Dilip Ghosh: ‘যত ভাঁওতাবাজি, স্বাস্থ্যসাথীর নামে মানুষকে বোকা বানানোর ভবিষ্যত্ কী?’
Swastha Sathi: স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত স্বাস্থ্যসাথী পরিষেবাকে কেন্দ্র করে গত দেড়মাসে ১০ টি হাসপাতাল থেকে অভিযোগ এসেছে।
আলিপুরদুয়ার: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ‘স্বপ্নের প্রকল্প’ স্বাস্থ্যসাথী নানা অভিযোগের জেরে এখন বিতর্কের কেন্দ্রে। গত কয়েক মাসে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে আগামী ৩ নভেম্বর শুধু স্বাস্থ্য়সাথী নিয়েই স্বাস্থ্য কমিশনের বিশেষ শুনানিও রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, ফের একবার এই সরকারি প্রকল্পকে কেন্দ্র করে মুখ্যমন্ত্রীকে তোপ দাগলেন বিজেপির সর্বভারতীয়-সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)।
স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে ‘দুর্নীতি’র প্রসঙ্গে দিলীপ বলেন, “সব ভাঁওতাবাজি। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের নামে মানুষকে যে বোকা বানানো হয়েছে, সেসব এখন ধরা পড়ছে। এর ভবিষ্যত্ কী হবে? কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করেছে সরকার। হাসপাতালগুলো বিনামূল্যে চিকিত্সা করিয়েছে। তারপর সরকারের থেকে আর একটা টাকাও পায়নি। এভাবে চললে তো হাসপাতালগুলো বন্ধই হয়ে যাবে। তাই ওরা রোগী ফিরিয়ে দিচ্ছে।” এখানেই না থেমে বর্ষীয়ান বিজেপি নেতার আরও মন্তব্য, “এদেরতো নিজেদের সরকারি কর্মীকে পুষতে গিয়েই টাকা শেষ। তারপর ক্লাবকে দিতে গিয়ে, দুর্গাপুজোয় লুটের পর লুট হয়ে যাচ্ছে।”
এদিকে সোমবারই শিলিগুড়িতে প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শুনেছি, বহু বেসরকারি হাসপাতাল স্বাস্থ্য সাথী কার্য নিচ্ছে না। এমনটা হলে আগে চিহ্নিত করুন। দ্রুত তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে হবে। দরকার হলে আমি তাদের লাইসেন্স বাতিল করব।”
স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত স্বাস্থ্যসাথী পরিষেবাকে কেন্দ্র করে গত দেড়মাসে ১০ টি হাসপাতাল থেকে অভিযোগ এসেছে। কিন্তু, সেই হাসপাতালগুলির নাম প্রকাশ্যে বলতে অস্বীকার করেছেন কমিশন আধিকারিক। আগামী ৩ নভেম্বর শুধু স্বাস্থ্যসাথী সংক্রান্ত সমস্যারি শুনানি হবে। সেইমতো হাসপাতালগুলিকে নোটিসও পাঠানো হয়েছে।
ইতিমধ্যেই হাওড়ার একটি হাসপাতাল সরাসরি আদালতে অভিযোগ জানিয়েছে, যে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের পরিষেবা আর হাসপাতালে নিয়োগ করা সম্ভবপর নয়। কারণ, স্বাস্থ্যসাথীর বকেয়া টাকা আর পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু ওই হাসপাতালই নয়, আরও একাধিক হাসপাতালেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠে এসেছে।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন আবহে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প (Swastha Sathi) ঘোষণার পর পরেই একাধিক হাসপাতাল ‘বেঁকে’ বসেছিল। ৫ লক্ষ টাকার জীবনবিমা-সহ বিনামূল্যে চিকিত্সা পরিষেবা দিতে অপারগ ছিল অধিকাংশ হাসপাতালই। দফায় দফায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষদের সঙ্গে বৈঠকেও বসে প্রশাসন। খোদ মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দেন স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে রোগীকে ফেরানো হলে বাতিল হতে পারে লাইসেন্স। কিন্তু, তারপরেও একাধিক বার স্বাস্থ্য়সাথী নিয়ে দুর্নীতির ছবি সামনে এসেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতি, স্বাস্থ্যসাথী সমিতির তরফে দু’টি অ্যাডভাইজারি জারি করা হয়েছে। একটি মূলত বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমগুলির জন্য। দ্বিতীয় অ্যাডভাইজারিটি সরকারি হাসপাতালের জন্য। প্রথম যে অ্যাডভাইজারি তাতে বলা হয়েছে, ১৯০০-এর বেশি ‘স্পেসিফায়েড প্যাকেজ’ রয়েছে। অর্থাৎ যে রোগই হোক না কেন স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় এরকম ১৯০০ প্যাকেজ রয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য সমিতি সেলের পর্যবেক্ষণ, প্যাকেজ বহির্ভূত টাকা নিয়ে রোগীর চিকিৎসা করছে একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল। প্যাকেজ বহির্ভূত এই খরচ নিয়েই অ্যাডভাইজারিতে বার্তা দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতরের তরফে বলা হয়েছে, ১৯০০-এর বেশি প্যাকেজ আছে। রোগীর যে রোগই হোক না কেন, তা কোনও না কোনও প্যাকেজের আওতায় অনায়াসে চলে আসে। যদি এমার্জেন্সি হয়, সে ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মেডিসিন ও সার্জারিতে প্যাকেজ বহির্ভূত বিল করা যাবে। বিপুল সংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্যসাথীর আওতায়। সরকার মানুষের সুবিধার জন্যই এই প্রকল্প চালু করেছে। এদিকে যদি ‘আনস্পেসিফায়েড প্যাকেজ’-এও রাশ টানা দরকার বলে মনে করছে স্বাস্থ্যসাথী সমিতি।
এর আগে রাজ্যবাসীর স্বাস্থ্যবীমার জন্য যে প্রকল্প সরকার নিয়ে এসেছিল, তা নানাভাবে শিরোনামে উঠে এসেছে। কখনও ইতিবাচক কারণে। তবে অবশ্যই রোগী প্রত্যাখানের জেরে বেশিরভাগ সময় নেতিবাচক কারণে।তবে এই প্রকল্পে বিরাট টাকার গরমিলের অভিযোগে জনস্বার্থ মামলা (PIL) দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে।
প্রসঙ্গত, গত মার্চ মাসেই স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে প্রায় ২০০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগে একটি জনস্বার্থ মামলায় দায়ের করার অনুমতি দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। গোটা ঘটনায় ক্যাগ তদন্তের দাবি করেছেন আবেদনকারী অজিত কুমার প্রসাদ। তাঁর দাবি, গরমিল হয়েছে ১৮৮ কোটি টাকার।
রাজ্যের ২৩ টি জেলার একাধিক জেলায় খোঁজখবর নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে, গড়ে ১০০ জন আবেদনকারীর মধ্যে ৯০ জনই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পাননি। যারা কার্ড পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ আবার পরিষেবা পাচ্ছেন না। আবেদনকারীর দাবি, প্রত্যেক মাসে যে বিপুল সংখ্যক চিকিৎসা হচ্ছে তার মধ্যে রোগীর সংখ্যা ও তাঁদের পিছনে কত খরচ হচ্ছে তার ভুল হিসেব দেওয়া হচ্ছে। সেই কারণেই গোটা বিষয়টি নিয়ে ক্যাগের তদন্ত দাবি করা হয়েছিল। স্বাস্থ্যসাথী থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন সময়ে বেনিয়মের ছবি উঠে এসেছে। এ বার, সেই বেনিয়ম নিয়েই রাজ্যকে তোপ বিজেপি নেতার।
আরও পড়ুন: BJP: নির্বাচনী আবহে আক্রান্ত হয়েছিলেন, অবশেষে দল ছাড়তে চললেন বাবু মাস্টার