দিদি-ই দিদি-ই বলে আমায় ভ্যাঙানো! নিশ্চয়ই আমার মধ্যে কিছু না কিছু আছে, তাই তো ভ্য়াঙাচ্ছে: মমতা
খানিকটা ফুরফুরে মেজাজে থেকেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমার একটা পা গিয়েছে। কিন্তু অন্য় পা'টা জখম নয়। আর আপনারা মা-বোনেরা যে পায়ে হেঁটে এসেছেন ওতেই তো তিনটে করে পা হয়ে গেল। আপনাদের পা গুলোকে আমি প্রণাম করি। খেলা হবেই। আমি তো জিতবোই। কিন্তু আমাদেরা পাঁচ প্রার্থীকে আপনারা জেতাবেন। তবেই তো আমাদের সরকার আসবে। আমরা আছি বলেই তরাই-ডুয়ার্সে শান্তি আছে। আমরা শান্তির দাবিদার। মনে রাখবেন, ওরা ভয় দেখাবে, আপনারা ভয় পাবেন না। ভোট দেবেন, নির্ভয়ে ভোট দেবেন। গুন্ডামি দিয়ে ভোট জেতা যায় না। বিজেপির জন্য গণতন্ত্র ধর্ষিত হয়েছে। জেনে রাখুন, নির্বাচনে জিততে বুদ্ধি লাগে আর লাগে ভালবাসা। বিজেপিকে রাজনৈতিকভাবে কবর দিন।'
আলিপুরদুয়ার: তৃতীয় দফার নির্বাচনের দিনই উত্তরবঙ্গে কালচিনিতে নির্বাচনী প্রচার সারলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কালচিনি থেকে বিজেপির উদ্দেশে তোপ দাগলেন তৃণমূল সুপ্রিমো (Mamata Banerjee)। মঙ্গলবার সকালে, মমতার উষ্মায় চড়ল রাজনীতির পারদ। তৃণমূল (TMC) নেত্রীর নিশানা থেকে বাদ গেল না নির্বাচন কমিশনও।
মঙ্গলবার, কালচিনির মিনতি রাসমেলার মাঠে জনসভার মঞ্চে তৃণমূল (TMC) নেত্রী রাজ্য সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরতে বলেন, ‘আলিপুরদুয়ারকে একটি নতুন জেলার মর্যাদা দিয়েছি। জমিপাট্টা সরবরাহ করেছি। ফালাকাটা ইথেলবাড়িতে শিল্প উদ্যান তৈরি করেছি যা নতুন কর্মসংস্থানের ধারক। তিনটি নতুন কলেজের পাশাপাশি আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির পরিকল্পনা চলছে। কাজ হচ্ছে। ডুয়ার্সকন্যা তো রয়েছেই। কালচিনি ও মাদারিহাটে তিনটি মডেল স্কুল নির্মিত হয়েছে।’
শিক্ষার উন্নয়নের পাশাপাশি নগরোন্নয়নও যে রাজ্য় সরকারের চোখ এড়ায়নি, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে এ দিন তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘বাড়িতে বাড়িতে জল সরবরাহের জন্য় জল প্রকল্প শুরু হয়েছে। চা-বাগান কর্মীদের বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছি। সকলের জন্য তিন লাখ পাকা বাড়ি তৈরির ব্যবস্থা করেছি।’ চা শ্রমিকদের জন্য় একাধিক প্রকল্পের কথা এ দিন ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার এলে চা সুন্দরী প্রকল্পের আওতায় চা শ্রমিকদের জন্য ঘর তৈরি করব। প্রতিদিনের বেতন ৬৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০২ টাকা করা হয়েছে। কাজ হারানো সকল শ্রমিক প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা করে পাবেন।’ এখানেই থামেননি তৃণমূল নেত্রী। বিজেপিকে কড়া ভাষায় তোপ দেগে বলেন, ‘ওরা খালি বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেয়। বলেছিল বন্ধ চা-বাগান খুলবে। একটাও খুলেছে? আমরা কুড়িটা চা বাগান খুলিয়েছি। ভবিষ্যতে আরও বাড়াব।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলার জনসভায় আসলেই বিভিন্ন সময়ে তোপ দেগেছেন তৃণমূল সুপ্রিমোকে। সম্প্রতি ‘দিদি’ সম্বোধন করা নিয়েও সরব হয়েছে ঘাসফুল শিবির। নদিয়ার জেলা সভাপতি তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mohua Maitra) একটি সংবাদমাধ্যমে জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী যেভাবে মু্খ্যমন্ত্রীকে দিদি বলে সম্বোধন করেন, রকে বসা ছেলেরাও ওইভাবেই সম্বোধন করে থাকে।’ সেই প্রসঙ্গ ধরেই মঙ্গলবার মুখ খুললেন খোদ মমতা। বললেন, ‘ব্যাঙাচি চেনেন, ব্যাঙাচি! ওরা হল সব ভ্যাঙাচি। দিদি দিদি করে আমায় ভ্যাঙাচ্ছে! ভাবে আমি কিছুই বুঝি না। আরে আমার মধ্যে কিছু আছে বলেই তো ভ্যাঙাচ্ছে।’
জনসভা থেকে জনগণের উদ্দেশে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন নির্বাচন চলছে। আমি বলছি আপনাদের নির্ভয়ে ভোট দিন। মনে রাখবেন, ওরা একদিনের আমরা তিনশো পঁয়ষট্টি দিনের। আমি সব খবর পাই। সকাল থেকেই খবর পেয়েছি যে বিজেপি সর্বত্র হেরে যাচ্ছে। যত হারছে তত ওদের রোখ চাপছে। গুণ্ডামি বাড়ছে তত।’ ভোট আবহে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের (Election Commission) প্রতি আমার বিনীত শ্রদ্ধা রেখেই জানাচ্ছি, কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং বিজেপির গুন্ডাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন? আরামবাগের প্রার্থী সুজাতা একটি তফশিলি মেয়ে। ওকেও ছাড়েনি। ওর নিরাপত্তা রক্ষীকে বাঁশ দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। সংবাদমাধ্যম দেখাচ্ছে কীভাবে আমাদের প্রার্থীদের উপর মারধর করা হচ্ছে। খানাকুলে নাজমুলকে মেরেছে। আমি আজ সকাল থেকে একশোটা এফআইআর করেছি। জেলায় জেলায় অভিযোগ জমা দিয়েছি। কোনও গুন্ডামি বরদাস্ত করব না। আমি মা-বোনেদের বলছি, আপনারা এফআইআর করুন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সমালোচনা করে কেন্দ্রীয় সরকার। বলি পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তো এত হিংসা দেখা যায়নি। ইতিমধ্যেই চার জন তৃণমূল কর্মী মারা গিয়েছে।’ প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ নতুন নয়। আগেও তিনি বারবার বলেছেন কেন্দ্রের বাহিনী, আদতে বিজেপির প্রতিনিধি। ভোট চলাকালীনই এই বিষয়ে টুইট করেছেন তিনি। লিখেছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর অপব্যবহার করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনে বারবার অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলেই উল্লেখ করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, নির্বাচন কমিশন নীরব দর্শকের মতো ভূমিকা পালন করছে। শুধু তাই নয় গেরুয়া শিবিরের নাম না করে তাঁর দাবি, এক বিশেষ দলের পক্ষে ভোট দিতে প্রভাবিত করছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।
বর্তমান সরকারের জয়জয়কার করে এ দিন তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘ওরা বাইরে থেকে এসে ভাবছে দিল্লি কা লাড্ডু খাওয়াবে! কত প্রতিশ্রুতিই তো দিয়েছিল, কটা পূরণ করেছে! ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা অ্যাকাউন্টে, দেয়নি। গ্যাসের দাম আকাশছোঁয়া। এখানে এসে টাকা দিয়ে ভোট কিনছে। মা-বোনেদের বলছি, টাকা দিয়ে ভোট কেনা যায় না। আপনাদের টাকা দিলে টাকাটা নিয়ে নিন। ভোটটা কিন্তু অন্য জায়গায় দেবেন। প্রধানমন্ত্রীকে বলুন, দিদি আমাদের ফ্রিতে চাল দেয়, আপনি আমাদের ফ্রিতে গ্যাস দিন, নয়তো বেরিয়ে যান।’ এখানেই থামেননি মমতা। পাল্টা বললেন, ‘আমরা যদি জিতে আসি বাড়ি বাড়ি রেশন যাবে। সব ফ্রি। স্বাস্থ্য ফ্রি, রাস্তা ফ্রি, শিক্ষা ফ্রি। মা-বোনেদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের অধীনে প্রতি মাসে পাঁচশো থেকে হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য দেওয়া হবে দশ লক্ষ টাকার ক্রেডিট কার্ড।’
এদিনও জয় নিয়ে প্রত্যয়ী মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমার একটা পা গিয়েছে। কিন্তু অন্য় পা’টা জখম নয়। আর আপনারা মা-বোনেরা যে পায়ে হেঁটে এসেছেন ওতেই তো তিনটে করে পা হয়ে গেল। আপনাদের পা গুলোকে আমি প্রণাম করি। খেলা হবেই। আমি তো জিতবই। কিন্তু আমাদের পাঁচ প্রার্থীকে আপনারা জেতাবেন। তবেই তো আমাদের সরকার আসবে। আমরা আছি বলেই তরাই-ডুয়ার্সে শান্তি আছে। আমরা শান্তির দাবিদার। মনে রাখবেন, ওরা ভয় দেখাবে, আপনারা ভয় পাবেন না। ভোট দেবেন, নির্ভয়ে ভোট দেবেন। গুন্ডামি দিয়ে ভোট জেতা যায় না। জেনে রাখুন, নির্বাচনে জিততে বুদ্ধি লাগে আর লাগে ভালবাসা।’ তৃণমূল সুপ্রিমোর দাবি, এই আবেগ-ভালবাসার ধারক-বাহক তাঁর দলই। অন্য কেউ নয়।