লকডাউনকে ‘থোড়াই কেয়ার’! ‘হিরোগিরি বন্ধ করুন’, কোথাও ধমক দিলেন বিধায়ক, কোথাও চলল পুলিশি অভিযান

গত রবিবার, সকাল ৬টা থেকে ৩০ মে সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজ্যে ১৫ দিনের জন্য জারি হয় পূর্ণ লকডাউন। করোনা মোকাবিলায় আগেই রাজ্যের তরফে বেশ কিছু বিধি নিষেধ জারি করা হয়েছিল। সেই বিধি নিষেধ সংশোধন করে আরও কঠোর করা হয় শনিবার।

লকডাউনকে 'থোড়াই কেয়ার'! 'হিরোগিরি বন্ধ করুন', কোথাও ধমক দিলেন বিধায়ক, কোথাও চলল পুলিশি অভিযান
ছবির বঁদিকে, দোকানের শাটার নামানোর কাজে বিধায়ক, ডানদিকে, বাজারে পুলিশি টহলদারি; নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: May 18, 2021 | 3:22 PM

পশ্চিমবঙ্গ: হু হু করে বাড়ছে করোনার (Corona) গ্রাফ। রাজ্যজুড়ে আগামী ৩০ মে পর্যন্ত জারি হয়েছে পূর্ণ লকডাউন। বেঁধে দেওয়া হয়েছে বাজার-দোকানের সময়। কিন্তু তারপরেও এতটুকু বাড়েনি সচেতনতা। বিক্ষিপ্তভাবে উঠে এল সেই অসাবধানতার ছবি।

হুগলি:

লকডাউনের তৃতীয় দিনের বিধিভঙ্গের ছবি চূঁচুড়ায়। মাস্ক না পড়েই চলছে দোকানদারি। লকডাউনের বিধিনিষেধ ঠিকঠাক পালিত হচ্ছে কিনা তা দেখতেই পথে নেমেছিলেন চূঁচূড়ার তৃণমূল বিধায়ক (TMC MLA) অসিত মজুমদার। এদিন, কার্যত দেখা গেল, মাস্ক না পড়েই অনেকে দোকান খোলা রেখেছেন। কোথাও কোথাও ভিড় জমিয়েছেন অনেকে। পরিস্থিতি দেখে, সটান গিয়ে দোকানের শাটার নামিয়ে দেন বিধায়ক। ব্যবসায়ীদের ধমক দিয়ে বলেন, ”হিরোগিরি বন্ধ করুন। আপনাদের কয়েকজনের জন্য সকলে বিপদে পড়বে তা হবে না। আমার বিধানসভায় আমি তা হতে দেব না। সকলকে মাস্ক পরতে হবে।” ক্ষুব্ধ বিধায়ক আরও বলেন, “আমরা সরকার থেকে বারবার চেষ্টা করছি কী করে করোনার সঙ্গে মোকাবিলা করা যায়। মাইকিং করছি। প্রচার চলছে। তাও একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব। লকডাউনের নিয়ম না মানলে দোকানের লাইসেন্স বাতিল হবে।” প্রসঙ্গত,  নির্বাচনের সময়ে নিজে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন অসিত।

জলপাইগুড়ি: 

রাজ্যে পূর্ণ লকডাউন জারি হওয়ার পর থেকেই জরুরি পরিষেবা ছাড়া আর সব কিছুই বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। সকাল সাতটা থেকে দশটা পর্যন্ত খোলা থাকছে বাজার-দোকান। কিন্তু, সেই নির্দেশকে অগ্রাহ্য করেই খোলা থাকছে দোকানপাট। পরিবহন বন্ধ থাকলেও কার্যত সেই নির্দেশ মানছেন না সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মঙ্গলবার সকালে তাই অভিযানে নামল ধূপগুড়ি পুলিশ। নির্ধারিত সময়ের পরে কেন দোকান খোলা রাখা হচ্ছে তা জানতে চেয়ে কার্যত ব্যবসায়ীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাল পুলিশ। এমনকী, দোকানবন্ধের নির্দেশও দেওয়া হল। যদিও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দোকানবন্ধের ব্যাপারে পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা দেখা গেলেও গণ পরিবহন (Transport) বন্ধের কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ। রাস্তায় চলছে টোটো, পিকআপ সহ সমস্ত গাড়ি। সরকারি নির্দেশ পালনের ক্ষেত্রে পুলিশের এই ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ আচরণে ক্ষোভ ছড়িয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

বর্ধমান:

লকডাউনের তৃতীয়দিনে ভিড় কমাতে বাজারে পুলিশি টহলদারি । জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সিংহরায়ের নেতৃত্বে বর্ধমান শহরের বিভিন্ন সবজী বাজারে পরিদর্শন করল জেলা পুলিশ। লাগাতার প্রচারের পরেও কোভিড বিধিকে (COVID protocol) উপেক্ষা করে রাস্তায়-বাজারে ভিড় জমিয়েছে আমজনতা। ভিড় নিয়ন্ত্রণে তাই বর্ধমানের কোণায় কোণায় চলল পুলিশি অভিযান। তবে, নিয়মের কড়াকড়িতে গত সোমবাররের থেকে এদিন অনেকটাই ভিড় নিয়ন্ত্রণে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ।

অন্যদিকে কাটোয়াতে, লকডাউনের নির্দেশকে উপেক্ষা করে রাস্তায় টোটো নিয়ে ভাড়া খাটার দায়ে ১৮ টি টোটো সহ ২৪ জনকে আটক করল পুলিশ। দশটার পর সবজি বাজার,দোকান পাট বন্ধ হলেও কাটোয়া শহরের বিভিন্ন রাস্তায় অন্যান্য দিনের মতই চলছিল টোটো। পুলিশের বিশেষ অভিযানে টোটো গুলিকে আটক করা হয়। যদিও টোটোচালকদের দাবি, আপৎকালীন পরিষেবা দেওয়ার জন্যই তাদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

আলিপুরদুয়ার: 

মঙ্গলবারের সকাল থেকে আলিপুরদুয়ার শহরে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। মাস্ক না পরে ঘোরাঘুরির জন্য অনেককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালায় পুলিশ।এছাড়া, গণপরিবহনের চালক  ও যাত্রীদেরও সতর্ক করতে কড়া ভূমিকা নেয় আলিপুরদুয়ার প্রশাসন। এদিনের অভিযানে উপস্থিত ছিলেন আলিপুরদুয়ার থানার আইসি অনিন্দ্য ভট্টাচার্য।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা:

লকডাউনের বিধি নিষেধের উপর কড়া নজরদারি চালাতে এলাকা সহ বাজারগুলোতে অভিযান চালাল ডায়মন্ড হারবার মহাকুমা প্রশাসনের আধিকারিকরা। মঙ্গলবার, ঘড়িতে সকাল ১০টা বাজতেই ডায়মন্ড হারবারের এসডিও সুকান্ত সাহা ও এসডিপিও শান্তনু সেনের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী  শহরের বাজার-সহ আশেপাশের এলাকায় অভিযান চালাল। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের দুধারের দোকান খোলা থাকতে দেখে রীতিমতো জিজ্ঞাসাবাদ চালায় পুলিশ। রাস্তার উপরের বেশ কিছু অস্থায়ী দোকান খোলা থাকায় লাঠি উঁচিয়ে ছুটেও যান পুলিশ কর্মীরা। এমনকি মাস্ক ছাড়া কাউকে ঘোরাঘুরি করতে দেখলেও ধমক দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়কেও চলে অভিযান। প্রায় অধিকাংশ গাড়ির চালককে দাঁড় করিয়ে প্রয়োজনীয় নথি খতিয়ে দেখা হয়। জরুরি প্রয়োজন বা কোন কারণ ছাড়া গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হলে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হয় প্রশাসনের তরফে। লকডাউন অমান্য করায় এদিন মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে মহামারী আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে বলে ডায়মন্ডহারবার পুলিশ মারফত জানা গিয়েছে। মহকুমা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, কার্যত লকডাউনের বিধিনিষেধ সকলে যেন পালন করেন সেইজন্য প্রতিদিনই সকাল ১০টার পর অভিযান চালানো হবে জানিয়েছে ডায়মন্ডহারবার পুলিশ।

পশ্চিম মেদিনীপুর: 

লকডাউনের বিধিনিষেধ নিয়ে যখন কড়াকড়ি রাজ্যজুড়ে, তখন সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ ছবি চন্দ্রকোনায় মাছের পাইকারি বাজারে। মঙ্গলবার, লকডাউনের নিয়ম ভেঙে কার্যত সময়েক আগেই খুলল বাজার। এমনকী, মান্যতা দেওয়া হল না করোনা বিধিকে। লকডাউন চললেও ভোর ৪.৩০ থেকে খুলে যায় মাছের বাজার, তার উপর উপচে পড়া মানুষের ভিড়। বাজার জুড়ে অরক্ষিত মুখ। অবাধে চলছে বিকিকিনি। করোনা সংক্রমণ বাড়লেও হুঁশ ফেরেনি মানুষের। এই ঘটনায় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, গত রবিবার, সকাল ৬টা থেকে ৩০ মে সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজ্যে ১৫ দিনের জন্য জারি হয় পূর্ণ লকডাউন। করোনা মোকাবিলায় আগেই রাজ্যের তরফে বেশ কিছু বিধি নিষেধ জারি করা হয়েছিল। সেই বিধি নিষেধ সংশোধন করে আরও কঠোর করা হয় শনিবার। রাজ্যের নতুন সিদ্ধান্তে স্কুল, কলেজ, সরকারি-বেসরকারি অফিস, বাস, ট্যাক্সি অটো, প্রাইভেট গাড়ি, গাড়ি, মেট্রো, ফেরি সার্ভিস জরুরি পরিষেবা ছাড়া অন্য পণ্য পরিবহণের গাড়ি আগামী ১৫ দিন বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাত ৯টার পর জারি হয়েছে নৈশ কার্ফু। উল্লেখ্য, রাজ্য স্বাস্থ্য় দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায়  রাজ্যে একদিনে করোনায় ১৪৭জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে করোনা সংক্রমিত ১৯ হাজার ১০১জন। কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনায় একদিনে ৭৪জনের মৃত্যু। শুধু উত্তর ২৪ পরগনাতেই একদিনে সংক্রমিত ৪ হাজার ২২০। কলকাতায় একদিনে ৩ হাজার ৮৯৯জন করোনা আক্রান্ত।

আরও পড়ুন: নিয়ন্ত্রণের বাইরে করোনা পরিস্থিতি, এবার স্কুলগুলিকে নিয়ে বড় পদক্ষেপ শিক্ষা দফতরের