করোনায় আক্রান্ত মা ভর্তি হাসপাতালে, ব্রেনস্ট্রোকে মৃত বাবার দেহের সামনেই ‘আত্মঘাতী’ অবসাদগ্রস্ত ছেলে!

সুরজিৎ যে মা-বাবা অন্ত প্রাণ ছিলেন তাও একবাক্য়ে স্বীকার করেছেন সকলে। কিন্তু মানসিক অবসাদের জেরে সুরজিৎ যে  এমন ভয়াবহ পদক্ষেপ করতে পারেন তা স্বপ্নেও ভাবেননি কেউ।

করোনায় আক্রান্ত মা ভর্তি হাসপাতালে, ব্রেনস্ট্রোকে মৃত বাবার দেহের সামনেই 'আত্মঘাতী' অবসাদগ্রস্ত ছেলে!
পরিবারের সঙ্গে সুরজিৎ কেরানি, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: May 15, 2021 | 8:53 PM

হাওড়া: রাজ্যের বেলাগাম করোনা পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংক্রমণের দৈনিক গ্রাফ, তেমনিই মনের চোরাগোপ্তায় প্রবেশ করছে অবসাদ। আংশিক লকডাউন, সংক্রমণের (COVID19) মারকতা ভয় ধরাচ্ছে আমজনের। মনোবিদ থেকে মনোবিজ্ঞানীরা বারবারই বার্তা দিচ্ছেন, পরিস্থিতি বুঝে প্রতিক্রিয়া কতটা জরুরি। কিন্তু স্নায়ুর লড়াই থামছে না। এ বার সেই স্নায়ুযুদ্ধে পরাজিত হলেন এক যুবক। মা করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি, ব্রেনস্ট্রোকে মৃত্য়ু বাবার। মেনে নিতে পারেননি যুবক। গলায় দড়ি দিয়ে ‘আত্মঘাতী’ হয়েছেন তিনি। ঘটনার জেরে, শনিবার সকালে, বেলুড়ের ঘোষেষ লেনে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

মৃত বছর সাঁইত্রিশের যুবক সুরজিৎ কেরানির স্ত্রী রূপা জানিয়েছেন, মানসিক অবসাদের (Mental Stress) জেরেই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন তাঁর স্বামী। মা-বাবাকে ভীষণ ভালবাসতেন সুরজিৎ। কিছুদিন আগেই করোনা আক্রান্ত হন সুরজিতের মা অলোকা কেরানি। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর পরিবারের সুরক্ষার কথা ভেবেই স্ত্রী রূপা ও আড়াই বছরের সন্তানকে স্ত্রীর বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন সুরজিৎ। যদিও নিজের মায়ের করোনা আক্রান্তের খবর পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন সুরজিৎ। এরমধ্য়ে তাঁর বাবার কিছু উপসর্গ দেখা দিলে নিজের ও বৃদ্ধের কোভিড (COVID19) পরীক্ষা করাবেন বলে ঠিক করেন সুরজিৎ। শনিবার, নিজের বাবাকে নিয়ে তাঁর করোনা পরীক্ষা করতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, এদিন সকালেই আচমকা মারা যান ব্রেনস্ট্রোকের রোগী তিনকড়ি কেরানি তথা সুরজিতের বাবা। এই আঘাত নিতে পারেননি সুরজিৎ। শনিবার সকালে একাধিকবার বাড়িতে ফোন করে যখন উত্তর পাননি রূপা তখন ছুটে  আসেন ঘোষেষ লেনের বাড়িতে। সেখানে কেউ দরজা না খোলায়, প্রতিবেশীদের খবর দেন। ঘরে ঢুকেই দেখা যায়, বিছানায় পড়েছে রয়েছে তিনকড়িবাবুর নিথর দেহ, সিলিঙ থেকে ঝুলছে সুরজিতের দেহ।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন সুরজিতের বাবা তিনকড়িবাবু। সুরজিতের মা অলকা যে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন সে খবর জানতেন অনেকে। সুরজিৎ যে মা-বাবা অন্ত প্রাণ ছিলেন তাও একবাক্য়ে স্বীকার করেছেন সকলে। কিন্তু মানসিক অবসাদের জেরে সুরজিৎ যে  এমন ভয়াবহ পদক্ষেপ করতে পারেন তা স্বপ্নেও ভাবেননি কেউ। শোকগ্রস্ত রূপা দেবী বলেছেন, “ও বলত করোনা হলে কেউ বাঁচে না। আমার মা-বাবাও বাঁচবে না। মা-বাবাকে ভীষণ ভালবাসত। তাই বাবার মৃত্যু দেখে নিজে চলে গেল।”

মৃতদেহ উদ্ধারে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় বালি থানার পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান মানসিক অবসাদের জেরেই ‘আত্মঘাতী’ হয়েছেন যুবক। মৃতদেহগুলি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। গোটা ঘটনা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: প্রবীণের পাশে নবীন, নিজেদের জমানো টাকা দিয়ে বয়স্থদের খাবার,ওষুধ,জল সরবরাহে ব্যস্ত স্কুল পড়ুয়ারা