Water Pollution: তেজস্ক্রিয় বর্জ্য জল সমুদ্রে ফেলবে জাপান, UN বলছে যৎসামান্য! ঘনিয়ে আসছে কোন বিপদ?

Japan Release Radioactive Water: যে কোনও তেজস্ক্রিয় জল সমগ্র প্রশান্ত মহাসাগরে ছড়িয়ে পড়তে 1200 দিন সময় লাগে। তাহলে এই পরিমাণ তেজস্ক্রিয় জল যদি মহাসাগরে মেশে, তবে তা উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে খুব কম সময় নেবে।

Water Pollution: তেজস্ক্রিয় বর্জ্য জল সমুদ্রে ফেলবে জাপান, UN বলছে যৎসামান্য! ঘনিয়ে আসছে কোন বিপদ?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 05, 2023 | 6:26 PM

বিশ্বব্যাপী দূষণের দাপট। জলে, স্থলে কিংবা বায়ুতে প্রতি মুহূর্তে মিশছে বিষ। আর সেই বিষের জ্বালায় জ্বলছে বসুন্ধরা। মানব সমাজকে জলদূষণ আর তার প্রভাব নিয়ে আলাদা করে আর কিছুই বলার থাকে না। বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা, মানুষের অসচেতনতার ঊর্ধ্বে উঠে এমন কিছু ঘটনা সামনে আসে, যা দেখে হতাশ হওয়া ছাড়া বোধহয় সত্যিই আর কোনও উপায় থাকে না। তেমনই একটি ঘটনা সামনে এসেছে, যা হয়তো পুরো বিশ্বকে আরও একবার বিপদে ফেলতে পারে। বহু আগেই জাপান সরকার তাদের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু দেশের জনগণ তার বিরোধিতা করায়, তখন সেকাজ সম্ভব হয়নি। এরপর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)। দুই বছর ধরে সেই তদন্ত চলে। আর সেই তদন্তের সিদ্ধান্তই পৃথিবীকে অন্ধকারের পথে নিয়ে যেতে পারে বলেই আশঙ্কা।

কী সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থাটি?

বর্তমানে এই সংস্থাটি জাপান সরকারকে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ফেলার অনুমতি দিয়েছে। সংস্থাটি তদন্তের পর দাবি করেছে, প্রশান্ত মহাসাগরে ওই আবর্জনা ফেললে মানুষ, প্রাণী বা পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে। তবে সেই ক্ষতি সামান্য। তাই এটা নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। প্রশ্ন হল, আদতেই কি ক্ষতিটা সামান্য?

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাকে এই বিষয়ে সংস্থাটির প্রধান রাফায়েল গ্রসি বলেন, “আপনারা ওই বর্জ্য সমুদ্রে ফেলতে পারেন। তবে এজেন্সির কর্মীদের তত্ত্বাবধানে থেকেই এই কাজ করতে হবে।” অর্থাৎ জাপান সরকার সংস্থার কর্মকর্তাদের সামনেই ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে নির্গত পারমাণবিক বর্জ্য সমুদ্রে ফেলতে পারবে, যাতে তারা দেখতে পারে, ঠিক কী ধরনের পারমাণবিক বর্জ্য সমুদ্রে ফেলা হচ্ছে।

কতটা প্রভাব পড়তে চলেছে?

এই তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের প্রভাব 30-40 বছর স্থায়ী হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাপান সরকারের মতে, তারা প্রচুর তেজস্ক্রিয় জল বর্তমানে প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলতে চায়। এই ‘প্রচুর’ পরিমাণটা ঠিক কত? জাপান সরকার যে হিসেব দিয়েছে, তা সহজে বললে ব্যাপারটা দাঁড়ায় অনেকটা এ রকম: মোট 500টি অলিম্পিক সুইমিং পুলে মোট যত পরিমাণ জল থাকে, সেই পরিমাণ জলই তেজস্ক্রিয় বর্জ্য হিসেবে সঞ্চিত রয়েছে জাপানের সরকারের কাছে। এই এত পরিমাণ জল তারা ফেলতে চাইছে সমুদ্রে। এ ছাড়া তার সঙ্গে রয়েছে কঠিন পারমাণবিক বর্জ্যও। সেটাও ফেলে দেওয়া হবে জলে। তারপরেও কীভাবে তার প্রভাবকে ‘যৎসামান্য’ বলে উপেক্ষা করা হচ্ছে?

কিন্তু এমন সিদ্ধান্ত কেন নিল জাপান?

জাপানে একটি নিয়ম আছে, যে কোনও নতুন কাজ করার আগে সেখানকার জনগণের থেকে পরামর্শ নেওয়া হয়। ফলে জাপান সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সেখানকার জনগণ সমর্থন জানায়নি। তারপরেই তারা রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা তেজস্ক্রিয় জল নিয়ে অনেকদিন ধরে গবেষণা করে। তারপরেই তারা এই সিদ্ধান্তে আসে যে, এতে প্রশান্ত মহাসাগরের জীববৈচিত্রে বা সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের তেমন কোনও ক্ষতি হবে না।

পরিবেশবিদরা এই ব্যাপারে কী জানাচ্ছেন?

এই কাজ সম্পর্কে পরিবেশবিদরা একটি মডেল তৈরি করে, তার উপর গবেষণা করেছেন। আর সেই গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে একেবারেই উল্টো তথ্য। তাদের মতে, যে কোনও তেজস্ক্রিয় জল সমগ্র প্রশান্ত মহাসাগরে ছড়িয়ে পড়তে 1200 দিন সময় লাগে। তাহলে এই পরিমাণ তেজস্ক্রিয় জল যদি মহাসাগরে মেশে, তবে তা উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে খুব কম সময় নেবে। আর 3600 দিনের শেষে, তেজস্ক্রিয় জলে উপস্থিত দূষকগুলি পুরো প্রশান্ত মহাসাগরকে ঢেকে ফেলবে। তাই পরিবেশবিদদের মতে, যেখানে বর্তমানে পৃথিবীর ভয়ানক অবস্থার কথা ভেবে একটুও জল দূষিত করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, সেখানে জাপান সরকার এমন অনুমতি পেল কীভাবে? আর কীভাবেই বা বলা হচ্ছে যে এই পরিমাণ তেজস্ক্রিয় জল ছড়িয়ে পড়ার পরেও তেমন কোনও বড় সমস্যা দেখা দেবে না? প্রশ্নচিহ্ন কিন্তু থেকেই গেল।