বিরাটদের কাছে আগ্রাসন চাইছি
বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজ। প্রথম টেস্টের আগে TV9 বাংলা ডিজিটালের হয়ে কলম ধরলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়।
শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়
শুরুতেই একটা বলে রাখি, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এই টেস্ট সিরিজটা শুধু ব্যাট-বলের নয়, মনস্তাত্ত্বিকও বটে। মানসিক যুদ্ধে যে এগিয়ে থাকবে, পুরো সিরিজটা জুড়ে দাপিয়ে বেড়াবে তারাই। অস্ট্রেলিয়া ঠিক এই জায়গাতেই বিপক্ষের থেকে সব সময় এগিয়ে থাকে। চাপ, পাল্টা চাপের খেলাটা ওরা খুব ভালো জানে। টিম পেইন, স্টিভ স্মিথ, প্যাট কামিন্সরা শুরু থেকেই সেটা চালাবে। বিরাট কোহলির টিম যদি চোখে চোখ রেখে সিরিজটা খেলতে নামে, আগ্রাসন ধরে রাখতে পারে, অস্ট্রেলিয়া পাল্টা চাপে পড়বেই।
দিন-রাতের টেস্ট দিয়ে শুরু হচ্ছে সিরিজ। বছর চারেক আগে আমি অ্যাডিলেডে গিয়েছি। ওই মাঠে সব ধরনের খেলা হয় বলে ড্রপ-ইন পিচ ব্যবহার করা হয়। ফলে পিচের চরিত্র কেমন হবে, খেলা শুরু না হলে বলা খুব মুশকিল। তবে এটুকু বলতে পারি, গোলাপি টেস্টে খুব একটা বড় রান হবে না। তার কারণ হল গোলাপি বল কয়েকটা সেশনে একদম অন্যরকম আচরণ করে। দিনের প্রথম সেশনে যেমন বল মুভ করে, তেমনই ফ্লাডলাইট জ্বললে বল আবার মুভ করতে শুরু করে। এই দুটো সেশন যদি সামলে দিতে হবে বিরাটের টিমকে। সোজা কথায়, ভারতের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের কাউকে না কাউকে একটা সেঞ্চুরি করতেই হবে। তা হলে বিপক্ষের উপর পাল্টা চাপ রাখা যাবে। স্কোরবোর্ডে ভালো রান থাকলে সামি-বুমরারা আগ্রাসী বোলিং করতে পারবে।
The grind never stops ? #TeamIndia sweat it out in the nets ahead of the 1st Test against Australia beginning December 17 ?? #AUSvIND pic.twitter.com/qcyB0EokpZ
— BCCI (@BCCI) December 15, 2020
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টিভির সামনে বসবই। তার একদিন আগেই ভারত প্রথম টেস্টের টিমটা ঘোষণা করে দিল। মায়াঙ্কের সঙ্গে কে ওপেন করবে, সেটা নিয়ে আলোচনা চলছিল। আমি শুভমন গিলকে চেয়েছিলাম। কিন্তু শুভমন নয়, পৃথ্বী শ খেলছে। পৃথ্বী ইদানীং খুব একটা ফর্মে নেই। ওর মধ্যে সারাক্ষণ শট মারার একটা প্রবণতা আছে। যেটা অনেক সময় একটু মুশকিলেও ফেলে দেয়। সে দিক থেকে দেখলে শুভমন আদর্শ ওপেনার হতে পারত। পূজারা তিনে, বিরাট চারে, রাহানে পাঁচে। এই পর্যন্ত ঠিকই আছে। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম, ঋষভ পন্থকে হয়তো খেলানো হবে ব্যাটসম্যান হিসেবে। অস্ট্রেলিয়ায় ও বরাবর সফল। এর আগে সেঞ্চুরিও করেছে। ক’দিন আগে প্র্যাক্টিস ম্যাচেও সেঞ্চুরি করেছে। ওর বদলে হনুমা বিহারিকে খেলানোর একটা যুক্তি অবশ্য থাকছে। ছ’নম্বর জায়গাটাতে অনেক সময়ই অলরাউন্ডারদের খেলানো হয়। হনুমা থাকলে স্পিনটাও করতে পারবে। বোলিংয়ের গভীরতা বাড়বে। অ্যাডিলেডের পিচ থেকে কিন্তু অফস্পিনাররা দারুণ সাহায্য পায়।
আরও পড়ুন – অ্যাডিলেডে প্রথম একাদশে ঋদ্ধি,মায়াঙ্কের সঙ্গে ওপেনে পৃথ্বী
ঋদ্ধিমান সাহাকে টিমে দেখে ভালো লাগল। টেস্টে সব সময় স্পেশালিস্ট কিপার খেলাতে হয়। একটা হাফ চান্সকে যদি উইকেটে পরিণত করা যায়, ম্যাচের রংটাই কিন্তু পাল্টে যাবে। সে ক্ষমতা ঋদ্ধির আছে। সব টিমের কথা মাথায় রেখেই বলছি, ঋদ্ধি এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা কিপার। অস্ট্রেলিরা মতো টিমের বিরুদ্ধে পন্থকে কিপার হিসেবে খেলানোটা ঝুঁকিই হয়ে যেত। বুমরা, সামি, অশ্বিনদের নিয়ে প্রশ্ন নেই। শুধু একটা জিনিস মানতে পারছি না। উমেশ যাদব কেন? এমনিতেই ওর ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিছু ক্ষেত্রে আমার তো মনেই হয়, এ বার পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় এসেছে। নতুন মুখদের খেলিয়ে দেখে নেওয়াটাও দরকার। আমার মনে হয়, উমেশের বদলে খেলানো উচিত ছিল নভদীপ সাইনিকে। প্রথমত, ওর যথেষ্ট গতি আছে। লম্বা বলে স্বাভাবিক বাউন্সটাও পায়। সামি-বুমরার সঙ্গে ও থাকলে বোলিংয়ের ধারটা আরও বাড়ত।
আরও পড়ুন – আহমেদাবাদে বসবে বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভা
বিরাটদের কাছে গোলাপি টেস্ট একটা অ্যাডভান্টেজ হতে পারে। কারণ, ডেভিড ওয়ার্নারের মতো ব্যাটসম্যান নেই। ও যে কোনও টিমের কাছেই ত্রাস। শুরুতেই প্রতিপক্ষ বোলিংকে খুন করার চেষ্টা করে। দ্রুত একটা হাফ সেঞ্চুরি কিংবা ৭০-৮০ কিন্তু প্রতিপক্ষের মনোবলটা ভেঙে দেয়। ওয়ার্নার এই টেস্টে নেই। স্মিথ, লাবুসেনদের মতো ব্যাটসম্যানরা থাকবে ঠিকই, তবু ভারত যদি আগ্রাসনটাকে ব্যাটিং আর বোলিংয়ের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারে, অ্যাডিলেডেই হয়তো ১-০ করে ফেলবে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের কথা মাথায় রেখে সেটাও তো জরুরি।