নীরজ ছোঁয়ায় সারা দেশে চলছে বর্শামঙ্গল উৎসব

আগস্ট মাসে টোকিও অলিম্পিকের জ্যাভলিন থেকে নীরজ চোপড়ার (Neeraj Chopra) পাওয়া সোনা নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন দেখার চোখ পাল্টে দিচ্ছে। কচিকাঁচাদের এখন লক্ষ্য একটাই, নীরজ হয়ে ওঠা। অলিম্পিকে সোনা জিততে পারে যাতে। অ্যাথলেটিক্স ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে যেন ঢল নেমেছে ছাত্র-ছাত্রীদের।

নীরজ ছোঁয়ায় সারা দেশে চলছে বর্শামঙ্গল উৎসব
নীরজ ছোঁয়ায় সারা দেশে চলছে বর্শামঙ্গল উৎসব (ছবি-টুইটার)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 04, 2021 | 8:46 AM

নয়াদিল্লি: দেশের অধিকাংশ অ্যাকাডেমিতে আজকাল একটাই প্রশ্ন, আচ্ছা, জ্যাভলিন (Javelin) শেখানো হয়? কিছু নামী অলিম্পিয়ান দিনভর অন্তত দশ-পনেরোটা মেসেজ পাচ্ছেন, জ্যাভলিন শেখানোর ভালো কোচ কে আছেন? খেলাধুলোর জিনিসপত্র যারা বানায়, সেই সব সংস্থা নতুন জ্যাভলিনের অর্ডার পাচ্ছে অহরহ।

৭ আগস্ট এমনিতেই ভারতের ‘বর্শাদিবস’ হয়ে গিয়েছে। অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া ইতিমধ্যে সমস্ত রাজ্য সংস্থাকে সার্কুলার দিয়েছে, প্রতি বছর ৭ আগস্ট বার্ষিক জ্যাভলিন টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে হবে। ফিনল্যান্ডের মতো জ্যাভলিন সমৃদ্ধ দেশের সঙ্গে ক্রীড়া সম্পর্ক তৈরি করা হয়েছে। যাতে আগামী দিনে অলিম্পিকে আরও বেশি সাফল্য আসে।

আগস্ট মাসে টোকিও অলিম্পিকের জ্যাভলিন থেকে নীরজ চোপড়ার (Neeraj Chopra) পাওয়া সোনা নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন দেখার চোখ পাল্টে দিচ্ছে। কচিকাঁচাদের এখন লক্ষ্য একটাই, নীরজ হয়ে ওঠা। অলিম্পিকে সোনা জিততে পারে যাতে। অ্যাথলেটিক্স ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে যেন ঢল নেমেছে ছাত্র-ছাত্রীদের।

কুস্তির জন্যই বিখ্যাৎ ছত্রসাল স্টেডিয়াম। অ্যাথলেটিক্স ট্রেনিংও চলেছে সেখানে। কোচ রামন ঝা বলছিলেন, ‘গত দু’মাসে চল্লিশেরও বেশি বাচ্চা জ্যাভলিন শেখার জন্য ভর্তি হয়েছে। এত বছর ধরে কোচিং করাচ্ছি, এতটা আগ্রহ কখনও দেখিনি। এমনকি, অলিম্পিকের পর কিছু অ্যাথলিট, যারা মিডল ডিস্ট্যান্ট রানার, তারা পর্যন্ত জানতে চেয়েছে, চাইলে জ্যাভলিন ইভেন্টকে বেছে নিতে পারে কিনা। রোজ অন্তত ১০-১৫জন অভিভাবকের ফোন পাচ্ছি, জ্যাভলিন শিখতে গেলে কত খরচা, কীভাবে শেখা যায়, এ সব জানতে চেয়ে।’

শুধু রাজধানী নয়, নীরজ ছোঁয়ায় এই ছবি এখন সারা দেশের। জ্যাভলিনে দেশের প্রাক্তন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন সুনীল গোস্বামী জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে কোচিং করান। তিনি পর্যন্ত অবাক হয়ে যাচ্ছেন সাম্প্রতিক ঘটনায়, ‘আমার বন্ধুবান্ধবরা সারা দেশে নানা জায়গায় কোচিং করায়। নীরজ অলিম্পিকে সোনা পাওয়ার পর তাদের অ্যাকাডেমিতে ভিড় উপচে পড়তে শুরু করেছে। শুধু শহর নয়, গ্রামের ছেলেমেয়েরা পর্যন্ত মূল স্টেডিয়ামগুলোতে কোচেদের কাছে এসে তাদের কাছে ট্রেনিং নিতে শুরু করেছে। টেনিস প্লেয়ার, রানাস, জিমন্যাস্টরাও রয়েছে, যারা আমাকে বলেছে, ইভেন্ট বদলে জ্যাভলিন শুরু করতে চায়।’

কৌতুহল থেকে আগ্রহ তৈরি হয়, আর আগ্রহই বাড়িয়ে দেয় চাহিদা। ক্রিকেটের ক্ষেত্রে একসময় যা হয়েছিল। তীব্র চাহিদার কারণেই সারা দেশে অসংখ্য ক্রিকেট সরঞ্জাম তৈরির সংস্থা জন্ম নেয়। জ্যাভলিনের ক্ষেত্রেও সেই বিপ্লব শুরু হয়ে গিয়েছে। অ্যামেন্টাম স্পোর্টস, ভিনেক্স স্পোর্টসের মতো কোম্পানিগুলোরই কথা যদি ধরা হয়, তা হলে নীরজ টোকিওতে সোনা জেতার পর জ্যাভলিনের চাহিদা বিপুল বেড়ে গিয়েছে। মোটামুটি একটা ভালো জ্যাভলিনের দাম ১০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ পর্যন্ত। ১০ হাজারি জ্যাভলিনের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে এই সংস্থাগুলো।

জ্যাভলিন যাঁরা শেখেন বা প্র্যাক্টিস করেন, যে কোনও স্টেডিয়ামে তাঁদের জন্য আলাদা সময় বরাদ্দ করা হয়। যাতে কারও বর্শায় কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না হন কেউ। খুব ভোরে না হলে ভরদুপুরে এই সব ট্রেনিং চলে। সময় উপেক্ষা করে জ্যাভলিনের টানে তাতেও হাজির হয়ে যাচ্ছে কচিকাঁচারা। নীরজ চোপড়া হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে।