Cooch Behar Professor’s Death: অনলাইন সংস্থা থেকে মোটা টাকার ঋণ, সামলাতে না পেরে চূড়ান্ত পদক্ষেপ? অধ্যাপক-মৃত্যুতে নয়া মোড়

Unnatural Death: কোচবিহারের এবিএন কলেজের অস্থায়ী শিক্ষক উত্‍পল তাঁঁর স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে শহরেই বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন। আদি বাড়ি দিনহাটার গোসানিমারিতে। মঙ্গলবার থেকেই কারুর কোনও সাড়াশব্দ পাচ্ছিলেন না প্রতিবেশীরা

Cooch Behar Professor's Death: অনলাইন সংস্থা থেকে মোটা টাকার ঋণ, সামলাতে না পেরে চূড়ান্ত পদক্ষেপ? অধ্যাপক-মৃত্যুতে নয়া মোড়
মৃত অধ্য়াপক ও তাঁর স্ত্রী, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 19, 2021 | 3:12 PM

কোচবিহার: অনলাইন সংস্থা থেকে মোটা টাকার ঋণ নিয়েছিলেন অধ্যাপক উত্‍পল বর্মণ। কিন্তু সেই ঋণের চাপ সহ্য করতে না পেরে অবশেষে চূড়ান্ত পদক্ষেপ করেন তিনি। হাতে উঠে আসা তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে অন্তত এমনটাই অনুমান করছেন তদন্তকারীরা। ইতিমধ্যেই কোচবিহারের অধ্যাপক উত্‍পল বর্মণের সপরিবার মৃত্যুর ঘটনায় (Unnatural Death) নয়া তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে। ঋণ সংস্থার পাঠানো একটি মেসেজও পেয়েছেন তদন্তাকারীরা। সেই মেসেজ এসে পৌঁছেছে TV9 বাংলার হাতেও।

কী সেই বিতর্কিত মেসেজ? ওই মেসেজে মৃত অধ্যাপকের একটি ছবি ও প্যান কার্ড সংযুক্ত করে লেখা হয়েছে, “Hlo Sir/Madam, this massage is from LIGHTNING APP application . Do you know this person have taken a loan from LIGHTNING APP application . By giving your referance number . If you know kindly tell them to remove your number from reference .” আর এই মেসেজটিকে কেন্দ্র করেই তদন্তকারীদের হাতে এসেছে নানা তথ্য।

পুলিশ জানিয়েছে, এই মেসেজগুলি পাঠানো হয়েছিল উত্‍পলবাবুর বন্ধুদের ও বেশ কিছু সহকর্মীদেরও। ম্যাসেজ ছাড়াও অনলাইনে বেশ কিছুজনকে উত্‍পলবাবুর ঋণ নেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছিল। উত্‍পলবাবুর বেশ কিছু সহকর্মী জানিয়েছেন, ঋণের বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে সম্প্রতি কথা বলতে চেয়েছিলেন উত্‍পল। তাঁরা আশ্বাসও দিয়েছিলেন সহযোগিতা করার। কিন্তু, তারপরে উত্‍পল যে এমন ঘটনা ঘটাবেন তা ভাবতে পারেননি কেউ। তবে উত্‍পল যে কোনও বড় সমস্যায় পড়েছেন সে বিষয়ে বেশ বুঝতে পেরেছিলেন সকলেই।

বৃহস্পতিবার, নিজেদের ভাড়া বাড়িতে অধ্যাপক উত্‍পল, তাঁর স্ত্রী ও পুত্রের নিথর দেহ আবিষ্কার হয়। একটি ঘরে সিলিঙ থেকে ঝুলছিল উত্‍পলের দেহ। হাত হেডফোনের তার দিয়ে বাঁধা। পাশের ঘরেই পড়েছিল স্ত্রী ও পুত্রের রক্তাক্ত মৃতদেহ। ঘর থেকেই উদ্ধার হয়েছিল একটি ১২ পাতার সুইসাইড নোট।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ১২ পাতার ওই সুইসাইড নোটে উত্‍পল উল্লেখ করেছেন, অনলাইনে তিনি আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু, কীধরনের আসক্তি তা লেখেননি। জেরায়, উত্‍পলের বন্ধুরা জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরে তাঁরা উত্‍পলের ব্যাপারে ফোনে বেশ কিছু মেসেজ পাচ্ছিলেন। সেগুলির মধ্যে বেশ কিছু ‘অশ্লীল’ মেসেজও ছিল। সেই মেসেজগুলি দেখে সে  বিষয়ে তাঁরা উত্‍পলকে জিজ্ঞেসও করেছিলেন। কিন্তু, অধ্যাপক নাকি গোটা বিষয়টি এড়িয়ে যান। এরপরেই নাকি খবর আসে পরিবার-সহ ‘আত্মঘাতী’ হয়েছেন উত্‍পল।

সুইসাইড নোটে ঠিক কী লিখেছেন উত্‍পল? লিখেছেন, “অনলাইনে আসক্ত হয়ে পড়ছিলাম। আমার স্ত্রী-পুত্র আমাকে ছাড়া বাঁচবে না। তাই তাদের মেরে নিজে আত্মহত্যা করছি।” লকডাউনে বেশ কিছুটা আর্থিক চাপ ছিল  বলেও সুইসাইড নোটে উল্লেখ করেছেন উত্‍পল। তবে, ওই ১২ পাতার সুইসাইড নোটে আর কী কী রয়েছে তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি চলছে জিজ্ঞাসাবাদও।

কোচবিহারের এবিএন কলেজের অস্থায়ী শিক্ষক উত্‍পল তাঁঁর স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে শহরেই বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন। আদি বাড়ি দিনহাটার গোসানিমারিতে। মঙ্গলবার থেকেই কারুর কোনও সাড়াশব্দ পাচ্ছিলেন না প্রতিবেশীরা। এদিকে বাড়িতেই ছিলেন সকলেই। বুধবার সকালেও কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে সন্দেহ হয় বাড়ির মালিকের। তিনি খবর দেন প্রতিবেশীদের।

পুলিশ এসে দরজা ভেঙে দেখে, ঘরের মধ্যে  সিলিঙ থেকে ঝুলছে উত্‍পলের নিথর দেহ। পাশের ঘরেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে তাঁরই স্ত্রী-পুত্রের নিথর দেহ। এদিকে, হেডফোনের তার দিয়ে বাঁধা ছিল উত্‍পলের। যা দেখে মূলত সন্দেহ হয় পুলিশ কর্তাদের। উত্‍পল যদি আত্মঘাতী হয়ে থাকেন তবে কী করে হেডফোন দিয়ে বাঁধা ছিল হাত যা নিয়ে ধন্দ দেখা দেয় তদন্তকারীদের একাংশের।

ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছন পুলিশ সুপার সুমিত কুমার। তিনি গোটা ঘটনা পরিদর্শন করেন। ঘর থেকে উদ্ধার হয় ১২ পাতার একটি সুইসাইড নোট। পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, ওই সুইসাইড নোটে লেখা রয়েছে, প্রথমে স্ত্রীকে খুন করেন উত্‍পল। ছেলে সেই খুনের ঘটনা দেখে নেওয়ায় তাকেও খুন করেন। শেষে নিজে আত্মহত্যা করেন। সুইসাইড নোটে, শেষে সুইসাইড নোটের শেষে লেখেন, “চললাম”। তবে, আদৌ এই সুইসাইড নোট আদৌ উত্‍পলের লেখা কি না, এর নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মৃতের বেশ কিছু পরিজন জানিয়েছেন, অত্যন্ত ভদ্র স্বভাবের ছিলেন উত্‍পল। সকলের সঙ্গেই সদ্ভাব রেখে চলতেন। কারোর সঙ্গেই কোনও বিরোধ ছিল না। তবে, কিছুদিন যাবত্‍ বেশ কিছু অ্যাপস থেকে টাকা নিয়েছিলেন উত্‍পল। সেইসব অ্যাপ থেকে টাকা লেনদেনের খবর জানতেন মৃতের আত্মীয়রাও। কোনওকারণে অতিরিক্ত ঋণের জন্য এই চূড়ান্ত পদক্ষেপ কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

আরও পড়ুন: Howrah Businessman Murder Case: ভাই আগেই আত্মসমর্পণ করেছিলেন, এ বার সব্যসাচী মণ্ডল-হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার আরও ২