EXCLUSIVE TOKYO PARALYMPICS: করোনাকে হারিয়ে প্যারালিম্পিকের মঞ্চে উড়ল জোড়া তেরঙা

প্রায় ৩ ঘন্টা পর ধরা গেল দুই পদকজয়ীকে। তখনও দুজনে একসঙ্গে বসে আড্ডা মারছেন গেমস ভিলেজে। পদকজয়ের উচ্ছ্বাস কাটিয়ে গল্পে মশগুল দুজনেই

EXCLUSIVE TOKYO PARALYMPICS: করোনাকে হারিয়ে প্যারালিম্পিকের মঞ্চে উড়ল জোড়া তেরঙা
TV9 বাংলায় এক্সক্লুসিভ একই ইভেন্টে দুই পদকজয়ী। সোনাজয়ী মনীশ নারওয়াল ও রুপোজয়ী সিংহরাজ আধানা। অলিম্পিক হোক বা প্য়ারাললিম্পিক- প্রথম এত বড় আসরে জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে উঠল জোড়া তেরঙা
Follow Us:
| Updated on: Sep 04, 2021 | 6:54 PM

রক্তিম ঘোষ

কলকাতাঃ জাতীয় পতাকা গমগম করে বাজছে। আর একসাথে উড়ছে জোড়া ভারতীয় পতাকা। কবে দেখেছি শেষবার? না মনে পড়ছে না। অলিম্পিকের মঞ্চ অনেক কিছু দেখায়, শেখায়। যেমন জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জোড়া ভারতীয় পতাকা উড়ছে। এ তো দেখাল প্যারালিম্পিকের মঞ্চ। এরপর শুরু দুই নজির গড়া শ্যুটার মনীশ নারওয়াল ও সিংহরাজ আধানার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা।

প্রায় ৩ ঘন্টা পর ধরা গেল দুই পদকজয়ীকে। তখনও দুজনে একসঙ্গে বসে আড্ডা মারছেন গেমস ভিলেজে। পদকজয়ের উচ্ছ্বাস কাটিয়ে গল্পে মশগুল দুজনেই। মনীশকে ফোনে ধরার পর সোনজয়ী তো বলেই দিলেন,” সিংহরাজও আছে আমার সঙ্গে।” শুরু হল ইন্টারভিউ। প্রায় ১৫ মিনিট টোকিও ও কলকাতায় কথা। দুই পদকজয়ী একেবারে দুইমেরুতে। মনীশ মিতভাষী। আর সিংহরাজ কথা বলেন অনর্গল। মিল একটাই, দুজনেই করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন। সেখান থেকে লড়াই করে আজকের পদক। যেখানে হার মেনেছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও।

সাক্ষাৎকারের প্রথম অংশবিশেষে সোনাজয়ী মনীশ নারওয়াল। দ্বিতীয় অংশে রুপোজয়ী সিংহরাজ আধানা-

 

প্রশ্নঃ প্রথম প্রতিক্রিয়া?

মনীশ নারওয়ালঃ খুশি। দারুণ খুশি। কি বলব! আমাদের শ্যুটিংয়ের দল এখানে এসেছে, তাঁদের মধ্যে প্রায় সবাই পদক জিতেছেন। আমার এটা প্রথম সোনা। আর সিংহরাজ তো শুধু আজকের রুপো নয়। আগে ব্রোঞ্জও জিতেছেন। ফলে সব মিলিয়ে দারুণ খুশি।

 

প্রশ্নঃ সোনা জেতা তো আর মুখের কথা নয়। প্য়ারালিম্পিকে প্রথমে কোয়ালিফাই করতে হয়েছে। তারপর যোগ্যতাঅর্জন করার পর প্রস্তুতি। কেমন ছিল সেইদিনগুলো?

মনীশ নারওয়ালঃ কঠিন ছিল। বেশ কঠিন ছিল। করোনার জন্য সত্যিই কঠিন হয়ে পড়েছিল প্রস্তুতি। আমি আর সিংহরাজ দুজনেই করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম। আমি যদিও দ্রুত সুস্থ হয়ে রেঞ্জে ফিরেছিলাম। তবে সিংহরাজের করোনায় বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাই লড়াই সত্যি কঠিন ছিল।

 

প্রশ্নঃ করোনা থেকে সুস্থ হয়ে এই লড়াই তো বেশ কঠিন ছিল। কবে থেকে শুরু হয়েছিল তোমার শ্যুটিংয়ের পথ চলা?

মনীশ নারওয়ালঃ আমি ২০১৬ সাল থেকে শ্যুটিং শুরু করি। তারপর জাতীয় স্তরে নজর কাড়ার পর আন্তর্জাতিক স্তরে নজর কাড়তে শুরু করি। তবে মাঝে ১ বছর আমি অসুস্থতার জন্য শ্যুটিং রেঞ্জের বাইরে চলে গিয়েছিলাম। তারপর ফিরে আসার লড়াইটা বেশ কঠিন ছিল।

 

প্রশ্নঃ কি অসুস্থ হয়েছিলে যার জন্য ১ বছর খেলতে পারেননি?

মনীশ নারওয়ালঃ অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বচ্যাম্পিয়নশীপ খেলে আসার পর দেশে ফিরে জ্বরে কাবু হয়ে পড়ি। সেই জ্বর কিছুতেই সারছিল না। যখন সারল, তখন আক্রান্ত হলাম করোনায়। এই নিয়ে প্রায় দেড়বছর অনুশীলনের ধারেকাছে পৌঁছতে পারিনি।

 

প্রশ্নঃ ছবিতে দেখছিলাম, তোমাকে প্যারালিম্পিক যাওয়ার আগে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সোনা জয়ের পর ফোন এল?

মনীশ নারওয়ালঃ হ্যাঁ, হ্যাঁ। উনি আমাকে অলিম্পিকে যাওয়ার আগে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। আর সোনা জয়ের কিছুক্ষণ পরেই ফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। অভিনন্দন জানিয়েছেন। আরও অনেক কথা হয়েছে। উনি দারুণ মোটিভেটর।

 

প্রশ্নঃ গোটা দেশ তোমার জন্য গর্বিত। বাড়ি ফিরে কেমন হবে সোনার ছেলের সেলিব্রেশন?

মনীশ নারওয়ালঃ এখনও কোনও প্ল্যান হয়নি। ফিরে এসে পরিবারের সঙ্গে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা হবে। ওঁরা নিশ্চয়ই হয়ত কোনও প্ল্যান তৈরি করে রেখেছে।

 

প্রশ্নঃ পদক কাকে উৎসর্গ করতে চাও?

মনীশ নারওয়ালঃ আমার কোচ। আমাদের গোটা শ্যুটিং দলকে। যাঁরা আমার শুভানুধ্যায়ী। প্রত্যেককে এই পদক উৎসর্গ করছি।

 

এবার মনীশ মোবাইল ফোনটি দিলেন সিংহরাজকে। সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব-

 

প্রশ্নঃ কেমন লাগছে?

সিংহরাজ আধানাঃ দারুণ। দারুণ। কি আর বলব। আপনাদের ভালবাসায় দুটো পদক পেলাম প্যারালিম্পিক থেকে।

 

প্রশ্নঃ মনীশ বলছিল, আপনি করোনায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেখান থকে কিভাবে কামব্যাক করলেন? তারপর কেমন ছিল অলিম্পিকের প্রস্তুতি?

সিংহরাজ আধানাঃ খুব কঠিন ছিল। করোনার প্রথম ঢেউয়ে দেশের বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন। আমিও সেইসময় করোনায় আক্রান্ত হই। ২৯শে মে করোনায় সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। ফরিদাবাদের যে হাসপাতালে আমি ভর্তি হই, সেই হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। তাঁরাই আমাকে সুস্থ করে তুলেছিল সেই পরিস্থিতি থেকে। আমি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম, যে আমি ও আমার পরিবার ধরেই নিয়েছিলাম, আমি আর বেঁচে ফিরব না। ভাবতে পারবেন না কি অবস্থা ছিল তখন।

সেইসময় ফরিদাবাদ শহরের হাসপাতালে চলছে বেডের হাহাকার। একটাও বেড পাচ্ছিলাম না। কঠিন পরিস্থিতি। আমাদের স্থানীয় এক নেতা খবর পান যে আমি বেড পাচ্ছিলাম না। অবশেষে তিনি একটি বেডের ব্যবস্থা করে দেন। আমি ভর্তি হই। পরিবার ও সেই হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য আমি এখন এই জায়গায়।

 

প্রশ্নঃ তারপরের লড়াইটা?

সিংহরাজ আধানাঃ তারপরের লড়াইটা আরও কঠিন ছিল। কার আমাদের শ্যুটিংয়ে শুধুমাত্র শরীরের দিক থেকে ফিট থাকলেই চলবেনা। দরকার মানসিকভাবে ফিট থাকাও। আর কোরানর পর দুটোতেই আমি শূণ্যে পৌঁছে গিয়েছিলাম। ফেরার পথ খুঁজে পাচ্ছিলামনা। আমি ধন্যবাদ দেব আমাদের শ্যুটিংয়ের কোচ ও সাপোর্টিং স্টাফদের। ধীরে ধীরে তাঁরা আমাকে ফিট করে তোলে। আমি ক্রমশ তৈরি হতে থাকি ম্যাচ খেলার জন্য। আমি যখন ক্যাম্পে যোগ দিই, তখন চিফ কোচ আমার অসুস্থতার খবর পেয়ে দুঃখ পেয়েছিলেন। শেষ আড়াই মাস ক্যাম্পে কঠোর ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি আমাদের দিকে সবার আলাদা নজর ছিল। শুধুমাত্র ট্রেনিংয়ে নয়। আমার খাদ্যাভ্যাসের দিকেও কড়া নজর ছিল। এমনকি টোকিওতেও আমার জন্য আলাদা মেনুর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কারন আমি তো শুধুমাত্র করোনা আক্রান্ত নই, আমি ডায়বেটিকও। তাই কড়া খাদ্যাভ্যাস না থাকলে লড়াই করা মুশকিল হত।

বিশ্বাস করবেন না, টোকিওতেও আমাকে যেভাবে খাবার দেওয়া হয়েছে, মনে হচ্ছে যেন বাড়িতেই রয়েছি।

 

প্রশ্নঃ আজ আপনাদের লড়াইটা দেখছিলাম। মনীশ আর আপনার মধ্যে কড়া টক্কর চলছে। কখনও মনে হয়েছিল যে আপনি মনীশকে টপকে যাবেন?

সিংহরাজ আধানাঃ মনীশ ও আমি দুজনেই ভারতীয় প্যারাশ্যুটিংয়ে কয়েকবছর ধরেই সুনামের সঙ্গে খেলছি। তাই আমরা দুজনেই নিশ্চিত ছিলাম পদক আমরা জিতবই।

বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, আজ আমাদের চিফ নটিয়াল স্যার, আমাদের খেলার আগেই বাজি ধরেছিলেন। তাঁর বাজি ছিল, আমরা দুজনেই পদক জিতব। পদক জয়ের পর সেটা জানতে পারি। এইপদক জয় আসলে ভরসার জয়। সবাই যে আমাদের উপর ভরসা করেছিল, তার মান আমরা রাখতে পেরেছি।