সচিন তেন্ডুলকরের ১০০ সেঞ্চুরির রেকর্ড কেন ভাঙতে পারবেন বিরাট কোহলি?

কোহলির ব্যাটে ৬৭৮ দিন টেস্ট সেঞ্চুরির খরা চলছে। কিন্তু তাঁকে নিয়ে প্রত্যাশা কমছে না। কারণ তিনি যে তিরিশের 'টপ পিকিং এজ'এর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। ক্রিকেটের ক্ষেত্রে বলা হয় ৩০ একটা "ল্যান্ডমার্ক এজ"। কারণ, তিরিশ পার করা ক্রিকেটার অভিজ্ঞতার প্রাচুর্যে ভরে ওঠেন।

সচিন তেন্ডুলকরের ১০০ সেঞ্চুরির রেকর্ড কেন ভাঙতে পারবেন বিরাট কোহলি?
সচিন তেন্ডুলকরের ১০০ সেঞ্চুরির রেকর্ড কেন ভাঙতে পারবেন বিরাট কোহলি?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 04, 2021 | 7:00 PM

কলকাতা: বিরাট কোহলি (Virat Kohli) মানেই হল রেকর্ডের ঝাঁপি। এই দুটো কথা এক করে দিয়েছেন ভিকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ার পর থেকেই একের পর রেকর্ড ভেঙে চলেছেন তিনি। কোহলির ব্যাটে ৬৭৮ দিন টেস্ট সেঞ্চুরির খরা চলছে। কিন্তু তাঁকে নিয়ে প্রত্যাশা কমছে না। কারণ তিনি যে তিরিশের ‘টপ পিকিং এজ’এর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। ক্রিকেটের ক্ষেত্রে বলা হয় ৩০ একটা “ল্যান্ডমার্ক এজ”। কারণ, তিরিশ পার করা ক্রিকেটার অভিজ্ঞতার প্রাচুর্যে ভরে ওঠেন। আর যখন তা হয়, তখন তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি প্রত্যাশা করা হয়। বিরাট কোহলির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞমহল তেমনই বলছে। তিরিশ পার করা বিরাট তো সচিনের একশোটা সেঞ্চুরির রেকর্ড তো ভাঙবেনই। হয়তো তার সঙ্গে আরও কিছু মাইলস্টোন তৈরি করে রেখে যাবেন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য।

বিরাট তিরিশ বছর বয়সের আগে ২১৬টি ওয়ান ডে ম্যাচে খেলেছেন। তিরিশের পর ৩৮টি ওয়ান ডে ম্যাচে খেলেছেন। সেখানে তিরিশের আগে ভিকের সেঞ্চুরির সংখ্যা-৩৮, তিরিশের পর সেঞ্চুরির সংখ্যা- ৫। তিরিশের আগে কোহলি ৭৩টি টেস্টে খেলেছেন। তিরিশের পর তিনি খেলেছেন ২৩টি টেস্ট ম্যাচ। লাল বলের ক্রিকেটে তিরিশের আগে তাঁর সেঞ্চুরি ২৪টি। তিরিশের পর বিরাটের টেস্ট সেঞ্চুরি এসেছে ৩টি। তবে তিনি যদি আরও পাঁচ বছর নিয়মিত খেলা চালিয়ে যান, আর নিজের পুরনো ফর্ম ফিরে পান তা হলে তিনি অনায়াসেই সচিনের ১০০ সেঞ্চুরির রেকর্ড ছাপিয়ে যাবেন। এমনই শোনা যাচ্ছে বিশেষজ্ঞমহল থেকে।

ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজের ওভাল টেস্টে বিরাট আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৩ হাজার রানের নজিরও গড়েছেন। তিনিই এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্রুততম ২৩ হাজার রান সংগ্রহকারী। সেই সঙ্গে তিনি ছাপিয়ে গিয়েছেন ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার সচিন তেন্ডুলকরকেও। সচিনের ২৩ হাজার আন্তর্জাতিক রান করতে লেগেছিল ৫২২ ইনিংস। বিরাটের সেই মাইলফলকে পৌঁছতে লেগেছে ৪৯০ ইনিংস।

এক নজরে দেখুন দ্রুততম ২৩ হাজার আন্তর্জাতিক রান সংগ্রহকারী পাঁচ ক্রিকেটার-

বিরাট কোহলি- ৪৯০ সচিন তেন্ডুলকর- ৫২২ রিকি পন্টিং- ৫৪৪ জ্যাক কালিস- ৫৫১ কুমার সঙ্গকারা- ৫৬৮

বিশ্ব ক্রিকেটে তিরিশের পর তুখোড় পারফরম্যান্স দিয়ে রীতিমতো আলোড়ন তুলে দিয়েছেন যে ক্রিকেটাররা, সেই তালিকায় নিশ্চিতভাবে প্রথমেই রয়েছেন সচিন তেন্ডুলকর। তারপরেই পরেই রয়েছেন কুমার সঙ্গকারা, ব্রায়ান লারা, রিকি পন্টিং ও মাহেলা জয়বর্ধনের মতো কিংবদন্তিরা। এরা প্রত্যেকেই তিরিশের পরে অনেক বেশি ফুটে উঠেছেন। বয়স যে শুধু মাত্র একটা সংখ্যা, তা প্রমাণ করে দিয়েছেন এই কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা।

১. সচিন তেন্ডুলকর-

তিরিশের পর একটা সময় মাস্টার ব্লাস্টার নিজেও যেন বুঝতে পারতেন তাঁকে কোন ম্যাচে নিজেকেও ছাপিয়ে যেতে হবে। তিরিশের আগে সচিন (Sachin Tendulkar) ৩১৪টি ওয়ান ডে ম্যাচে খেলেছিলেন, তাতে সেঞ্চুরি এসেছিল ৩৪টি। তিরিশের পর তিনি ১৪৯টি ওয়ান ডে ম্যাচে খেলেন। সেখানে মাস্টার ব্লাস্টারের সেঞ্চুরি এসেছে ১৫টি। সচিন তিরিশের আগে ১০৫টি টেস্টে খেলেছিলেন। তাতে তাঁর সেঞ্চুরির সংখ্যা ৩১টি। তিরিশের পর তিনি ৯৫টি টেস্টে খেলেছিলেন, সেখানে সচিনের সেঞ্চুরি এসেছে ২০টি।

২. কুমার সঙ্গকারা-

তিরিশ বছর বয়সের আগে কুমার সঙ্গকারা (Kumar Sangakkara) খেলেছিলেন ২০৮টি ওয়ান ডে ম্যাচ। তিরিশের পর খেলেছেন ১৯৬টি ওয়ান ডে ম্যাচ। তিরিশের আগে সঙ্গকারার ওয়ান ডে সেঞ্চুরি ১৪টি। তিরিশের পর তাঁর ওয়ান ডে সেঞ্চুরি ২৪টি। তিরিশের আগে সঙ্গকারা ৬৭টি টেস্ট ম্যাচে খেলেছিলেন, সেখানে তাঁর সেঞ্চুরির সংখ্যা ১৪টি। তিরিশের পর তিনি ৬৭টি টেস্টে খেলেন। সেখানে তাঁর সেঞ্চুরি এসেছিল ২৪টি।

৩. ব্রায়ান লারা-

তিরিশের আগে লারা (Brian Lara) ১৪১টি ওয়ান ডে ম্যাচে ১২টি সেঞ্চুরি করেছিলেন। তিরিশের পর ১৫৮টি ওয়ান ডে ম্যাচে ৭টি সেঞ্চুরি করেছিলেন। তিরিশের আগে তিনি ৬৩টি টেস্ট ম্যাচে খেলে ১৩টি সেঞ্চুরি করেছিলেন। তিরিশ বছরের পর তিনি ৬৮টি টেস্ট ম্যাচে ২১টি সেঞ্চুরি করেছিলেন।

৪. রিকি পন্টিং-

কেরিয়ার জুড়ে পন্টিং (Ricky Ponting) নিজের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিলেন। টেস্ট-ওয়ান ডে দুই ফর্ম্যাটেই তিনি দুরন্ত ফর্মে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতেন।

৫. মাহেলা জয়বর্ধনে-

তিরিশের আগে জয়বর্ধনে (Mahela Jayawardene) ২৫০টি ওয়ান ডে ম্যাচে ৯টি সেঞ্চুরি করেছিলেন। তিরিশের পর তিনি ১৯৮টি একদিনের ম্যাচে ১০টি সেঞ্চুরি করেন। তিরিশের আগে তিনি ৮৫টি টেস্টে খেলে ১৬টি সেঞ্চুরি করেন। তিরিশ বছর বয়সের পর তিনি ৬৪টি টেস্টে ১৮টি সেঞ্চুরি করেন।

তিরিশের পর শারীরিক সক্ষমতা, মানসিকতা, আগ্রাসন, তাগিদ, ইচ্ছে এই সবই একজন ক্রিকেটারের মধ্যে জন্ম নেয়। এবং, তিরিশের গণ্ডি পেরোলেই এগুলোকে আরও পালিশ করে দেয় একজন ক্রিকেটারের অভিজ্ঞতা। এটা নয় যে, তিরিশের পরই হঠাৎ এই গুণগুলো ক্রিকেটারদের মধ্যে জন্মায়। এই সব গুণ একটা ক্রিকেটারের মধ্যে তিরিশের আগেও থাকে। কিন্তু অভিজ্ঞতা কম হওয়ায় এই জায়গাগুলোতেই গিয়ে ধাক্কা খান ক্রিকেটাররা। এই ধরণের ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তিরিশের পর থেকে তাঁরা জ্বলে উঠছেন। যে কারণে বলা হয়, ৩০-৩৬ বছর বয়স এই সময়টা হচ্ছে সাফল্যের চূড়া ছাপিয়ে যাওয়ার সব থেকে সেরা সময়। এটাই বিরাটের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে তাঁর বয়স এখন ৩২।

ঘটনাচক্রে গত ২ বছর ধরে বিরাট ফর্মে নেই। কোনও ক্রিকেটার যখন ফর্মে থাকেন তখন অনেক বেশি রান করেন, উইকেট নেন। সাফল্য তাঁর ভুলত্রুটি মুছে দেয়। কিন্তু যখন সেই ক্রিকেটার ফর্মে থাকেন না, তাঁকে অনেক বেশি চাপ সামলাতে হয়। ওই চাপই অভিজ্ঞ করে তোলে তাঁকে। ওই অভিজ্ঞতাই তাঁকে আবার সাফল্যে ফেরায়। আর যখন সেটা হয় ওই ক্রিকেটার আবার বিধ্বংসী ফর্মে ফেরেন।