Vasoo Paranjape: প্রয়াত ভারতীয় ক্রিকেটের ‘জহুরি’ বাসু পরাঞ্জপে

এখনকার প্রজন্মের চেনার কথা নয় বাসু পরাঞ্জপেকে। ভারতীয় দলে খেলা। ২২ গজে পারফরম্যান্স। এইগুলো যদি একজন ক্রিকেটারের মনে রাখার মত মাপকাঠি হয়, তবে তার ধারেকাছেও নেই বাসু পরাঞ্জপে

Vasoo Paranjape: প্রয়াত ভারতীয় ক্রিকেটের 'জহুরি' বাসু পরাঞ্জপে
প্রয়াত বাসু পরাঞ্জপে
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 30, 2021 | 5:18 PM

মুম্বইঃ ১৯৮৯ সাল। মুম্বইয়ে পাকিস্তান সফরের দল নির্বাচন চলছে। একটা নাম নিয়েই জল্পনা। সচিন তেন্ডুলকর। ১৬ বছরের সচিনকে পাকিস্তানের মত কঠিন সফরে দলে রাখা হবে কিনা, সেই নিয়ে জল্পনা চরমে। সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছেনা। তৎকালীন নির্বাচন কমিটির প্রধান ছিলেন রাজ সিং দুঙ্গারপুর। জানতেন, এই জল্পনা শেষ করতে পারেন একজনই। বাসু পরাঞ্জপে। ইমরানের দেশে কি সচিনকে নিয়ে যাওয়া উচিত হবে? দুঙ্গারপুরের প্রশ্নে পরাঞ্জপে জানিয়েছিলেন, “ইয়ে লাগনেওয়ালা প্লেয়ার নেহি,লাগানেওয়ালা প্লেয়ার হ্যাঁয়।” দ্বিতীয়বার ভাবেননি দুঙ্গারপুর। বাকিটা ইতিহাস।

সচিনের ভারতীয় দলে অভিষেক হওয়া নিয়ে যতটা কৃতিত্ব রাজ সিংহ দুঙ্গারপুরের। তার থেকে কোনও অংশে কৃতিত্ব কম নয় বাসু পরাঞ্জপের। কোনওদিন ভারতীয় দলের হয়ে মাঠে নামা হয়নি। তবে মুম্বই তথা ভারতীয় ক্রিকেটে বাসু পরাঞ্জপের অবদান কে অস্বীকার করবেন। সোমবার ৮২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বাসু পরাঞ্জপে। ভারতীয় ক্রিকেটে শোকের ছায়া।

এখনকার প্রজন্মের চেনার কথা নয় বাসু পরাঞ্জপেকে। ভারতীয় দলে খেলা। ২২ গজে পারফরম্যান্স। এইগুলো যদি একজন ক্রিকেটারের মনে রাখার মত মাপকাঠি হয়, তবে তার ধারেকাছেও নেই বাসু পরাঞ্জপে। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের নেপথ্য নায়কদের নিয়ে যদি উপন্যাস লেখা হয়, তবে প্রথম ৫ অধ্যায়ের মধ্যে একটি অধ্যায় অবশ্যই হবে বাসু পরাঞ্জপেকে নিয়ে লেখা।

মুম্বইয়ের দাদার ইউনিয়ন ক্লাব। মারাঠি ক্রিকেটের অন্যতম ক্ষেত্র বললেও অত্যুক্তি হয়না। আজীবন সেই দাদার ইউনিয়ন ক্লাবের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বাসু। মুম্বইয়ের ময়দানকে চিনতেন হাতের তালুর মত। শিবাজি পার্ক হোক বা অন্য় কোন মাঠে মুম্বই ক্রিকেটের নতুন কোনও প্রতিভা এসেছে, আর সেটা জানেননা বাসু পরাঞ্জপে-না তা কোনওদিন হয়নি।

কলকাতার ময়দান যেমন পিকে-অমল দত্তদের মনে করে কোচিং গুরু, মুম্বই ক্রিকেটের ময়দানে তেমনি বাসু পরাঞ্জপে। কত ক্রিকেটার যে বাসু পরাঞ্জপের হাত ধরে উঠে এসেছেন ইয়ত্তা নেই। কোচ হোন বা মেন্টর বাসু পরাঞ্জপের একটা গুণ কোনওদিন ভুলবেনা মুম্বই ক্রিকেট। প্রথম একাদশে সুযোগ পাওয়া ক্রিকেটার হোন বা রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকা ক্রিকেটার হোন, বাসুর আবেদন দুজনের কাছে সমান। এক একটা টিপস বদলে দিয়েছে বহু ক্রিকেটারের জীবনটাই।

যেমন ভারতের প্রাক্তন স্পিনার নরেন্দ্র হিরওয়ানি। হিরওয়ানিকে দেখেই বাসু পরাঞ্জপের টিপস , “হিরু তুমি ফুলস্লিভ জামা পরে বল কর। সুভাষ গুপ্তের যেমন করতেন।” ফল, অভিষেক টেস্টেই ১৬টি উইকেট নরেন্দ্র হিরওয়ানির। ফুলস্লিভ জামা পরে বোলিং কেন? যাতে কোনও স্পিনারের গুগলির সময় হাতের মুভমেন্ট দেখতে না পারেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যান। তাই বাসুর টিপস ছিল এরকমই।

সুনীল গাভাসকার থেকে সচিন তেন্ডুলকর, দিলীপ বেঙ্গসরকরদের মত মুম্বইকররা শুধু নন। রাহুল দ্রাবিড়, অনিল কুম্বলের মত ভিনরাজ্যের তারকারাও বাসু পরাঞ্জপের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবেন সারাজীবন। যেমন রাহুল দ্রাবিড়। মাত্র ১৪ বছর বয়স তখন।অনূর্ধ্ব ১৭ ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন। তবে ব্যাটসম্যান হিসেবে নয়। দলের দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে। সেবার তাঁকে বাসু পরাঞ্জপে পরামর্শ দেন, “তুমি একদিন ভারতীয় দলে খেলবে। তবে উইকেটকিপার হিসেবে নয়।” বাসু স্যার বলেন কি? তিনি তো পরিচিত উইকেটকিপার হিসেবেই। গোটা ভারত দেখল, কতটা সঠিক ছিলেন বাসু পরাঞ্জপে।

শুধু পরামর্শ দিয়েই ক্রিকেটারদের জীবন বদলে দিতেন বাসু, এমন নয়। তাঁর নামকরণ ইতিহাস তৈরি করেছে। সুনীল মনোহর গাভাসকারকে সানি নাম দিয়েছিলেন বাসুই। সেই নামও তো ইতিহাস। নিজের আত্মজীবনীর নাম সুনীল গাভাসকার দিয়েছেন, ‘দ্য সানি ডেস’।

৮৮ বছর বয়সে বাসু পরাঞ্জপের প্রয়াণে শোকাহত মুম্বই ক্রিকেট। রমাকান্ত আচরেকরের পর আরও এক গুরুর প্রয়াণ যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা মুম্বই ক্রিকেট। হার না মানা মনোভাবের জন্য মুম্বই ক্রিকেটারদের বলা হয় , ‘খাড়ুশ’। আর সেই মানসিকতা তো তৈরি করেছিলেন এই আচরেকর, পরাঞ্জপেরা।

বাসু রেখে গেলেন তাঁর পুত্র প্রাক্তন ক্রিকেটার যতীন পরাঞ্জপেকে। আর রেখে গেলেন ঘরোয়া ক্রিকেটের ২৯টি ম্যাচে ৯ টি উইকেট ও ৭৮৫ রানের রেকর্ড। যার মধ্যে রয়েছে ২টি সেঞ্চুরি। যেই রেকর্ড অবশ্য বাসুর আসল পরিচয় কখনই নয়।