একুশের আগেই সরকারি ছুটির তালিকায় জুড়ল বিরসা মুন্ডার জন্মদিন!
মমতা বলেন, "রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে রাজ্যে ছুটি রয়েছে, নেতাজীর জন্মদিনে ছুটি রয়েছে, আম্বেদকরের জন্মদিনে রয়েছে, গুরু নানকের জন্মদিনে ছুটি হয়, ইদের ছুটি হয়, করণ পুজোর ছুটি হয়, দুর্গা পুজোয় ছুটি থাকে, এবার থেকে বিরসা মুন্ডার জন্মদিনেও রাজ্যে থাকবে সরকারি ছুটি ৷"
TV9 বাংলা ডিজিটাল: আদিবাসী শিকারির মূর্তিকে বিরসা মুন্ডার মূর্তি বলে বিজেপি নেতাদের একাংশ দাবি করেছেন! এমনই অভিযোগ তুলে যেখানে প্রতিবাদ মিছিল করছেন আদিবাসী মানুষরা, সেই বাঁকুড়াতে (Bankura) দাঁড়িয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) ঘোষণা করলেন, এবার থেকে সরকারি ছুটির তালিকায় থাকবে বিরসা মুণ্ডার জন্মদিন (Birsa Munda’s Birthday)।
বাঁকুড়ার সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা, আগামী বছরের সরকারি ছুটির তালিকায় যুক্ত হবে ১৫ নভেম্বর বিরসা মুন্ডার জন্মদিন ৷ সাঁওতাল বিদ্রোহের নায়ক বিরসা মুন্ডার (Birsa Munda’s Birthday) সম্মানেই তাঁর এই উদ্যোগ৷
রাজনৈতিক মহলের অভিমত, বাঁকুড়া সহ আশপাশের পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেশ কয়েকটি বিধানসভায় আদিবাসী ভোট ব্যাঙ্কই নির্নায়ক ভূমিকা নেবে। আর পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ আসলে সেকথাই মাথায় রাখছেন। ইতিমধ্যেই মূর্তি বিতর্কে বিজেপি এখন চরম অস্বস্তিতে। গত ৫ নভেম্বর বঙ্গ সফরে এসে বাঁকুড়া যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বাঁকুড়া শহর লাগোয়া পোয়াবাগান এলাকায় বাঁকুড়া-পুরুলিয়া ৬০ এ জাতীয় সড়কের পাশে একটি আদিবাসী পুরুষ মূর্তিকে বিরসা মুন্ডার মূর্তি বলে দাবি করে সেখানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা বিজেপি। আর তাতেই বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো। স্বাভাবিকভাবেই এই ‘পয়েন্ট’কেই আরও বেশি ‘প্রচার’এ আনতে কোনও কসুরই করেনি শাসকদল।
শুরু হয় ‘শুদ্ধিকরণ’ রাজনীতি। শাহ জেলা ছাড়ার পরের দিনই জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের উপস্থিতিতে দুধ-গঙ্গাজলে ওই মূর্তির পাদদেশ ‘শুদ্ধকরণ’ করা হয়। সপ্তাহ খানেক আগে কিছু আদিবাসী মানুষজন জড়ো হয়ে মূর্তিটি বিরসা মুন্ডার বলে দাবি করে গোবর-জল দিয়ে ‘শুদ্ধকরণ’ করেন। জেলা তৃণমূলের পক্ষ থেকে পোয়াবাগানে বিরসা মুন্ডার বড় মূর্তি তৈরির কথা ঘোষণা করা হয়।
এরপর ময়দানে নেত্রী। সোমবার ছিল তাঁর বাঁকুড়া সফর। এখানের মাটিতে দাঁড়িয়েই তিনি বলেন, “রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে রাজ্যে ছুটি রয়েছে, নেতাজীর জন্মদিনে ছুটি রয়েছে, আম্বেদকরের জন্মদিনে রয়েছে, গুরু নানকের জন্মদিনে ছুটি হয়, ইদের ছুটি হয়, করণ পুজোর ছুটি হয়, দুর্গা পুজোয় ছুটি থাকে, এবার থেকে বিরসা মুন্ডার জন্মদিনেও (Birsa Munda’s Birthday) রাজ্যে থাকবে সরকারি ছুটি ৷” ঘোষণামাত্রই করতালির বন্যা বয়, ওঠে জ্বয়ধ্বনি।
বস্তুত একুশের আগে এখন আদিবাসী এই নেতাকে নিয়ে উত্তপ্ত বঙ্গ রাজনীতি। পরিসংখ্যান বলছে, গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল খুব একটা ভালো ফল করেনি। এরপরই নেত্রী একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামে মানুষের অন্দরমহলে ঢুকে যেতে চেষ্টা করেন।
শুরু হয় জঙ্গলমহলে গ্রামপঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কাটাছেঁড়া। তৃণমূলের ভোট স্ট্র্যাটেজিস্টের পরামর্শ মেনে চলতে থাকেন প্রতি পদক্ষেপে। শুরু হয় ‘দিদিকে বলো কর্মসূচি’। জঙ্গলমহল-সহ গোটা গ্রাম বাংলায় এই কর্মসূচির ব্যাপক সাড়া মেলে। লোকসভার ভোটের ফলই বলেছে, বাংলার তপশিলি সম্প্রদায়ভুক্ত এলাকাগুলিতে বেশি ভালো ফল করেছে বিজেপি। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরে পঞ্চায়েতে ভাল ফল করে বিজেপি। সেখানে অবশ্য অনেকে মুকুল রায় ও ভারতী ঘোষের তৃণমূল-দূরত্বের বিষয়টিই তুলে ধরতে চেয়েছেন। অনেকেরই মতে, জঙ্গলের রাশ ছিল এই দু’জন মানুষের ওপর। মুকুল রায় দল ছাড়ার পর ভারতী ঘোষের অপসারিত হওয়ার বিষযটিও জঙ্গলমহলে তৃণমূলের মুথ থুবড়ে পড়ার কারণ হিসাবে দেখিয়েছেন অনেকে।
জঙ্গলমহল হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে এমনিতেই ত্রস্ত ঘাসফুল শিবির। সেক্ষেত্রে বিজেপির এক ‘ভুল চাল’ই যে তাঁদের ঘরে একশো পয়েন্ট এই পরিস্থিতিতে এনে দিতে পারে, তা ভালোভাবেই বোঝেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা দখলে অন্য রণনীতি সাজিয়েছে বিজেপি। তাকে টপকে মমতা প্রশাসনের ‘সরকারি ছুটি রাজনীতি’আদিবাসীদের মন নরম করার যে একটা প্রয়াস, তা ভালোভাবেই বুঝছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন: কিষাণজীর মৃত্যুবার্ষিকীর আগেই বীরভূমে উদ্ধার মাওবাদী পোস্টার
মমতা কটাক্ষ করছেন শাহ-র মধ্যাহ্নভোজ রাজনীতিকে আর মোদী সেনাপতির কটাক্ষে মমতা প্রশাসনের মানুষের মন গলাতে ছুটি-রাজনীতির বিষয়টি। অর্থাত্ আদিবাসীরা ঠিক কার দিকে ঝোঁকেন, এখন সেটা জরিপ করতেই ব্যস্ত রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।