TMC: পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলে ভাঙন! বিট অফিসার সহ বিজেপিতে যোগ প্রায় ২৫০ জনের

বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দীপক বর্মন বলেন, "আজকের যোগদান কর্মসূচিতে অনেক পঞ্চায়েত যোগদানের কথা ছিল। কিন্তু সেই বিষয়টি আগে থেকে আঁচ করতে পেরে তৃণমূল নেতৃত্ব তাদেরকে হাইজ্যাক করে তাদের কে রিসর্টে রেখেছে।"

TMC: পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলে ভাঙন! বিট অফিসার সহ বিজেপিতে যোগ প্রায় ২৫০ জনের
বিজেপিতে যোগদান প্রায় দুই শতাধিক তৃণমূল সমর্থকের।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 06, 2022 | 9:13 PM

জলপাইগুড়ি: তাসের ঘরের মতোই যেন বানারহাটে ভেঙে পড়ছে তৃণমূল! গত ৭২ ঘণ্টায় প্রায় পাঁচ শতাধিক কর্মী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি ও সিপিএম এ যোগদান করল। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এভাবে দলীয় কর্মীদের দলবদলে শাসকদল যে রীতিমত চাপে পড়েছে, তা বলা বাহুল্য। বানারহাট ব্লকের অন্তর্গত নাথুয়া এলাকায় পঞ্চায়েত প্রধানের পর মঙ্গলবার বিজেপির ঝান্ডা হাতে নিয়ে প্রকাশ্য জনসভায় যোগ দিলেন বন দফতরের এক বিট অফিসার সহ দুই শতাধিক তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ।

এদিন নাথুয়া এলাকার বিট অফিসার সহ দুই শতাধিক তৃণমূল কর্মী সমর্থক বিজেপির দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে বিজেপি তে যোগদান করেছে বলে দাবি করেছে বিজেপি নেতৃত্বরা। এই ঘটনায় তৃণমূলের তরফে বানাহাট সাংগঠনিক ব্লকের নমঃশূদ্র ও মতুয়া এবং উদ্বাস্তু সেলের ব্লক সভাপতি শ্যামচাঁদ সরকার কার্যত হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, “একজন সরকারি কর্মচারী কোনভাবেই কোনও দলের ঝান্ডা ধরতে পারেন না। তিনি ব্যক্তিগত দিক থেকে যে কোনও রাজনৈতিক দলকে ভোট দিতে পারেন। তবে প্রকাশ্যে রাজনীতির বিষয়টা দলীয়ভাবে আমরা দেখব।” তবে তিনি যা-ই দেখুন এই ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের।

যদিও বিজেপির জেলা সভাপতি বাপী গোস্বামী বলেন, ‘বিজেপি তো কোন পাকিস্থানের জঙ্গী সংগঠন না। সরকারি কর্মচারী আসতেই পারেন আমাদের দলে।’ প্রায় ৪০০ জন লোক এদিন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন বাপী গোস্বামীর। অন্যদিকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি মহুয়া গোপ বলেন,‘সরকারি কর্মচারীদের প্রকাশ্যে কোনদিন দল করতে আমি দেখি নি। উনি চাকরি করতে না পারলে বিজেপি তেই নেতৃত্ব দিক।’ সবমিলিয়ে, বিট অফিসারের বিজেপিতে যোগদান নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে ডুয়ার্সে। তবে কি এবারে বিজেপির নজর বন দফতরের দিকে? এমন প্রশ্নও উঠছে।

উল্লেখ্য, রবিবার দুপুরে সাঁকোয়াঝোড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের গয়েরকাটার প্রধানপাড়া এলাকায় শতাধিক কর্মীর তৃণমূল ছেড়ে সিপিআই (এম)- এ যোগদান করেন বলে বামেদের দাবি। এরপর সোমবার সকালে জলপাইগুড়ি গিয়ে শালবারি -২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, এক তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য সহ একঝাঁক তৃণমূল কর্মীর বিজেপিতে যোগদান বলে গেরুয়া শিবিরের দাবি। তার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না ফের নাথুয়া এলাকায় এক বিট অফিসার সহ দুই শতাধিক তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের ঘাসফুল ছাড়ার হিড়িক লক্ষ্য করা গেল। তাঁদের হাতে হাতে পদ্ম-পতাকা তুলে দেন বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দীপক বর্মন এবং জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী।

স্বাভাবিকভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূল যে ডুয়ার্সে মাটি হারাচ্ছে সেটা গত তিনদিন ধরে বিজেপিতে যোগদান অনুষ্ঠানের ছবি থেকেই স্পষ্ট। যদিও এবিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ শাসকদলের নেতারা। তবে আরও অনেকে দলবদলের তালিকায় রয়েছে জানিয়ে বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দীপক বর্মন বলেন, “আজকের যোগদান কর্মসূচিতে অনেক পঞ্চায়েত যোগদানের কথা ছিল। কিন্তু সেই বিষয়টি আগে থেকে আঁচ করতে পেরে তৃণমূল নেতৃত্ব তাদেরকে হাইজ্যাক করে তাদের কে রিসর্টে রেখেছে। তৃণমূল তো এখন রিসর্ট পলিটিক্স করে।”

এদিন একদিকে যখন দলে-দলে বহু মানুষ বিজেপিতে যোগ দিলেন, তখন মালবাজার এলাকায় তৃণমূলের শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা সভাপতি রাজেশ লাকরার কুশপুতুল পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখায় আদিবাসী সংগঠন। পাল্টা তৃণমূল কাউন্সিলরদের ‘বিজেপির চর’ বলে আখ্যা দেন শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা সভাপতি। সবমিলিয়ে, গোষ্ঠী কোন্দল সামাল দিতে যখন হিমশিম খাচ্ছে জেলা নেতৃত্ব, তখন অন্যদিকে তৃণমূলের ঘর ‘তাসের ঘরের’ মতো ভেঙে পড়ছে বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের।