হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ফের ১১ দিনের ‘শ্রীঘর-যাত্রা’ প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদের

Bishnupur Tender Case: রবিবার, আদালতে সওয়াল জবাবের পর আদালত রাজ্য়ের প্রাক্তন মন্ত্রীকে ১১ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জারি থাকবে এই নির্দেশ বলে জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়।

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ফের ১১ দিনের 'শ্রীঘর-যাত্রা' প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদের
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 29, 2021 | 6:28 PM

বাঁকুড়া: তরতর করে এগিয়ে চলেছে শ্যাম-কাণ্ড। শনিবারই বুকে ব্যথা নিয়ে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর রবিবার রাজ্য়ের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে (Shyamaprasad Mukherjee) আদালতে তোলা হয়। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে এদিন, তিনি যান বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে।

রবিবার, আদালতে সওয়াল জবাবের পর আদালত রাজ্য়ের প্রাক্তন মন্ত্রীকে ১১ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জারি থাকবে এই নির্দেশ বলে জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। সরকারি আইনজীবীর কথায়, “শ্যামাপ্রসাদবাবুর থেকে একাধিক নথি ও তথ্য পাওয়া গিয়েছে। আরও এভিডেন্স আসছে। তদন্ত চলছে। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (Shyamaprasad Mukherjee) একা নন, তিনি ও তাঁর একাধিক সহকারী এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত।”

গতকালই, বিষ্ণুপুর টেণ্ডার দুর্নীতি-কাণ্ডে শ্যামাপ্রসাদ ঘনিষ্ঠ রামশঙ্কর মহন্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রামশঙ্করের বাড়ি থেকে ১৯ লক্ষ টাকা-সহ চারটি জমির দলিল এবং স্থানীয় পোস্ট অফিসে শ্যামাপ্রসাদের নামে আটটি সেভিংস অ্যাকাউন্টের পাশবইও হাতে এসেছে তদন্তকারীদের। শ্যামাপ্রসাদের টাকা রামশঙ্করের মাধ্যমেই বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ত। প্রাক্তন মন্ত্রীর জমি কেনাবেচা ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত সব কিছুই দেখতেন রামশঙ্কর অনুমান গোয়েন্দাদের।

শনিবার, আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রাক্তন মন্ত্রী। তাঁকে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে আনা হয়। সেখানেই মেল মেডিসিন ওয়ার্ডে  চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রৌঢ় প্রাক্তন মন্ত্রী বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর হার্টের অবস্থা বিশেষ ভাল নয় বলেই জানিয়েছেন চিকিত্‍সকেরা। প্রাক্তন মন্ত্রীর চিকিত্‍সার দায়িত্বপ্রাপ্ত হাসপাতাল সুপার চিকিত্‍সক মহেন্দ্র নাথ মাণ্ডি বলেন, “বুকে ব্যথার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন শ্যামবাবু। পূর্বেই তিনি উচ্চ রক্তচাপ ও মুধমেহ রোগে ভুগছিলেন। মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপের জন্যই মূলত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।” যদিও, রবিবার সকালেই ছাড়া পেয়ে যান প্রাক্তন মন্ত্রী। এর আগে, শ্যামাপ্রসাদকে ১০ দিনের জন্য নিজ হেফাজতে রাখতে চেয়েছিল পুলিশ। সেই সময়সীমা পেরোতেই ফের এদিন তাঁকে আদালতে পেশ করা হয়। তারপরেই শ্যামাপ্রসাদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।

ইতিমধ্যেই,  তদন্তে নেমে শ্যামাপ্রসাদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে মোট ৬টি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে পুলিশ। পাশাপাশি শ্যামাপ্রসাদের নামে একাধিক জমির হদিশও পেয়েছেন তদন্তকারীরা। একাধিক পেট্রোল পাম্পের মালিক হিসাবেও উঠে এসেছে প্রাক্তন মন্ত্রীর নাম। তদন্তকারীরা বলছেন, এই মামলার জট অত্যন্ত গভীরে। জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও তাঁর পরিবারের অ্যাকাউন্টের নথি খতিয়ে দেখে দেখা গিয়েছে, অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। আর্থিক লেনদেনের হিসাব পাওয়া যায়নি। এছা়ডা অনেক জমি ও পেট্রোল পাম্পেরও মালিকানার হদিশ মিলেছে। সব কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাঁর আর্থিক লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও বিষ্ণপুর পুরসভার প্রাক্তন ওভারশেয়ার দিলীপ গড়াইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। টেন্ডার দুর্নীতিতে  তাঁর সক্রিয় যোগ রয়েছে বলে দাবি পুলিশের।

প্রায় তিন দশক ধরে মল্লগড় বিষ্ণুপুরে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ‘মুকুটহীন সম্রাট’ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। স্থানীয়দের কাছে তিনি ‘কত্তাবাবু’ নামেই পরিচিত। গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে বিষ্ণুপুর পুরসভা চলত তাঁরই অঙ্গুলিহেলনে। ২০০৯ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন শ্য়ামাপ্রসাদ। ২০১১ সালে বিষ্ণুপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী হলে শ্যামাপ্রসাদের ক্ষমতা আরও বাড়ে। কিছুদিনের জন্য জেলাসভাপতির দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। ২০১৬ সাল থেকে রাজ্যের বস্ত্র ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। মন্ত্রী থাকতেই চিটফাণ্ড কেলেঙ্কারিতে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে নোটিস দিয়েছিল ইডি। তারপরেই ধীরে ধীরে ‘নিজ গড়ে’ ক্ষমতা হারাতে শুরু করেন ‘কত্তাবাবু’। সম্প্রতি তাঁকে ১০ কোটি টাকার বিষ্ণুপুর টেণ্ডার দুর্নীতিতে গ্রেফতার করে পুলিশ। আরও পড়ুন: ‘ত্রাণসামগ্রী যাচ্ছে কাউন্সিলরদেরই ঘরে’, অকপটে স্বীকার খোদ প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়কের