Spot Deepfake Videos: কতটা ‘ডিপ’ ফেক! রশ্মিকার ভিডিয়ো থেকেই Deepfake বোঝার 5 লক্ষণ
How To Spot Deepfake: ডিপফেক আপনার সম্ভ্রম নিয়ে টানাটানি করতে পারে। যেখানে টম ক্রুজ়, রশ্মিকা মান্দানা বা ক্যাটরিনা কাইফের মতো তারকাদের নিস্তার নেই, সেখানে আপনি-আমি কোথায়! তাই, সতর্ক হতে হবে। আর সতর্ক হতে সর্বাগ্রে জেনে নিতে হবে কীভাবে বুঝবেন, কোন ভিডিয়ো ডিপফেকের কারসাজিতে জাল করা হয়েছে।
প্রথমে রশ্মিকা মান্দানা, আর তারপরে ক্যাটরিনা কাইফ- Deepfake ভিডিয়ো নিয়ে উত্তাল দেশ। এই ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না হয়, তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে কেন্দ্রের কাছে দাবি করেছেন দেশের মানুষজন। রশ্মিকার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়তেই অমিতাভ বচ্চনের মতোও বড় তারকা এগিয়ে এসেছিলেন অভিনেত্রীর সমর্থনে। কর্তৃপক্ষের কাছে এই ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জিও জানিয়েছিলেন তিনি। কেন্দ্রের তরফে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মকে AI Deepfake ভিডিয়োগুলি 24 ঘণ্টার মধ্যে তুলে নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়।
তবে রশ্মিকার ডিপফেক ভিডিয়ো আজ ভাইরাল হলেও নির্দোষ মানুষের গায়ে কাদা ছেটানোর এই প্রযুক্তিগত প্রতারণাচক্র অনেক আগেই সক্রিয় হয়েছিল। 2017 সাল থেকেই তৈরি হয়ে আসছে ডিপফেক ভিডিয়ো। অর্থাৎ ডিপফেক নতুন কোনও ঘটনা নয়। কোভিড অতিমারির সময় লকডাউনে মাইলস ফিশার নামের এক টিকটকার একটি ডিপফেক ভিডিয়ো তৈরি করে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন। হলিউড স্টার টম ক্রুজ়কে সে সময় ডিপফেকের বলি করা হয়েছিল।
এখন বুঝতে পারছেন তো, এই প্রতারণা এমন কোনও হেলাফেলার বিষয় নয় যে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক হাজার টাকা গায়েব হল আর আপনি তাতে গুরুত্ব দিলেন না। ডিপফেক আপনার সম্ভ্রম নিয়ে টানাটানি করতে পারে। যেখানে টম ক্রুজ়, রশ্মিকা মান্দানা বা ক্যাটরিনা কাইফের মতো তারকাদের নিস্তার নেই, সেখানে আপনি-আমি কোথায়! কল্পনার জগত আর সত্যের মাঝের যে সীমারেখাটা থাকে, সেটাকেই নড়বড়ে করে দিতে পারে এই খতরনাক প্রযুক্তি। তাই, সতর্ক হতে হবে। আর সতর্ক হতে সর্বাগ্রে জেনে নিতে হবে কীভাবে বুঝবেন, কোন ভিডিয়ো ডিপফেকের কারসাজিতে জাল করা হয়েছে।
ফটোশপ করা ছবির থেকে ডিপফেক কতটা আলাদা
ভিডিয়ো কনটেন্ট তৈরি করার জন্য উন্নত মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ডিপফেক। তার ফলে এমনই কিছু তৈরি হয়ে যায়, যা ভিডিয়োর মুখ্য চরিত্র হয়তো আগে কখনও করেনইনি। হিন্দুস্তান টাইমসের কাছে সাইবার সিকিওরিটি, ডেটা গভর্নেন্স এবং ডিজিটাল টেকনোলজি বিশেষজ্ঞ কণিষ্ক গৌর বলেছেন, “জেনারেটিভ অ্যাডভারসারিয়াল নেটওয়ার্ক (GANs) নামক একটি প্রক্রিয়া কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হয়, যেখানে দুটি মেশিন লার্নিং মডেল একসঙ্গে কাজ করে। তাদের একটি জাল মুহূর্তগুলি তৈরি করে, আর একটি শনাক্তকরণের কাজ করে। এই প্রক্রিয়ার সাহায্যে জাল ভিডিয়োগুলি এতটাই বিশ্বাসযোগ্য হয় যে, তা ফটোশপ করা ছবিগুলিকেও হার মানায়।”
ডিপফেক করা ভিডিয়ো বুঝবেন কীভাবে
একটি ডিপফেক ভিডিয়ো চিহ্নিত করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, তবে তা অসম্ভব নয়। কণিষ্ক গৌড় একটা ডিপফেক ভিডিয়োর ক্ষেত্রে কয়েকটা বিষয় একটি খুঁটিয়ে দেখতে বলছেন। মুখ্য চরিত্রের চোখের পলক ফেলার ধরন অপ্রাকৃতিক হবে, মুখের বিকৃতি বা কণ্ঠস্বর, এমনকি ঠোঁটের নড়াচড়াও কখনও অস্বাভাবিক হতে পারে। আর এই সব অসঙ্গতিগুলিকেই তিনি বলছেন ডিপফেক ভিডিয়োর মূল লক্ষণ। তাঁর কথায়, “এমন অনেক টুলস ও সফটওয়্যার রয়েছে, যা মেশিন লার্নিং কাজে লাগিয়ে একাধিক সুক্ষ্ম সংকেতগুলি বিশ্লেষণ করার মধ্যে দিয়ে ডিপফেক শনাক্ত করে। সাধারণত সেই সুক্ষ্ম বিষয়গুলি মানুষের চোখে স্পষ্ট হয় না।”
ডিপফেক ধরার আরও বেশ কিছু উপায় রয়েছে। একটু খেয়াল করে দেখবেন, ডিপফেক ভিডিয়ো খুব একটা বড় হয় না। কারণ, একটা ভিডিয়োতে চরিত্রের মুখের প্রতিটা অভিব্যক্তি ফ্রেম বাই ফ্রেম এডিট করতে হয়। ভিডিয়োর দৈর্ঘ্য যদি বেশি হয়,সেক্ষেত্রে ফ্রেম বাই ফ্রেম এডিট করাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। আবার ডিপফেক তৈরির জন্য প্রতারকরা এমন ভিডিয়ো বেছে নেয় না, যেখানে চরিত্রের ক্লোজ়-আপ শট কাজে লাগাতে হয়। সেখানেও ফ্রেম বাই ফ্রেম এডিট করাটা মুশকিলের হয়ে যায়।
ডিপফেক ধরার 5 মোক্ষম উপায়
1) চোখের দিকে তাকান: 2018 সালের একটি গবেষণায় জানা গিয়েছিল, ডিপফেক ভিডিয়োতে একটা চরিত্রের মুখ সাধারণ মানুষের মতো ব্লিঙ্ক করে না। এখানে রশ্মিকা মান্দানার ভিডিয়োতে যদি খেয়াল করেন, তাহলে দেখবেন তিনি দু’বার ব্লিঙ্ক করেছেন। তাঁর চোখ দুটোও একটু অন্যরকম দেখাচ্ছিল।
2) ঠোঁটটা ভাল করে দেখুন: একটু খারাপ মানের ডিপফেক ভিডিয়ো ধরে ফেলাটা খুব সহজ। আর তা ধরতে পারবেন চরিত্রের খারাপ লিপ-সিঙ্কিং থেকে। রশ্মিকার ভিডিয়োতেই যদি আপনি খেয়াল করেন, তাহলে দেখবেন অডিওর সঙ্গে তাঁর লিপ-সিঙ্কিং খাপ খাচ্ছে না। ডিপফেক ভিডিয়ো কিছু না কিছু অসঙ্গতি দেখাতেই থাকবে।
3) ত্বক: আসল ব্যক্তি আর ভুয়ো ব্যক্তির স্কিনের টোন নিশ্চয়ই এক হবে না। যদিও একটা ভিডিয়ো থেকে একনজরে তা বোঝাটা একটু অসম্ভবই বটে। ডিপফেক ভিডিয়োতে চরিত্রের এমনই ত্বক দেখানো হয়, যাতে কোনও দাগ নেই। এছাড়াও শরীরের অদ্ভুত নড়াচড়াও সেক্ষেত্রে একটি বড় লক্ষণ।
4) চুল ও দাঁত: ডিপফেক ভিডিয়োতে চুল এক্কেবারে নিখুঁত রাখা হয়। তার কারণ মূল চরিত্রের হুবহু নকল করা একটা উচ্চমানের সফটওয়্যারের জন্যও ভাল ভাবে রেন্ডার করাটা কঠিন করে তোলে। চুল ও দাঁত অনেক সময় ডিপফেক ভিডিয়ো ডিকোড করতে সাহায্য করে। কারণ, সেগুলি কখনই স্বাভাবিক দেখাতে পারে না।
5) গয়নার দিকেও নজর রাখুন: যদি সেই ব্যক্তি গহনা পরে থাকেন, তাহলে আলোর প্রভাবে সেগুলি অস্বাভাবিক দেখাতে পারে। ডিপফেকের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা প্রবল।