Kolkata Weather: এই শতাব্দীর সবচেয়ে ‘ঠান্ডা’ মার্চ কলকাতায়! বৈশাখ এলেই পোড়া গরম?
Coldest March Kolkata 2023: কলকাতার তথ্য বলছে, এ বছর মার্চের মতো কম গরম চলতি শতাব্দীতে প্রায় বিরলই। দৈনিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ধরলে তেইশেই এই শতাব্দীর সবচেয়ে ‘ঠান্ডা’ মার্চ পেল কলকাতা। সর্বোচ্চ তাপমাত্রার গড় ধরলে সামনে শুধু ২০০৩।
কমলেশ চৌধুরী
বসন্ত কম, গ্রীষ্মের আঁচ বেশি। বঙ্গবাসীর ‘মেমোরিজ ইন মার্চ’ তো এ কথাই বলে। এ বছরটা ব্যতিক্রম। গ্রীষ্ম কম, বর্ষার আবহ বেশি। নিট ফল? কলকাতার তথ্য বলছে, এ বছর মার্চের মতো কম গরম চলতি শতাব্দীতে প্রায় বিরলই। দৈনিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ধরলে তেইশেই এই শতাব্দীর সবচেয়ে ‘ঠান্ডা’ মার্চ পেল কলকাতা। সর্বোচ্চ তাপমাত্রার গড় ধরলে সামনে শুধু ২০০৩। সে দিক থেকে দেখলেও, ২০ বছরের ‘ঠান্ডা’ মার্চ কলকাতায়। শুধু কী কলকাতা! বাংলা, বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চলের ‘মেমোরিজ ইন মার্চ’ও যথেষ্ট সুখকর। ‘লু’ উদয় হয়নি, চেনা রোদের তেজও কম। ফলে একদিনও তাপপ্রবাহের কবলে পড়তে হয়নি বাঁকুড়া, পুরুলিয়াকে। একবারের জন্যও চল্লিশের চৌকাঠ পেরোয়নি পশ্চিমাঞ্চলের তাপমাত্রা। কোনও কোনও ঝড়-বৃষ্টির রাতে তো ফ্যানের স্পিডও কমিয়ে রাখতে হয়েছে! এককথায়, অচেনা মার্চ।
মার্চের চেনা গরমটা কেমন? উত্তর খুঁজতে সামান্য পিছনে তাকালেই চলবে। ২০০৬ সালের ২৬ মার্চ আলিপুরের তাপমাত্রা ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে গিয়েছিল। যাকে বলে তড়িঘড়ি তাপপ্রবাহ। ২০১৪, ২০১৬– দু’বছরই কলকাতার পারদ পৌঁছেছিল চল্লিশের চৌকাঠে। দু’বছর আগেও ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে ফেলেছিল আলিপুরের তাপমাত্রা। ২০১০ সালে উষ্ণতম মার্চের সাক্ষী হয় বাংলা। সে বার ৪৩.১ ডিগ্রিতে পৌঁছে গিয়েছিল বাঁকুড়ার পারদ, শ্রীনিকেতন পৌঁছেছিল ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ বার সেই তুলনায় চৈত্রের বিরাট ছাড়! একদিনও কলকাতায় ৩৫ ডিগ্রি পেরোয়নি সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। ১৩ মার্চ পারদ উঠেছিল ৩৪.৫ ডিগ্রিতে, সেটাই সবচেয়ে বেশি। আলিপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার গড় থাকার কথা ৩৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বার ছিল মাত্র ৩২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কোন জাদুবলে ব্যতিক্রম তেইশের মার্চ?
শুধু কলকাতা বা বাংলা নয়, গোটা দেশেই গরম মাথা তুলতে পারেনি। এর নেপথ্যে শক্তিশালী পশ্চিমী ঝঞ্ঝার হাত দেখতে পাচ্ছেন আবহবিদরা। মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ”একের পর এক পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এসেছে। সেগুলো শক্তিশালীও ছিল, ফলে অনেকটা দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত তার প্রভাব পড়েছে। নিয়মিত ঝড়-বৃষ্টিই নয়, এ বার প্রচুর শিলাবৃষ্টিও হয়েছে।”
মৌসম ভবনের হিসেব, মার্চে সাতটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এসেছে। এর মধ্যে অন্তত পাঁচটির প্রভাব সমতলেও পড়েছে। শক্তিশালী ঝঞ্ঝা আসার ফলে পাহাড়ে বারবার তুষারপাত হয়েছে, আর দফায় দফায় ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে সমতলে। শুধু ঝঞ্ঝা নয়, যোগ্য সঙ্গত করছে রাজস্থান থেকে পূর্ব ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত নিম্নচাপ অক্ষরেখা। কখনও হাজির হয়েছে ঘূর্ণাবর্ত, কখনও বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপ বলয়। সবমিলিয়ে জলীয় বাষ্পের আমদানিতে কখনওই টান পড়েনি। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ২৬% বেশি বৃষ্টি হয়েছে মার্চে। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ ১৩০% বেশি। অর্থাৎ দ্বিগুণেরও বেশি। মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়ায় তো অতিবৃষ্টি! মুর্শিদাবাদে ৫৫৮%, পুরুলিয়ায় ২২৮% বেশি বৃষ্টি হয়েছে মার্চে।
অথচ ফেব্রুয়ারি মাসেই বৃষ্টির জন্য হাহাকার ছিল দেশে। পশ্চিমী ঝঞ্ঝার অভাবে শীত যেতে না যেতেই কাঠফাটা গরম পড়ে যায়। প্রাপ্তি, দেশের উষ্ণতম ফেব্রুয়ারি। ঠিক এক মাস পরই একেবারে বিপরীত চিত্র। গত বছরের মার্চের সঙ্গে এ বারের মার্চেরও বিপুল ফারাক। গরমের ঠেলায় বাইশের মার্চকে দেশের উষ্ণতম ঘোষণা করে মৌসম ভবন। এ বার একেবারে অন্য ছবি। এত খেয়ালিপনা? দায়ী কি জলবায়ু পরিবর্তন? সঞ্জীববাবু বলছেন, ”এরকম কয়েকটা বছরের পরিসংখ্যান দেখে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায় না। তবে এটা ঠিক, আবহাওয়ায় পরিবর্তনশীলতা বাড়ছে। আগেও এরকম হত, এখন মনে হচ্ছে, কম সময়ের মধ্যে পরিবর্তনশীলতার প্রবণতা বেশি। বিষয়টা গবেষণা করে দেখা দরকার।”
পরিবর্তন শব্দটা নিশ্চিত ভাবেই প্রাসঙ্গিক। কারণ, আবার আবহাওয়ার পট পরিবর্তনের সম্ভাবনা। মেঘ কেটে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। ঝড়-বৃষ্টি না হলেই গরম বাড়বে। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে রাজ্যে তাপমাত্রার গড় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে তাপপ্রবাহের আশঙ্কাও বেশি। তবে এপ্রিলের প্রথম অর্ধে অর্থাৎ, বাকি চৈত্রে প্রবল গরমের আশঙ্কা কম। বৈশাখ এলেই গরম হাওয়ার হুল, আশঙ্কা এমনই।