‘বোমার কারখানাই পশ্চিমবঙ্গের কুটির শিল্প’ তোপ দিলীপের, নজরে পুরসভা ভোট

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের (Cyclone Yaas) মোকাবিলা নিয়েও এদিন মুখ খোলেন রাজ্য সভাপতি। স্পষ্টই বলেন, "আমফানের সময় চালচুরি, ত্রিপলচুরি করেছিল। ইয়াসে উড়িষ্য়ার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata Banerjee) বলেছেন ১৫ হাজার কোটি টাকা ত্রাণ লাগবে। সেখানে বাংলার উপর দিয়ে ইয়াস গেলই না, আর মুখ্য়মন্ত্রী চেয়ে বসলেন ২০ হাজার কোটি টাকা।"

'বোমার কারখানাই পশ্চিমবঙ্গের কুটির শিল্প' তোপ দিলীপের, নজরে পুরসভা ভোট
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jun 06, 2021 | 9:45 PM

পুরুলিয়া: বঙ্গ নির্বাচনের পর প্রথমবার পুরুলিয়ায় দলীয় বৈঠকে যোগ দিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। রবিবার, দলীয় বৈঠকের পর সাংবাদিকদের (Press Meeting) মুখোমুখি হয়ে রাজ্য সরকারকে তীব্র আক্রমণ বিজেপি (BJP) নেতা। এদিনোই পুরভোটের প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন দিলীপ ঘোষ।

সাংবাদিক বৈঠকে দিলীপবাবু জানান, পুরুলিয়ায় আসন্ন পুরসভা ভোট নিয়ে দলের কর্মসূচি ও পরিকল্পনাতেই আপাতত জোর দিচ্ছে বিজেপি। পুরুলিয়ার তিনটি পৌরসভা পুরুলিয়া, রঘুনাথপুর এবং ঝালদায় জয় নিয়েও আশাবাদী গেরুয়া শিবির (BJP)। একুশের নির্বাচনেও পুরুলিয়ার ৯টি আসনের মধ্যে ৬টি-তেই জয়লাভ করেছে বিজেপি। পৌর নির্বাচনের আগে দলের কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করতেই মূলত এই বৈঠকে অংশ নেন দিলীপ। এদিন, রাজ্যে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়েও মুখ খোলেন বিজেপি নেতা। বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, তিনি শপথ গ্রহণের পর রাজ্যে আর কোনও হিংসার ঘটনা ঘটবে না। কিন্তু, তারপরেও আমাদের ৩৭ জন বিজেপি (BJP) কর্মী মারা গিয়েছেন। জানিনা, তিনি কীভাবে সন্ত্রাস প্রতিরোধ করছেন!” এদিনই, ভাটপাড়ায় গোষ্ঠীসংঘর্ষকে কেন্দ্র করে দিলীপবাবু বলেন, “অর্জুন সিং যবে থেকে সাংসদ হয়েছেন তবে থেকে তাঁকে প্রাণে মারার জন্য ভাটপাড়ায় কেন, গোটা ব্যারাকপুরে বোমাবাজি চালিয়ে গিয়েছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। সেই সন্ত্রাসের জের এখনও কাটেনি।”উল্লেখ্য, রাজনৈতিক হিংসার জন্য বরাবরই চর্চায় ভাটপাড়া। রবিবার এক বিজেপি কর্মীকে বোমা মেরে খুনের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। এ প্রসঙ্গে দিলীপবাবু বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে এখন বোমার কারখানা কুটির শিল্পে পরিণত হয়েছে। আর সেই কারখানায় তৈরি বোম বিরোধীদের মাথা ওড়াতে ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের হেস্টিংসের কার্যালয়ের পাশেই বোমা রাখা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে তো গণতন্ত্র নয়, গণহত্যা চলছে।”

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের (Cyclone Yaas) মোকাবিলা নিয়েও এদিন মুখ খোলেন রাজ্য সভাপতি। স্পষ্টই বলেন, “আমফানের সময় চালচুরি, ত্রিপলচুরি করেছিল। ইয়াসে উড়িষ্য়ার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata Banerjee) বলেছেন ১৫ হাজার কোটি টাকা ত্রাণ লাগবে। সেখানে বাংলার উপর দিয়ে ইয়াস গেলই না, আর মুখ্য়মন্ত্রী চেয়ে বসলেন ২০ হাজার কোটি টাকা। এর আগেও করোনা মোকাবিলায় পিপিইকিট, ওষুধ মিলিয়ে আড়াই হাজার কোটি টাকার জলঘোলা করেছিল এই সরকার, সেই নিয়ে কোনও তদন্ত হয়নি।” প্রসঙ্গত, ইয়াস মোকাবিলায় কেন্দ্রের কাছে কার্যত কোনও অর্থ সাহায্য চাননি বলেই দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট তুলে দেওয়া হয়েছে কেবল। বাকি তিনি কী করবেন তাঁর উপরেই ছেড়ে দিয়েছে সরকার।

সাংবাদিক বৈঠকের পর এদিন দিলীপবাবু (Dilip Ghsoh পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডের কাছে বিজেপি আয়োজিত অন্নপূর্ণা সেবায় অংশ নেন। নিজে হাতে প্রায় শতাধিক মানুষকে খাবার পরিবেশন করেন রাজ্য সভাপতি। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর বিজেপি কর্মী সমর্থকদের আর মানুষের পাশে দেখা যায় না, এমন অভিযোগ বরাবর উঠেছে। সেই ধারণা নস্যাৎ করতেই কার্যত জনসংযোগে মন দিয়েছে গেরুয়া শিবির। দিলীপবাবু বলেন, “জেলায় তিন সাংসদ এবং ছয়জন বিধায়ক রয়েছেন। আমরা চাইছি সকলের কাছে পৌঁছে যেতে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে। এই কোভিড পরিস্থিতিতে দুঃস্থ অসহায় মানুষদের পাশে থাকাই বিজেপির একমাত্র লক্ষ্য। আমরা বিশ্বাস করি জীবসেবাই নারায়ণ সেবা।” রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, আসন্ন নির্বাচনগুলির চিন্তা করেই বিজেপি এখন ‘ইমেজ’ তৈরিতে ব্যস্ত। তাই ধর্মীয় মেরুকরণ বা অন্যান্য উৎসব সমারোহে নজর না দিয়ে মানুষের পাশে থেকে জনসংযোগ বাড়ানোর কৌশলকেই হাতিয়ার করেছে বিজেপি।

আরও পড়ুন: ‘দলের নেতারা দেখেনি’, সুর বদলে ঘরে ফিরল ৮টি বিজেপি পরিবার, সৌজন্যে তৃণমূল নেতৃত্ব