এক্সক্লুসিভ: আমপানের বর্ষপূর্তিতে শক্তিশালী নিম্নচাপের আশঙ্কা বঙ্গোপসাগরে, যাবে কোন দিকে?

দেশের দু'পাশের দুই সাগরে বছরে দু'বার করে ঘূর্ণিঝড় মরসুম। একবার বর্ষার আগে, আরেক বার বর্ষার পরে।

এক্সক্লুসিভ: আমপানের বর্ষপূর্তিতে শক্তিশালী নিম্নচাপের আশঙ্কা বঙ্গোপসাগরে, যাবে কোন দিকে?
তাউটে রুখতে বিপর্যয় মোকাবিলা দল। ছবি- পিটিআই
Follow Us:
| Updated on: May 18, 2021 | 12:40 PM

তাউটের পর কি এ বার ‘ইয়াস’?

কমলেশ চৌধুরী: দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিচ্ছে বঙ্গোপসাগরের বায়ুপ্রবাহ। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, আগামী ২৩ মে নাগাদ নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে মায়ানমার লাগোয়া পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে। নিম্নচাপ শক্তি বাড়াতে পারে, সেই ইঙ্গিতও দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। তবে কি আবার ঘূর্ণিঝড়? হলেও কী হবে গতিপথ? আমপানের বর্ষপূর্তিতে আবার দুর্যোগের মুখে পড়বে বাংলা (West Bengal)? কড়া নজর রাখছেন আবহবিদরা।

ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের সচিব, আবহবিদ মাধবন রাজীবন বলেছেন, “২৩ মে বঙ্গোপসাগরে নতুন নিম্নচাপের সম্ভাবনা।” মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,”নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। আমরা নজর রাখছি। বৃহস্পতিবার নাগাদ আরও স্পষ্ট করে বলা যাবে।”

দেশের দু’পাশের দুই সাগরে বছরে দু’বার করে ঘূর্ণিঝড় মরসুম। একবার বর্ষার আগে, আরেক বার বর্ষার পরে। বর্ষার আগে, এই মে মাসেই আয়লার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলা। তার ১১ বছর পর আরও শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আমপান আছড়ে পড়ে সুন্দরবনে। একশোর কাছাকাছি মৃত্যু, দীর্ঘদিন বিদ্যুত্‍-হীন বিস্তীর্ণ তল্লাট– কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে ভয়াবহ দুর্যোগের সাক্ষী হয়েছিল বাংলা। এখন কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে এমনিতেই বিপর্যস্ত দেশ। তার মধ্যে গুজরাটে আছড়ে পড়েছে চরম তীব্র ঘূর্ণিঝড় তাউটে। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে নিম্নচাপ দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। মৌসম ভবনের দেওয়া দু’সপ্তাহের আউটলুক থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট, ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ বা মায়ানমার উপকূলের দিকেই এগোতে পারে সম্ভাব্য শক্তিশালী নিম্নচাপ।

এই নিম্নচাপের উপর বর্ষার আগমনও অনেকটা নির্ভর করতে পারে। সাধারণত, ১ জুন নাগাদ বর্ষা ঢোকে কেরলে। আন্দামানে ২২ মে নাগাদ। এ বার মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, ৩১ মে নাগাদ কেরলে বর্ষা ঢুকে পড়তে পারে। আন্দামানে ২১ মে। আবহবিদরা মনে করছেন, নিম্নচাপ শক্তিশালী হলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বাতাসের জোর বাড়বে। ফলে নির্ধারিত সময়ের অনেকটা আগেই কেরলে বর্ষার আগমন হয়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যেই তাউটের প্রভাবে কেরল, কর্নাটক, গোয়া, মহারাষ্ট্র, গুজরাটে যা বৃষ্টি হয়েছে, তা প্রায় বর্ষারই সমান। রাজস্থানেও প্রবল বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা। সমস্যা হল, অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টি হলে সেই জল কোনও কাজে লাগে না। উল্টে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়। জলবায়ু বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই ধরনের ঘটনা বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড়ের শক্তিশালী হওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে। তাউটেকে ধরে গত পাঁচ বছরে ২৪টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টিই তীব্র বা তার চেয়েও বেশি শক্তিশালী।

আগামী সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে কোন খেলা দেখায় প্রকৃতি, সব নজর এখন সে দিকেই। আপাতত কিছুটা অস্বস্তির খবর শুনিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। পূর্বাভাস গরম বাড়ার। সঞ্জীববাবুর কথায়, ‘নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে চারপাশ থেকে বাতাস নিজের কেন্দ্রের দিকে টানবে। ফলে উত্তর ভারতের গরম বাতাস বাংলার দিকে বইবে। তাই চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে তাপমাত্রা অনেকটাই বাড়তে পারে। নিম্নচাপের গতিপথের উপর পরবর্তী আবহাওয়া নির্ভর করবে।’

আরও পড়ুন: মধ্যরাত থেকেই শক্তি হারাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় তাউটে, লাগাতার বৃষ্টি গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে