Stephanie Frappart: একদিন কলকাতার মেয়েও বিশ্বকাপে রেফারিং করবে, শহর তুলে দিল দাবি!

Tollywood: পুরুষ পরিচালিত খেলা হিসেবে ফুটবল, ক্রিকেটের ট্যাগ ঘুচেছে বহু আগেই। এবার পুরুষ বিশ্বকাপেও গড়ল নতুন ইতিহাস। নারীঅধিকার নয় বরং সমানাধিকারের নজির হয়ে থাকল নিয়মে বাঁধা এই মরুদেশ। 'বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো' কি একেই বলে? প্রশ্ন উঠছেই...।

Stephanie Frappart: একদিন কলকাতার মেয়েও বিশ্বকাপে রেফারিং করবে, শহর তুলে দিল দাবি!
Image Credit source: OWN Photograph
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 03, 2022 | 7:34 PM

বিহঙ্গী বিশ্বাস

হাঁটুর উপর কালো শর্টস, চুল বাঁধা টানটান করে। ৯০ মিনিট ধরে কাতারের মাটিতে মাঠময় দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন তিনি। তীক্ষ্ণ তাঁর দৃষ্টি। অনুশাসনে কড়া। নিয়মের ভুলচুক হলে রেয়াত নেই। স্টেফানি ফ্রাপা— যাকে নিয়ে আলোচনা এখন সারা বিশ্বে। জার্মানি বনাম কোস্টারিকা ফুটবল ম্যাচে রেফারির দায়িত্ব পালন করে ইতিহাসে ঢুকে পড়েছেন ফরাসি স্টেফানি। এর আগে ফিফার ইতিহাসে কোনও মহিলা প্রধান রেফারি হিসেবে নিযুক্ত হননি। ২২জন পুরুষের গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে, মধ্যপ্রাচ্যের পোশাক সংক্রান্ত যাবতীয় বিধিনিষেধকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ফ্রাপা এখন আগুন-কন্যা। তাঁর যোগ্য সঙ্গত হিসেবে ছিলেন আরও দুই মহিলা রেফারি– ব্রাজিলের ক্যারেন দিয়াজ় এবং মেক্সিকোর নেওজ়া ব্যাক।

বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে থেকেই কড়া নিয়মবিধির কারণে বারবার নিন্দার মুখোমুখি হয়েছে কাতার। কখনও এলজিবিটিকিউ অর্থাৎ সমকামী সম্প্রদায়কে নিষিদ্ধ ঘোষণা আবার কখনও বা রাস্তাঘাটে কাঁধ ও হাঁটু ঢেকে রাখার মতো নিয়মবিধি কার্যকর করা হয়েছে সেখানে। হয়েছে পাল্টা প্রতিবাদ। হয়েছে সমালোচনা। তবু কাতার নমনীয় হয়নি। কিন্তু গতকাল ঘটে গিয়েছে সেই মিরাকেল, যা আদপে রক্ষণশীলতার গালে সপাটে চড়! যে মিরাকেল বার্তা দেয় সমানাধিকারের। তবে শুধু যে মধ্যপ্রাচ্যের মাটিতে ওই ৯০ মিনিটেই বিপ্লব ঘটেছে এমনটা তো নয়। বিশ্বের কোনায় কোনায় এ নিয়ে হচ্ছে আলোচনা।

টলিউডেও লেগেছে তার আঁচ। রাত জেগে খেলা দেখেন দিতিপ্রিয়া রায়। কালও দেখেছেন বিশ্বকাপের ম্যাচ। ফ্রাপা স্টেফানিকেও। আর যত দেখেছেন ততই যেন মুগ্ধ হয়েছেন দিতিপ্রিয়া। ফ্রাপাকে ছুটতে দেখে বিস্ময়-আবেগে চোখ ভিজেছে তাঁর। TV9 Bangla ফোন করতেই জেন ওয়াই নায়িকাও আবেগঘন। বললেন, “এটা ২০২২ সাল। এখানে ওই লিঙ্গের বিভেদ আর নেই। কাতারকে বুঝতে হবে এটা বিশ্বকাপ। এখানে তাদের আইন চলবে না। আর পাঁচটা দেশের মতামত নিয়েই সবটা হয়। আর ফিফাও যে এটা ভেবেছে, সে জন্যও খুব ভাল লাগছে। আজ প্রতিটি মেয়ের গর্ব করার দিন। আনন্দ করার দিন। পুরুষ বিদ্বেষ নয়, বরং সমানাধিকার উদযাপনের দিন।”

ফুটবল ভালবাসেন অপরাজিতা আঢ্য। কেরিয়ারের দীর্ঘ সময় কেটেছে। জীবনেরও অনেকটা সময় পার করে এসেছেন। তবে বিশ্বকাপে এমন দৃশ্য আগে দেখেননি। তাঁর কথায়, “শুধু মহিলাদের জয় তা তো নয়, এ তো সমাজেরও জয়। যে সমাজ আগে মহিলাদের নড়তে দিত না, দমিয়েও রাখত। সে সব কিন্তু অনেক শিথিল হচ্ছে। যে তিনজন নারীকে আমরা দেখেছি বিশ্বকাপের মাঠে, তাঁদের লড়াইও কি খুব সহজ ছিল? নিশ্চয়ই অনেক যুদ্ধ করে আদায় করতে হয়েছে অধিকার। পুরুষের তুলনায় একজন মহিলার স্ট্রাগল কিন্তু বেশি। আজকে আমার বরের উপর কিন্তু আমার শ্বশুরবাড়ির প্রত্যাশা নেই যে, সে বাড়ির কাজ করে বাইরে যাবে। কিন্তু আমার উপর রয়েছে। আর এ তো শুধু আমার আপনার কথা নয়, ওদেশেও মেয়েদের এই একই অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সেখানে কাতার-ইরানের নিষেধাজ্ঞা, সমাজের ট্যাবু ভাঙা এ তো বিরাট প্রাপ্তি।”

বয়স ৮০ ছুঁয়েছে তাঁর। ছোটবেলার ফুটবলের স্মৃতি আজ ঝাপসা। তবু ফোন করতেই সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় বললেন, “আমি এখন আর খেলা দেখি না। এবারও দেখছি না। তবে শুনেছি খবরটা। মেয়েরা কত এগিয়ে যাচ্ছে বলুন তো! চিরকাল জেনে এসেছি, ফুটবল খেলায় ছেলেরাই রেফারি হয়। এখন তো মেয়েরাও রেফারি হচ্ছে! ভাল লাগছে… খুব ভাল লাগছে…”। একটু থামলেন, আর তারপরেই তাঁর মন্তব্য, “শুধু বিদেশে কেন, আমাদের ভারত থেকেও হবে। দেখবেন, কলকাতার মেয়েও একদিন বিশ্বকাপের কোনও ম্যাচে রেফারিং করবে।”

পুরুষ পরিচালিত খেলা হিসেবে ফুটবল, ক্রিকেটের ট্যাগ ঘুচেছে বহু আগেই। এবার পুরুষ বিশ্বকাপেও গড়ল নতুন ইতিহাস। নারীঅধিকার নয় বরং সমানাধিকারের নজির হয়ে থাকল নিয়মে বাঁধা এই মরুদেশ। ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’ কি একেই বলে? প্রশ্ন উঠছেই…।

ষোলো কলা পূর্ণ হবে, যদি সাবিত্রীর ইচ্ছেপূরণ হয়!