ফিরছে ভাগাড় আতঙ্ক! ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে উদ্ধার ৫৬ কেজি পচা মাংস, চাঞ্চল্য চন্দননগরে

চন্দননগর পুলিশ জানিয়েছে, অনেকদিন ধরেই পুলিশ লাইন, মেস, জেলখানা-সহ শহরের বিভিন্ন হোটেলে মাংস সরবরাহ করতেন ধৃত ব্য়বসায়ী বিমলেন্দু দাস। চুঁচুড়ার খরুয়া বাজারেই তাঁর দোকান। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালান এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের আধিকারিকরা।

ফিরছে ভাগাড় আতঙ্ক! ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে উদ্ধার ৫৬ কেজি পচা মাংস, চাঞ্চল্য চন্দননগরে
ধৃত ব্যবসায়ী বিমলেন্দু দাস, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jun 18, 2021 | 2:26 PM

হুগলি: ফের ফিরছে ভাগাড়ের আতঙ্ক! চন্দননগরে পচা মুরগির মাংস বিক্রির অভিযোগে এক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করল চন্দননগর কমিশনারেটের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ। ধৃত ব্যবসায়ী বিমলেন্দু দাসের বাড়ি থেকে ৫৬ কেজি পচা মুরগির মাংস পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। যদিও, অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ধৃত ব্যবসায়ী ও তাঁর পরিবার।

চন্দননগর পুলিশ জানিয়েছে, অনেকদিন ধরেই পুলিশ লাইন, মেস, জেলখানা-সহ শহরের বিভিন্ন হোটেলে মাংস সরবরাহ করতেন ধৃত ব্য়বসায়ী বিমলেন্দু দাস। চুঁচুড়ার খরুয়া বাজারেই তাঁর দোকান। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালান এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের আধিকারিকরা। বিমলেন্দুবাবুর বাড়ির ফ্রিজার থেকে উদ্ধার হয় ৫৬ কেজি মাংস। সেই মাংস যে পচা ছিল তা নিশ্চিত করেন ফুড ইনস্পেক্টর। বৃহস্পতিবারই বিমলেন্দুবাবুকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার তাঁকে চু্ঁচূড়া আদালতে তোলা হয়। যদিও, সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছেন বিমলেন্দু ও তাঁর পরিবার।

আদালতে যাওয়ার আগে বিমলেন্দুবাবু বলেন, “আমাকে ইচ্ছে করে ফাঁসানো হয়েছে। জামাইষষ্ঠীর জন্য আমার বাড়িতে মাংস কেটে রাখা ছিল। এখনও আমার বাড়ির ফ্রিজে ২৫ কেজি মাংস রয়েছে। গতকাল আচমকাই আমার বাড়িতে আসেন পুলিশ ও তদন্তকারীরা। বলেন আমার বাড়িতে নাকি পচা মাংস আছে। ফুড ইন্সপেক্টর কোনও পরীক্ষা না করেই ডেস্ট্রয়েড বলে স্ট্যাম্প দিয়ে দেন। আমরা বারবার বলি পরীক্ষা করার জন্য। কিন্তু কোনও কথাই শোনা হয়নি। কুকুরের জন্য রাখা মাংস আর অন্য মাংস সমস্ত মিলিয়ে দেন আধিকারিকরা। বারবার বলা সত্ত্বেও আমাদের কথা শোনা হয়নি।”

ধৃত বিমলেন্দুবাবুর ছেলে বিশাল দাস বলেন, “আমাদের পুরবো দোকান। প্রায় পনেরো বছরের ব্যবসা। এত জায়গায় মাংস পাঠাই। কখনও কেউ বলেনি পচা মাংস দেওয়া হয়েছে। আমাদের বাড়ির ফ্রিজে সবসময় কুড়ি পঁচিশ কিলো মাংস থাকে। বৃহস্পতিবার, আমাদের বাড়িতে তদন্তকারীরা আসেন। এসেই তাঁরা কোনও পরীক্ষা না করেই কুকুরের জন্য রাখা মাংস আর অন্য যা মাংস ছিল সব মিশিয়ে দেন। ফুড ডিপার্টমেন্টের অফিসার সেগুলো নিজেই নষ্ট করে দিয়ে ডেস্ট্রয়েড বলে স্ট্যাম্প মেরে দেয়। বারবার বলা সত্ত্বেও মাংসের কোনও পরীক্ষা করা হয়নি। আমাদের বলা হয়েছিল ট্রেনিং নিতে। পনেরো দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। সেই কাগজও আমাদের কাছে আছে। সন্ধ্যার দিকে পুলিশ ‘কথা বলব’ বলে আমাদের বাড়িতে এসে বাবাকে নিয়ে যায়। তারপর সারারাত থানাতেই আটকে রাখে। পরে বলা হয়, যে বাবাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এমনকী এও বলা হয়েছে, আমাদের বাড়ি থেকে নাকি ৫৬ কিলো মাংস পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু কোনও ওজনই করা হয়নি।”

পুলিশ কমিশনার অর্ণব ঘোষ বলেন, “গোটা ঘটনার তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। উদ্ধার হওয়া মাংস ল্যাবরেটরি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। ততদিন পর্যন্ত অভিযুক্তকে পুলিশি হেফাজতে রাখার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আমরা সবদিক খতিয়ে দেখছি।”

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে প্রথম ভাগাড়কাণ্ডের বিতর্কটি সামনে আসে। শহরের নামীদামী রেঁস্তোরায় পচা মাংস বা মুরগির মাংসের বদলে অন্য কোনও প্রাণীর মাংস চালান করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। ভাগাড়কাণ্ডের তদন্তে সিট গঠন করে রাজ্য সরকার। রাজ্য জুড়ে লাগাতার চলে তল্লাশি অভিযানও। খোঁজ মেলে হিমঘরেরও। ভাগাড়কাণ্ডে সন্দেহভাজনের তালিকায় নাম উঠে আসে একাধিকের। চন্দননগরের এই ঘটনা ফের উস্কে দিল সেই স্মৃতিই বলছে ওয়াকিবহাল মহল।

আরও পড়ুন: উপাচার্যের ‘রুষ্মা’! ছাত্রদের ‘মাওবাদী’ তকমা থেকে সংবাদমাধ্যমকে তোপ, ফাঁস একাধিক অডিয়ো, চর্চায় বিশ্বভারতী