South Dinajpur TMC: একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি নিয়েই প্রকাশ্যে তৃণমূলের ‘অন্তর্কলহ’, বালুরঘাটে জোর চর্চা
South Dinajpur TMC: যদিও পড়ে রাজ্যের চাপে পড়ে তিনি নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। আবার জেলা সভাপতিদের চ্যালেঞ্জ করেই, বিপ্লব মিত্র ঘনিষ্ঠদের নিয়ে বালুরঘাটে সাংগঠনিক সভা করে বহিষ্কারের মুখে পড়েছিলেন তৃণমূলের বালুরঘাট শহর সভাপতি বিমান দাস।
দক্ষিণ দিনাজপুর: একুশে জুলাই, শহিদ দিবসকে সামনে রেখে বালুরঘাটের একটি অনুষ্ঠান ভবনে জেলা কিষাণ ক্ষেত মজদুর তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে প্রস্তুতিসভার আয়োজন করা হয়। আর তা কেন্দ্র করেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এই সভায় হাজির ছিলেন রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র। এছাড়াও হাজির ছিলেন বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক কুমার মিত্র, গঙ্গারামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান প্রশান্ত মিত্র, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা রায়, দক্ষিণ দিনাজপুর কিষাণ ক্ষেত মজদুর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মফিজউদ্দিন মিঁঞা-সহ অন্যান্য তৃণমূল নেতৃত্ব। যারা এদিনের প্রস্তুতি সভায় উপস্থিত ছিলেন তাঁরা সকলেই মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। অন্যদিকে এই সভাতেই অনুপস্থিত ছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি উজ্জ্বল বসাক, তৃণমূলের চেয়ারম্যান নিখিল সিংহ রায়, যুব তৃণমূল সভাপতি অম্বরিশ সরকার-সহ অন্যান্যরা। অর্থাৎ প্রস্তুতি সভাতেই জেলা তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে চলে এসেছে। যদিও গোষ্ঠীকোন্দলের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা ভাগাভাগি করে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে একুশের জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা করছেন। এখানে কোন্দলের কোনও ব্যাপার নেই।
যদিও বালুরঘাটের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে অন্য কথা। সূত্রের খবর, জেলা তৃণমূল সভাপতি উজ্জ্বল বসাক কিছুদিন আগেই বালুরঘাট টাউন তৃণমূল সভাপতি বিমান দাসকে দল বিরোধী কাজের জন্য দলীয় কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এই দিনের এই প্রস্তুতির সভার অন্যতম আয়োজক ছিলেন বিমান দাস। সেই জায়গা থেকেই তৃণমূলের জেলা সভাপতি-সহ তাঁর ঘনিষ্ঠরা এই সভা বয়কট করেন।
এই সভা চলাকালীন রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র বলেন, “বর্তমানে জেলা তৃণমূলের অবস্থা খুবই খারাপ। তাই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দায়িত্ব দিয়েছেন আবার মাঠে নামার জন্য। প্রত্যেক ব্লকে ব্লকে গিয়ে সংগঠনকে আবার চাঙা করতে হবে।” সেইমত তিনি প্রতিটি ব্লকে যাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা ঘিরে বেশ কয়েকদিন ধরেই জেলাতে তৃণমূল কার্যত দুই শিবিরে ভাগ হয়ে গিয়েছে। একদিকে বিপ্লব মিত্র ঘনিষ্ঠরা ও অন্যদিকে জেলা তৃণমূল সভাপতি উজ্জ্বল বসাক সহ বাকি নেতাদের ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়েছে। তবে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কয়েক মাস আগে থেকেই। বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক মিত্র, কার্যত তৃণমূল জেলা সভাপতির তালিকা মেনে এমসিআইসি ঘোষণা করবেন না বলে নিশ্চিত ছিলেন। সূত্রের খবর, তিনি বিপ্লব মিত্র ঘনিষ্ঠদেরই ওই পদে আনতে চেয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন।
যদিও পরে তিনি নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। আবার জেলা সভাপতিদের চ্যালেঞ্জ করেই, বিপ্লব মিত্র ঘনিষ্ঠদের নিয়ে বালুরঘাটে সাংগঠনিক সভা করে বহিষ্কারের মুখে পড়েছিলেন তৃণমূলের বালুরঘাট শহর সভাপতি বিমান দাস। আর এরপর থেকেই মিত্র ঘনিষ্ঠরা কার্যত চ্যালেঞ্জ করেই একের পর এক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।
কয়েকদিন আগেই এই নিয়ে বিবাদ চরমে ওঠে। তপনে ২১জুলাইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে তৃণমূলের সভার পাশেই, পাল্টা সভা করে বিপ্লব মিত্র অনুগামীরা। আর এতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তৃণমূল জেলা সভাপতি উজ্জ্বল বসাক। তিনি তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক করে ওই সভাকে ‘অবৈধ’ বলে ঘোষণা করেন।
ওই ‘অবৈধ’ সভায় উপস্থিত থাকা একদল নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই। জেলা কোর কমিটির এক সভা ডেকেছিলেন তিনি। সভাতে বিপ্লব মিত্রের ভাই প্রশান্ত মিত্র দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মফিজউদ্দিন মিঞা, আমজাদ মণ্ডল, তপন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রাজু দাস সহ বিপ্লব শিবিরের একদল গুরুত্বপূর্ণ নেতার নামে আলোচনা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ রাজ্যে পাঠানো হয়। রাজ্য সবুজ সঙ্কেত দিলে তবে নেওয়া হবে ব্যবস্থা।
ইতিমধ্যেই তৃণমূলের বদলে নাগরিক মঞ্চের নামে একুশে জুলাইয়ের প্রচার শুরু হয়েছে। খোদ জেলা সভাপতি উজ্জ্বল বসাক ও প্রাক্তন মন্ত্রী শংকর চক্রবর্তীর বাড়ির সামনেই নাগরিক মঞ্চের পক্ষ থেকে দেওয়াল লিখন করা হয়েছে। জানা যাচ্ছে, এর পেছনেও রয়েছেন মিত্র ঘনিষ্ঠরাই। এবিষয়ে ইতিমধ্যেই বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে নেতৃত্বের কাছে নালিশ জানিয়েছেন তৃণমূল যুব সভাপতি অম্বরিশ সরকার।
মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র বলেন, “একুশে জুলাইকে সামনে রেখে ভাগ ভাগ করে সভা করা হচ্ছে। তাই হয়তো সবাই এক সভায় উপস্থিত থাকতে পারছেন না। এছাড়া অন্য কোনও ব্যাপার নেই।”