ভোট পরবর্তী হিংসার মামলায় ফের দুবরাজপুর আদালতে সিবিআই, কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা
Post Poll Violence: উল্লেখ্য, গত ১২ জুন বীরভূম জেলার খয়রাশোল ব্লকের কাঁকড়তলা থানার অন্তর্গত নবসন গ্রামে বিজেপির বুথ সহ–সভাপতি মিঠুন বাগদি খুন হন।
বীরভূম: ভোট পরবর্তী হিংসা তদন্তে দুবরাজপুর আদালতে এলেন সিবিআই আধিকারিকরা। গত মঙ্গলবার, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা বিজেপি কর্মী মিঠুন বাগদি হত্যা-মামলায় জেল হেফাজতে থাকা তিন অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করেন। সেইমতো, গতকাল তাঁরা সিউড়ি সংশোধনাগারেও গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার কেন ফের আদালতের দ্বারস্থ সিবিআই, তা নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা গিয়েছে।
সিউড়ি আদালত সূত্রে খবর, ভোট পরবর্তী হিংসায় বিজেপি কর্মী মিঠুন বাগদি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত লক্ষ্মী বাগদির নারকো টেস্ট হতে পারে বা অন্য কোনও পদ্ধতিতে পরীক্ষা ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। আদালত যেন সেই আবেদন মঞ্জুর করে। তবে ঠিক কী কারণে এদিন আদালতে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা তা স্পষ্ট নয়।
উল্লেখ্য, গত ১২ জুন বীরভূম জেলার খয়রাশোল ব্লকের কাঁকড়তলা থানার অন্তর্গত নবসন গ্রামে বিজেপির বুথ সহ–সভাপতি মিঠুন বাগদি খুন হন। সেই ঘটনার তদন্তে পুলিশ ইতিমধ্যেই পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। মঙ্গলবার, দুবরাজপুর আদালতে আসার আগে সিবিআইয়ের প্রতিনিধিরা নবসন গ্রাম ঘুরে যান। মিঠুন বাগদি খুনের ঘটনায় গত ২৮ অগস্ট প্রথম সিবিআইয়ের প্রতিনিধি দল নবসন গ্রামে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ও মৃতের পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন গোয়েন্দারা।
বিধানসভা নির্বাচন আবহে নবসন গ্রাম থেকে ১০০ মিটার দূরে স্থানীয় যুবক রাজু বাগদির রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছিলেন মৃত রাজু বাগদি তৃণমূলের কর্মী। সেই খুনের ঘটনায় নাম জড়িয়ে যায় বিজেপি বুথের সহ–সভাপতি মিঠুন বাগদির। গ্রেফতার হওয়ার তিন মাসের মধ্যে আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর মিঠুন গ্রামে এলে তাঁর উপর চড়াও হয় রাজুর পরিবার বলে অভিযোগ। তাঁকে রড, বটি, কাটারি দিয়ে হামলা করা হয় বলে অভিযোগ। গুরুতর আহত অবস্থায় মিঠুনের দেহ রাস্তা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ নাকড়াকোন্দা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিত্সকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপরেই মিঠুনের পরিবার সিবিআই তদন্তের আবেদন করেন। এরপর, কলকাতা হাইকোর্ট ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস মামলায় খুন ও ধর্ষণের ঘটনাগুলির তদন্তের ঘটনাগুলি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার পর তদন্তে নামেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় ইতিমধ্যেই রাজ্য পুলিশের তদন্তকারী অফিসারদের তলব করা শুরু করল সিবিআই। ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে মোট ৮৪ জন তদন্তকারী অফিসার বা আইও-র মধ্যে ইন্সপেক্টর, ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসার রয়েছেন। এছাড়া ২৫ জন কর্তা রয়েছেন এই দলে। জয়েন্ট ডিরেক্টর, ডিআইজি, এসপি পদমর্যাদার এই ২৫ জন অফিসার।
প্রত্যেক জোনের টিমে ২১ জন করে তদন্তকারী অফিসার বা আইও। ইতিমধ্যেই রাজ্যে পৌঁছেছেন ৪ যুগ্ম অধিকর্তারা। পৌঁছেছেন বেশিরভাগ ডিআইজি ও এসপি। রাজ্যে ১৫ টি খুন এবং ৬ টি ধর্ষণের মামলায় ২৭ অগাস্ট ১১টি এফআইআর দায়ের করেছিল সিবিআই। খুন, খুনের চেষ্টা, বেআইনি অস্ত্র রাখা, অপহরণ, অনুপ্রবেশের মতো একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআরগুলি দায়ের করা হয়। গত শনিবার আরও ১০টি এফআইআর দায়ের করা হয়। ২৯ অগস্ট আরও সাতটি এফআইআর দায়ের করা হয়। পরে আরও দুদফায় চারটি ও তিনটি এফআইআর দায়ের করা হয়।
এদিকে, ভোট পরবর্তী হিংসার মামলায় সিবিআই-এর তদন্তকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য। যদিও এতে খুব একটা লাভ হতে পারে, এমন কোনও সম্ভাবনা দেখছে না আইনজীবী মহল। কারণ, ভোট পরবর্তী হিংসার রায় ঘোষণার সময় বেঞ্চের পাঁচ বিচারপতির পর্যবেক্ষণ ভিন্ন হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু একটি বিষয়ে সকলেই সহমত হন। তা হল- খুন ও ধর্ষণের মতো অপরাধের তদন্ত যেন সিবিআই দ্বারা করা হয়। ঠিক এই জায়গাতেই সুপ্রিম কোর্টে গেলেও রাজ্য়ের আপত্তি ধোপে নাও টিকতে পারে। আরও পড়ুন: গাড়ির চালকের সঙ্গে ‘সম্পর্ক’, আদালতে আত্মসমর্পণ বিজেপি বিধায়ক চন্দনার