মাটির বাড়িতে স্যান্ডো গেঞ্জি-গামছা পরে ঘুমিয়ে ছত্রধর, মাঝ রাতে ঢুকল ৪০ জোড়া বুট…
রাত গড়িয়েছে। ছত্রধরও হয়ত রাতের খাবার খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিলেন। নিঝুম রাত পেরিয়ে কাকভোর, কে জানত তখনই ছত্রধরের আমলিয়া গ্রামে হানা দেবে এনআইএ।
লালগড়: ১১ বছর পর ভোট দিয়েছিলেন ছত্রধর (Chhatradhor Mahato)। তারপর বাড়ি ফিরে একাধিক সংবাদ মাধ্যমে আত্মবিশ্বাসী প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন। দাবি করেছিলেন, ফল ভাল হবে ঘাসফুলের। আরও নির্দিষ্ট করে বলেছিলেন, “আমি যেসব বিধানসভার দায়িত্ব পেয়েছিলাম সেখানে ফল ভাল হবেই।” তখনও হয়ত ঘুনাক্ষরে ছত্রধর টের পাননি পরের দিন তাঁকে উঠতে হবে পুলিশের ভ্যানে।
প্রথম দফার ভোটের পর ইভিএম নিয়ে বুথ থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন ভোটকর্মীরা। নিঝুম রাত পেরিয়ে কাকভোর, কে জানত তখনই ছত্রধরের আমলিয়া গ্রামে হানা দেবে এনআইএ। ঘড়ির কাঁটা বড়জোর ৩টে বা সাড়ে ৩টে ছুঁয়েছে, তখনই কেন্দ্রীয় বাহিনীর সশস্ত্র জওয়ানদের সঙ্গে নিয়ে ছত্রধরের বাড়িতে হানা দিল এনআইএ। তাঁর কাঁচা বাড়িতে প্রায় ৪০ জোড়া বুটের শব্দ। হাঁক পড়ল ছত্রধরের। সূত্রের খবর, দরজায় দাঁড়িয়ে এনআইএ আধিকারিকরা একাধিকবার ডাকাডাকি করলেও বাড়ি থেকে বের হননি ছত্রধর।
এরপর জোর করে বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করে এনআইএ। তখন গোয়েন্দের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন ছত্রধরের পরিবারের সদস্যরা। ছত্রধরের ছেলে ও নিরাপত্তারক্ষীদের মধ্যে সংঘর্ষও বাধে। পরিস্থিতি ধস্তাধস্তিতে গড়ায়। আহতও হন দু-তিন জন। এরপর ছত্রধরকে চ্যাংদোলা করে তোলা হয় গাড়িতে। পরতে দেওয়া হয়নি সামান্য জুতো পর্যন্তও। গামছা-স্যান্ডো গেঞ্জি পরা অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ।
সূর্য ওঠার আগেই ছত্রধরকে নিয়ে ঝাড়গ্রাম ছাড়েন এনআইএ আধিকারিকরা। কিন্তু গ্রেফতারিকে ঘিরে উঠে যায় অনেক প্রশ্ন। আদালতে তাঁর আইনজীবী কৌশিক সিনহা প্রশ্ন করেন, “কেন এই গ্রেফতারি তার যথাযথ কোনও কারণ ছত্রধরের পরিবারকে জানানো হয়নি?” হঠাৎই ভোররাতে এনআইএ-এর একটি দল এসে তাঁকে নিয়ে যায়। সবথেকে দুঃখজনক কেন এই গ্রেফতার সেটাই তাঁর পরিবারকে জানানো হল না। নতুন করে কোনও মামলা দায়ের হল কি না সেটা দেখতে হবে। কারণ ছত্রধরের বিরুদ্ধে কোনও গ্রেফতারি পরোয়ানা নেই। এই অভিযোগও করেছেন কৌশিক সিনহা।
ছত্রধরের স্ত্রী নিয়তি মাহাতরও একই অভিযোগ। তাঁর দাবি, গ্রেফতারের আগে নাকি কোনও অর্ডার দেখানো হয়নি। যদিও এনআইএ-র দাবি, তারা অ্যারেস্ট মেমো দিতে চাইলেও নিতে রাজি হননি ছত্রধর। গোটা ঘটনায় উপস্থিত ছিল না স্থানীয় থানার পুলিশ। এই অভিযোগও করেছেন ছত্রধর। এর প্রায় একযুগ আগে যখন ছত্রধর গ্রেফতার হয়েছিল, তখনও তাঁর গ্রেফতারিতে ছিল নাটকীয়তা।
তখন লালগড়ের খয়রাশুলিতে ছত্রধরকে বোকা বানিয়েছিলেন সাংবাদিকের ছদ্মবেশে থাকা লালবাজারের দুই গোয়েন্দা। গ্রাম থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে সাক্ষাৎকার নেওয়ার অছিলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল ছত্রধরকে। ফের নাটকীয় গ্রেফতার। আদালত ছত্রধরকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত এনআইএ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু ভোটবঙ্গে লালগড়ের ছত্রধরের নাটকীয় গ্রেফতার উস্কে দিচ্ছে আরও অনেক প্রশ্ন।
আরও পড়ুন: মা চণ্ডীর পিণ্ডি চটকে ভূত করে দিয়েছেন, কিন্তু কলমাটা ঠিক পড়েন: শুভেন্দু