায়ক বিরাট কোহলির সঙ্গে ক্রিজে ছিলেন সুরেশ রায়না। দুইয়ে মিলে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন। ৮০ রানের পার্টনারশিপ গড়ার পর কোহলিও প্যাভিলিয়নে ফেরেন। কিছুক্ষণের মধ্যে রায়নাও ফেরেন। পরের ১০ ওভারে এমএস ধোনিকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য বোলাররা ছাড়া কেউ ছিলেন না। আস্কিং রেট প্রতি ওভারে ১৩-র কাছাকাছি। অথচ ছয় ওভারে টেনেটুনে ওঠে ২০ রান। ওই ম্যাচে কেরিয়ারের ১০ হাজার ওডিআই রানের মাইলস্টোন গড়ার সম্ভাবনা ছিল ধোনির সামনে। ভারতীয় দলের সদস্যরা ওই মুহূর্তটার অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু একইসঙ্গে দলের প্রশ্ন ছিল, “কেন জেতার চেষ্টা করছেন না ধোনি?” রানরেট যাই থাকুক, মাত্র দুটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৫৯ বলে ৩৭ রান করেন ধোনি। ম্যাচটি ৮৬ রানের বড় ব্যবধানে হারে ভারত।
পরাজয়ের পরে ড্রেসিংরুমের আবহাওয়া বর্ণনা করেছেন শ্রীধর। তৎকালীন ফিল্ডিং কোচ বলেছেন, “হেড কোচ রবি শাস্ত্রী ক্ষোভে ফুঁসছিলেন। ৮৬ রানে ম্যাচ হেরে যাওয়ার জন্য নয়, বরং যেভাবে লড়াই না করেই দল হেরেছে তা নিয়ে। প্রতিপক্ষকে আমরা কামড় দেওয়ার চেষ্টাও করিনি। দলের এই মানসিকতা হজম করতে পারছিলেন না হেড কোচ। তিনি মোটেও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র ছিলেন না।”
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ ছিল হেডিংলিতে। ম্যাচের আগের দিন টিম মিটিংয়ে পুরো স্কোয়াড উপস্থিত ছিল। সাপোর্ট স্টাফরাও উপস্থিত ছিলেন। সবার সামনে বসেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। যতটা সম্ভব উঁচু স্বরে এবং রাগী গলায় শাস্ত্রী বলতে শুরু করেন, “আপনি যেই হন না কেন, জেতার চেষ্টা না করেই হেরে যাওয়া এখানে চলবে না। আমার অধীনে এমনটা হতে দেব না। দ্বিতীয়বার কেউ এমনটা করলে আমার অধীনে সেটাই হবে তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ারের শেষ ম্যাচ। ক্রিকেটে একটা ম্যাচ হেরে যাওয়া লজ্জার নয়। কিন্তু জেতার চেষ্টা না করে হেরে যাওয়াটা অবশ্যই লজ্জার।”
শ্রীধর লিখেছেন, “ধোনি একেবারে সামনে বসেছিলেন। রবি যেহেতু ধোনিকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলছিলেন তাই তাঁর দিকেই ছিল চোখ। কথাগুলো তাঁকে লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে এটা জেনেও প্রাক্তন অধিনায়কও একবারের জন্যও চোখ নামাননি। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখেননি। একবারের জন্য কোচের চোখ থেকে চোখ ফেরাননি।” কারণ ধোনি জানতেন, এই ভর্ৎসনা তাঁর প্রাপ্য ছিল। বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের হাজারটা ভালো গুণের মধ্যে আরও একটি গুণ।