তরোয়ালের মতো বাঁকা, তীক্ষ্ণ-লম্বা শ্বদন্ত থাকলেই সব প্রাণী শিকারি হয় না, জানান দিচ্ছে জীবাশ্ম
আধুনিক যুগে অনেক প্যালিওনটোলজিস্ট প্রাচীন যুগের saber-toothed-দের নিয়ে গবেষণা করেছেন। বিভিন্ন ফসিল বা জীবাশ্ম খতিয়ে দেখেছেন। তারপরই এই নির্ণয়ে এসে উপনীত হয়েছেন যে প্রাচীনকালে তরোয়ালের মতো বাঁকানো সাংঘাতিক ধারালো শ্বদন্ত থাকলেও সব প্রাণীই শিকারি বা মাংসাশী ছিল না।
বর্তমানে যেসব জীবজন্তুর শ্বদন্ত বা ক্যানাইন রয়েছে, তারা ঠিক কতটা ভয়ঙ্কর সে ব্যাপারে আন্দাজ রয়েছে প্রায় সকলেরই। তবে ক্যানাইন-সহ জীবরা কেবল এখন নয়, প্রাচীন যুগেও ছিল ত্রাস। তার অন্যতম উদাহরণ স্মিলোডন (Smilodon)। এই Smilodon শব্দের অর্থ হল এমন এক জোড়া দাঁত যা আক্ষরিক অর্থে ছুরির মতো ধারালো। প্লিসটোসিন যুগে উত্তর আমেরিকার তৃণভূমিতে হদিশ পাওয়া গিয়েছিল এই Smilodon-দের। দেখতে অনেকটা বাঘের মতো এই প্রাণী আসলে ‘বিগ ক্যাট’ প্রজাতির। তবে বাঘ-সিংহের থেকে অনেক গুণ বেশি হিংস্র।
মূলত শিকারকে ফালাফালা করে রক্তাক্ত করে দিতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় লাগত এই Smilodon-দের। সাত ইঞ্চি লম্বা শ্বদন্ত দিয়ে শিকার ছিঁড়ে ফেলার আগে এরা শিকারকে ধরে মাটিতে আছড়ে ফেলত। ভয়াবহ হিংস্রতার নিদর্শন হিসেবে প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে এই Smilodon-দের নাম। এদেরকে saber-toothed প্রাণীও বলা হয়ে থাকে। এই স্তন্যপায়ী প্রাণীরা বিলুপ্ত হয়ে গেলেও তাদের বাঁকানো তরোয়ালের মতো দাঁত এবং ক্ষুরধার শিকারি আচরণের জন্য আজও তাদের কথা উঠে আসে বিভিন্ন প্রসঙ্গে।
Vanderbilt University-র প্যালিওনটোলজিস্ট লারিস ডিস্যান্টিস জানিয়েছেন, শিকারকে খুব তাড়াতাড়ি রক্তাক্ত এবং ক্ষতবিক্ষত করে ফেলায় পারদর্শী ছিল saber-toothed Smilodon-রা। তবে আজ থেকে ১২ হাজার বছর আগে তুষার যুগের শেষ পর্যায়ে এদের দেখা গিয়েছিল। মূলত আমেরিকান উট এবং ঘোড়া ছিল এই প্রাণীদের আসল নিশানা। বড়সড় আকারের প্রাণীদের অনায়াসে শিকার করে ফেলতে saber-toothed Smilodon-রা।
তবে Smilodon-দের মতোই ধারালো শ্বদন্ত থাকলেও হিংস্র শিকারি ছিল না Thylacosmilus-রা। মূলত, মায়োসিন যুগের শেষ এবং প্লিওসিন যুগের শুরুর সময়ে দক্ষিণ আমেরিকায় এই saber-toothed মেটাথেরিয়ান স্তন্যপায়ীদের দেখা পাওয়া গিয়েছিল। সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, Thylacosmilus-দের মধ্যে সেভাবে শিকারি সত্তাই ছিল না। বরং এরা অন্যের শিকার করে মেরে ফেলা প্রাণী খেতেই বেশি পছন্দ করত। আর নিজেদের তীক্ষ্ণ এবং ধারালো শ্বদন্ত ব্যবহার করত ওই মৃত প্রাণীর দেহ খুবলে-ছিঁড়ে খাওয়ার জন্য।
লারিস ডিস্যান্টিস জানিয়েছেন, Thylacosmilus-দের ইকোলজি বর্তমানের সমস্ত পশুপাখিদের থেকে একেবারেই আলাদা ছিল। এই Thylacosmilus-রাও আসলে মাংসাশী। কিন্তু অন্য কোনও প্রাণী যে শিকার করে সেটা খেতেই এরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। বিশেষ করে মৃত প্রাণীর দেহের নরম অঙ্গপ্রত্যঙ্গই ছিল এদের পছন্দের খাবার।
বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গবেষণার পর এও জানিয়েছেন যে, কেবল মাংসাশী নয়, তৃণভোজী অনেক প্রাণীর ক্ষেত্রেও এ ধরণের লম্বা-ধারালো ক্যানাইন দেখা গিয়েছে প্রাচীনকালে। তবে তারা সেই দাঁত ব্যবহার করেছিল প্রতিরক্ষার কাজে। অর্থাৎ শত্রুর সামনে ওই ভীষণদর্শন দাঁত দেখালে তারা ভয়ে চম্পট দিত। এর জেরে ওই তৃণভোজী প্রাণীরা নিরাপদে থাকতে পারত। Des Moines University-র প্যালিওনটোলজিস্ট Julie Meachen জানিয়েছেন, কেবল শিকার করা বা মাংস খাওয়া নয়, বিভিন্ন সময়ে আরও অনেক কাজেই নিজেদের saber-tooth ব্যবহার করেছে জীবজন্তুরা।
saber-tooth থাকার পরও যারা Smilodon-দের থেকে আলাদা ছিল-
আধুনিক যুগে অনেক প্যালিওনটোলজিস্ট প্রাচীন যুগের saber-toothed-দের নিয়ে গবেষণা করেছেন। বিভিন্ন ফসিল বা জীবাশ্ম খতিয়ে দেখেছেন। তারপরই এই নির্ণয়ে এসে উপনীত হয়েছেন যে প্রাচীনকালে তরোয়ালের মতো বাঁকানো সাংঘাতিক ধারালো শ্বদন্ত থাকলেও সব প্রাণীই শিকারি বা মাংসাশী ছিল না।
১। পার্মিয়ান যুগে অর্থাৎ ২৫৭ থেকে ২৭০ মিলিয়ন বছর আগে কুকুরের মতো এক ধরণের মাংসাশী প্রাণী ছিল, যাকদের gorgonopsians বলা হতো। Smilodon-এর মতো এদেরও লম্বা-ধারালো দাঁত ছিল। এই gorgonopsians-দের ওজন ছিল পূর্ণবয়স্ক পোলার বিয়ার বা শ্বেত ভাল্লুকের সমান। নিজেদের শিকারের সমস্ত আস্তানা খুঁজে বের করে সেখানে থেকে শিকার টেনে বের করার ক্ষেত্রে নিজেদের শ্বদন্ত ব্যবহার করত এই প্রাণীরা।
২। ৫৬ মিলিয়ন বছর আগে হদিশ পাওয়া গিয়েছিল গন্ডারের মতো দেখতে এক স্তন্যপায়ী প্রাণীর। মাথায় ছিল ছ’টা শিং। এদেরও saber-tooth ছিল। তবে দলগত প্রতিযোগিতা এবং নিরাপত্তা ছাড়া অন্য কাজে এরাও দাঁত ব্যবহার করত না।
৩। আবার আছে তৃণভোজী Tiarajudens জাতীয় প্রাণীরাও। নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার জন্য নিজেদের লম্বা দাঁত ব্যবহার করত এরা। তবে প্রাচীন যুগের সবচেয়ে চর্চিত ডায়নোসরাসদের কখনই এ জাতীয় কোনও দাঁত ছিল না।