Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Recruitment Case: এমনও হয়! আজ জামাইয়ের চাকরি যেতে কাঁদছে শ্বশুর, মুচকি হাসছে অন্য আর এক ব্যর্থ প্রেমিক

Recruitment Case: বিয়ের দুনিয়ায় বর্তমানে সরকারি চাকরির দর যে আকাশ ছোঁয়া, তা বিনা তর্কেই স্বীকার করে নেন সকলে। তবে এ ক্ষেত্রে আবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাত্রীর বদলে পাত্রের সরকারি চাকরি তাঁর বিয়ের সিভিতে বাড়তি অক্সিজেন জোগায়।

Recruitment Case: এমনও হয়! আজ জামাইয়ের চাকরি যেতে কাঁদছে শ্বশুর, মুচকি হাসছে অন্য আর এক ব্যর্থ প্রেমিক
নানা মহল থেকে উঠে আসছে নানা মত Image Credit source: TV 9 Bangla GFX
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 04, 2025 | 2:27 PM

মহাদেব কুণ্ডু ও জয়দীপ দাস 

কলকাতা ও নদিয়া: জামাই ব্রাহ্মণ নয়, তাই মেয়ের পছন্দ করা ছেলেকে অপছন্দ ছিল শান্তিপুরের ‘চ্যাটার্জি পরিবারের’। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হবু জামাইয়ের সরকারি চাকরির ভারেই কিছুটা হলেও পর্দা পড়েছিল জাত-পাতের বেড়াজালে। না না করেও শেষ পর্যন্ত মেয়ের বিয়েতে নিমরাজি হয়ে যান শান্তিপুরের শিবু চট্টোপাধ্য়ায়। বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে বিয়েটাও হয়ে যায় কিছুদিনের মধ্যে। জামাই ‘সরকারি মাস্টার’ বলে কথা! নিচু জাত হলেও বিয়ে না হয়ে আর কোথায় যায়! বিয়ের মণ্ডপে কব্জি-ডুবিয়ে খেতে খেতেও ফিসফাস শোনা গিয়েছিল চ্যাটার্জি পাড়ায়। সেই ফিসফাস বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এক্কেবারে অন্য রূপ নিয়ে নিল। সকালে খবরের চ্যানেল খুলতেই চোখ কপালে উঠে যায় শিবু বাবুর। জানতে পারলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির কলমের এক খোঁচাতেই চাকরি চলে গিয়েছে জামাইয়ের। 

শিবু বাবুর জামাই এতদিন কাজ করছিলেন শিলিগুড়ির এক স্কুলে। কিন্তু তা আর রইল না! নাম উঠেছে ২৬ হাজারের বাতিল খাতায়। বৃহস্পতিবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের রায় শোনার পর থেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন শিবু। সারাক্ষণ বলে চলছেন মেয়ে জামাইয়ের কথা। শ্বশুরের দাবি, তাঁর জামাই অত্যন্ত সৎ, মেধাবীও। তিনি কোনও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন না বলেই দাবি শিবুর। ক্যামেরার সামনে পৈতে দেখাতে দেখাতেই বারবার বলছেন, ‘ব্রাহ্মণ নয় বলে ওই পাত্রের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে আপত্তি ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও শুধুমাত্র পাত্র সরকারি চাকরি করে বলে রাজি হয়েছিলাম কিন্তু সেই চাকরিও আর রইল না!’ এ তো গেল প্রথম দৃশ্য! তবে শিবুর মতো আক্ষেপ করছেন বাংলার অনেক শ্বশুর-জামাইও। সোশ্যাল মিডিয়া হোক বা পাড়ার চায়ের দোকান, একটু কান খাঁড়া করলেই শোনা যাচ্ছে কত শত গল্প। কলকাতার সাংবাদিক মহলে কান পাতলেও এমন এক খবর শোনা যাচ্ছে যা শুনলে হতবাক হয়ে যাবেন আপনিও। 

“ভাই সরকারি চাকরি ছিল না বলে আমারও বিয়েটা তখন হয়নি”

বিয়ের দুনিয়ায় বর্তমানে সরকারি চাকরির দর যে আকাশ ছোঁয়া, তা বিনা তর্কেই স্বীকার করে নেন সকলে। তবে এ ক্ষেত্রে আবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাত্রীর বদলে পাত্রের সরকারি চাকরি তাঁর বিয়ের সিভিতে বাড়তি অক্সিজেন জোগায়। সংবাদপত্রে পাত্র-পাত্রীর খোঁজে ‘ক্লাসিফায়েড অ্যাড’ গুলি দেখলেও ছবিটা এক্কেবারে জলের মতো সহজ হয়ে যায়। অন্যদিকে চাকরির বাজারে সাংবাদিকদের চাহিদা যে এক্কেবারে তলানিতে তা বলাই বাহুল্য। আজই তো ক্যান্টিনে এক সাংবাদিক বন্ধু মজা করে বলছিল, ‘শোন না ভাই আমাদের চড়া প্রশ্নে তাবড় তাবড় রাজনীতিক থেকে খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বরা কুপোকাত হলেও অত প্রশ্ন ভাল লাগে না বদরাগী শ্বশুরদের। ওদের নজর খালি পকেটে। আর ওটা তো আমাদের খালি!’ এ নিয়ে খোরাক করতে করতেই আচমকা নিজের হারিয়ে যাওয়া প্রেমের কথাও বলে ফেলল। সুপ্রিম কোর্টের খবর নিয়ে আলোচনার মধ্যেই মনে খানিক বিষাদ নিয়েই সেই বন্ধু বলল, “ভাই সরকারি চাকরি ছিল না বলে আমারও বিয়েটা তখন হয়নি। মানে দিতে চায়নি আমার এক্সের বাবা।” দুঃখের খবর দিলেও তখনও কিন্তু তাঁর আসল খবর দেওয়া বাকি। মানে সংবাদের পরিভাষায় ‘সুপ্রিম ব্রেকিংয়ের’ পর ‘ব্রেকআপ ব্রেকিংটা’ তখনও বাকি। বিষাদের মেঘ কেটে বন্ধুর মুখে তখন শুধুই মুচকি হাসি। ক্যান্টিনে বাড়ছে কৌতূহল!

এখনও সরকারি চাকরি করেন না ওই বন্ধু। তবে সাংবাদিক হিসাবে বেশ নাম-ডাক করেছেন। হারানো প্রেম নিয়ে মনে মনে খানিক আক্ষেপ থাকলেও হতে হতেও না হওয়া ‘হবু শ্বশুরের’ কথা উঠতেই আজ খানিক হেসেই ফেলল বন্ধু। হাসছে কেন জিজ্ঞেস করতেই বলল, “শোন ভাই, আমার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এক মাস্টারের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিল ওর বাবা। আজ শুনলাম সেই জামাইয়ের চাকরি চলে গিয়েছে।” তবে যোগ্য-অযোগ্য নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে ২৬ হাজার চাকরি বাতিলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা দেশে। তবে ওই জামাই ‘যোগ্য’ না ‘অযোগ্য’ সেই প্রশ্নের উত্তর নেই বন্ধুর কাছেও।  

কী বলছে সুপ্রিম কোর্ট? 

প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্ট বলছে ২৫ হাজার ৭৫২ জনের মধ্যে প্রায় ৬ হাজারের মতো শিক্ষক যাঁরা দুর্নীতি করেছেন বলে ‘চিহ্নিত’ হয়ে গিয়েছেন, তাঁরা আর চাকরি পাবেন না। এসসিসি-র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সংখ্যাটা ৫ হাজার ৪৮৫ জন। ২০১৬ থেকে তাঁরা যে বেতন পাচ্ছেন সেই টাকা তো বটেই তার উপর ১২ শতাংশ হারে টাকা ফেরত দিতে হবে তাঁদের। তিন মাসের মধ্যে নতুন করে ২৬ হাজার শূন্যপদে নিয়োগের নির্দেশও দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে তাতে শুধু অংশ নিতে পারবেন ২০১৬-র চাকরিপ্রার্থীরাই। এখানেও বাদ চিহ্নিত জালিয়াত ‘চাকরি’ প্রাপকরা।