‘নিউট্রিনো’- র খোঁজ, বিশ্বের গভীরতম বৈকাল হ্রদের নীচে সুবিশাল টেলিস্কোপ বসালেন রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, উত্তর গোলার্ধের সবচেয়ে বড় লেক বা হ্রদ হল বৈকাল। তাই সেখানেই বসানো হয়েছে neutrino ডিটেক্ট করার টেলিস্কোপ।
রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা আন্ডারওয়াটার স্পেস টেলিস্কোপ বসিয়েছে বৈকাল হ্রদের নীচে। বিশ্বে প্রথম এই ধরণের বড় আন্ডারওয়াটার স্পেস টেলিস্কোপ বসানো হয়েছে হ্রদের নীচে। মহাকাশে নজর রাখতেই এই পরিকল্পনা নিয়েছেন রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা। ২০১৫ সাল থেকে জলের নীচে অনেক গভীরে বসানোর জন্য এই স্পেস টেলিস্কোপের নির্মাণ কাজ চলছিল।
কী কাজ করবে এই স্পেস টেলিস্কোপ?
neutrinos- সবচেয়ে ক্ষুদ্র পার্টিকল হিসেবে এখন বিশ্বে পরিচিত এই নিউট্রিনো (neutrinos)। আর এদের গতিপ্রকৃতিই পর্যবেক্ষণ করবে বৈকাল হ্রদের নীচে বসানো হয়েছে এই স্পেস টেলিস্কোপ। এই Baikal-GVD এই স্পেস টেলিস্কোপ ৭৫০ থেকে ১৩০০ মিটার (২৫০০-৪৩০০ ফুট) গভীরতায় বৈকাল হ্রদের নীচে বসানো হয়েছে। জানা গিয়েছে, Neutrinos- দের পর্যবেক্ষণ করা খুবই সূক্ষ্ম এবং জটিল কাজ। তবে জলের মাধ্যম এই Neutrinos পর্যবেক্ষণ করা যায় সবচেয়ে ভাল ভাবে। তাই বৈকাল হ্রদের গভীরে প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই টেলিস্কোপ বসানো হয়েছে।
বৈকাল হ্রদের আয়তন প্রায় ৩১ হাজার বর্গকিলোমিটার। গভীরতা প্রায় ১৬৩৭ মিটার। এই হ্রদের মধ্যেই সুবিশাল স্পেস টেলিস্কোপ বসিয়েছেন রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা। আসলে যে ক্ষুদ্র কণা চোখে দেখা যায় না, কিন্তু অস্তিত্ব রয়েছে, তাদের বলে Neutrinos। এই Neutrinos ডিটেকশনের জন্য যে টেলিস্কোপ বসানো হয়েছে তার নীচের অংশে স্বচ্ছ কাচ এবং উপরে রয়েছে স্টেনলেস স্টিল। সূক্ষ্ম কণা যখন প্রবল বেগে ধাবমান হবে, তখন তাদের নাগাল পাওয়ার জন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আলোর মতোই দ্রুত গতিতে ছোটে এইসব Neutrinos। প্রসঙ্গত, বৈকাল হ্রদে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি প্রবেশ করতে পারে না। সেই সঙ্গে হ্রদের উপরের অংশ থাকে পুরু বরফ। আর এটাই Neutrinos- এর যাতায়াতের জন্য এটাই নিরাপদ জায়গা। এই যাতায়াতের সময়েই ক্ষুদ্র কণার গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন বিজ্ঞানীরা। মূলত সূর্য থেকে ধেয়ে আসে অসংখ্য Neutrino। তার সামান্য অংশই আসে পৃথিবীতে।
আপাতত হাফ কিউবিক কিলোমিটার পরিমাপ করতে পারে এই টেলিস্কোপ। তবে আগামী দিনে এর শক্তি এমনভাবে বাড়ানো হবে, যাতে এক কিউবিক কিলোমিটার পর্যন্ত পরিমাপ করা যায়। বৈকাল হ্রদের এই টেলিস্কোপের মতো আরও একটি টেলিস্কোপ রয়েছে দক্ষিণ মেরুর US research station- এর Antarctic ice- এ।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, উত্তর গোলার্ধের সবচেয়ে বড় লেক বা হ্রদ হল বৈকাল। তাই সেখানেই বসানো হয়েছে neutrino ডিটেক্ট করার টেলিস্কোপ। বৈকাল হ্রদের গভীরতার কারণেই এখানে এই টেরিস্কোপ বসানো হয়েছে। এছাড়া ফ্রেশ ওয়াটার এবং ওয়াটার ক্ল্যারিটি অর্থাৎ জলের স্বচ্ছতাও এই টেলিস্কোপ বসানোর অন্যতম পরিমাপ। চেক রিপাবলিক, জার্মানি, পোল্যান্ড, রাশিয়া এবং স্লোভাকিয়ার বিজ্ঞানীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই টেলিস্কোপ বসানো সম্ভব হয়েছে।