T20 World Cup 2022: অবিশ্বাস্য ম্যাচ জিতিয়ে কিং কোহলি থেকে বিরাট এখন কামব্যাক কিং!
কার্যত অসম্ভব একটা ম্যাচ জিতিয়ে দিয়ে গেলেন বিরাট। গত বছর অক্টোবরে আমিরশাহিতে এই পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটা হেরে গিয়েছিল ভারত। তখন থেকেই কাঁটার মুকুট পরা শুরু বিরাটের।
অভিষেক সেনগুপ্ত
কী ভাবে ব্যাখ্যা করব, আমার কাছে শব্দ নেই!
শব্দহীন অভিব্যক্তি অনেক সময় শব্দব্রহ্মের জন্ম দেয়। মেলবোর্নের বোধহয় মনে পড়ে গেল! এমসিজি অনেক ম্যাচ দেখেছে। বাইস গজ, সাইডস্ক্রিন, গ্যালারি বিস্মিত হয়েছে এর আগেও। আরও একবার হল। অবিশ্বাস্য ম্যাচ জয় দেখে! বোধহয় স্বস্তির নিঃশ্বাসও ফেলল এমসিজি। যে প্যাকেজ এখন ক্রিকেটের সেরা আকর্ষণ, সেই তিনিই গত তিনটে বছর হারিয়ে গিয়েছিলেন যেন! সেঞ্চুরি মিলছিল না। ভিতরে ঢুকে আসা বলে বারবার আউট হয়ে যাচ্ছিলেন। রানের খরা যেন ক্রমশ গ্রাস করছিল তাঁকে। সেই তিনিই ফিরে এলেন প্রবল ভাবে। ক্রিকেট ভক্তরা এতদিন আদর করে ‘রান মেশিন’ বলে ডাকতেন। রবিবারের মেলবোর্ন থেকে বিরাট কোহলির (Virat Kohli) নতুন নাম হয়ে গেল— কামব্যাক কিং!
কার্যত অসম্ভব একটা ম্যাচ জিতিয়ে দিয়ে গেলেন বিরাট। গত বছর অক্টোবরে আমিরশাহিতে এই পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটা হেরে গিয়েছিল ভারত। তখন থেকেই কাঁটার মুকুট পরা শুরু বিরাটের। ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা দেখে কেউ কেউ বলেছেন, রঞ্জি খেলা উচিত বিরাটের। কেউ কেউ একধাপ এগিয়ে বলেছেন, এ বার সময় এসেছে, নতুন প্রজন্মকে জায়গা করে দিন। আর একটা পাকিস্তান ম্য়াচে বিরাট দেখিয়ে দিয়ে গেলেন, ফর্ম ইজ় টেম্পোরারি, ক্লাস ইজ় পার্মানেন্ট!
যখন ব্যাট করতে এসেছিলেন, স্কোর বোর্ডে ৭-১। লোকেশ রাহুল ফিরে গিয়েছেন। কিছুক্ষণ পরেই ফিরে গেলেন ক্যাপ্টেন রোহিত শর্মা, সূর্যকুমার যাদব, অক্ষর প্যাটেল। সেখান থেকেই খেলা পাল্টে দিলেন হার্দিক পান্ডিয়াকে সঙ্গে নিয়ে। ৫৩ বলে নট আউট ৮২ করে গেলেন। হ্যারিস রউফকে অবলীলায় ছয় মারলেন। যে শাহিন শাহ আফ্রিদি আগের বিশ্বকাপে ভেঙেচুরে দিয়েছিলেন, তাঁকেও ফেললেন গ্য়ালারিতে। কী ভাবে পারলেন বিরাট? তাঁর কথায়, ‘এইরকম ম্যাচের জন্যই তো আমরা ক্রিকেটাররা সারা কেরিয়ারে অপেক্ষায় থাকি।’
আবেগের বিস্ফোরণ? বললে ভুল হবে না! বিরাট নিজেও হয়তো অপেক্ষায় ছিলেন এ ভাবে ফিরে আসার জন্য। আস্কিং রেট ক্রমশ বাড়ছে। পাকিস্তানি বোলাররা আঁটোসাঁটো বোলিং করছেন। ৩-৪-এর বেশি রানই তোলা যাচ্ছে না। ১০ ওভারের মাথায় মনে হয়েছিল, ভারত ম্যাচটা হেরেই যাবে। বিরাট নিজে কী ভেবেছিলেন? ‘পর পর উইকেট পড়তে দেখে আমিও ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। পরিস্থিতি তখন সত্যিই জটিল। হার্দিক ক্রিজে আসার পর ওকে বলেছিলাম, সিঙ্গলস চালু রাখ। পাকিস্তানকে পাল্টা চাপ দেওয়ার সময় ঠিক পাব।’
হ্যারিস রউফকে মাথার উপর দিয়ে মারা ছয়টা, শাহিন শাহ আফ্রিদিকে স্কোয়্যার লেগের উপর দিয়ে ছয়টা— ইনিংস জুড়ে ফিরে ফিরে আসছে এমন অনেক ম্যাচ ঘোরানো শট। বিরাট বলে গেলেন, ‘একটা জিনিস জানতাম, হ্যারিস রউফকে অ্যাটাক করলে ওরা ভয় পেয়ে যাবে। দুটো ছয় সে সময় দরকার ছিল। নিজেকে বলেছিলাম, শুধু বল দেখব। হ্যারিসকে ও ভাবেই ছয়টা মারি। কিন্তু সোজা ছয়টার মতো কানেকশন আমার কেরিয়ারে এর আগে এক-দু’বারই হয়েছে। শাহিনের স্লোয়ারে যখন প্রায় ছয় মেরে দিয়েছিলাম, তখনই মনে হয়েছিল ও চাপে আছে। ওকে পরের ছয়টা মারার জন্য তৈরি ছিলাম। সোজা অঙ্ক ছিল, হ্যারিস আর শাহিনকে টার্গেট করা। তা হলে ওরা ছন্দ হারিয়ে ফেলবে।’
বহুদিন পর সেই আবেগঘন বিরাটকে দেখা গেল। সেই আগ্রাসন, সেই সেলিব্রেশন, সেই হাসি। বিরাট বলে দিলেন, ‘আমি এত আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলাম কেন, বুঝতে পারিনি। ম্যাচটা জেতার পর যা যা করেছি, সেগুলো ফিরে দেখব সময় করে। মোহালির ইনিংসটাকে সেরা মনে হত এতদিন। কিন্তু পরিস্থিতি, বিশ্বকাপ, চাপ, সব মাথায় রেখে বলব এটাই আমার কেরিয়ারের সেরা ইনিংস।’
মেলবোর্নের গ্যালারি জুড়ে শুধুই তেরঙা তখন। দীপাবলীর ঠিক আগের দিনই যেন উপহার দিয়ে দিলেন দেশবাসীকে। ম্য়াচ জিতিয়ে উঠে বিরাট বলে দিলেন, ‘ম্যাচ কী ভাবে জিতলাম আমরা, বলতে পারব না। আমার কাছে প্রকাশ করার মতো শব্দ নেই। হার্দিক বারবার বলছিল, আমরা দু’জন থাকলে ম্যাচটা ঠিক জিতে যাব!’