Hindu-Muslim Muharram: এখানে মহরমে লাঠি খেলেন হিন্দুরাও, মন্দিরে পুজো দেন সংখ্যালঘুরা
Hindu-Muslim Muharram: মন্দিরের সেবাইত হরেন পাল জানান, এই গ্রামে হিন্দু ও মুসলিমের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ নেই। সবাই মিলেমিশে থাকেন।
জলপাইগুড়ি: এ যেন এক অন্য মহরম। এই মহরম পালনে ধর্মের গণ্ডি নেই। এই মহরমে লাঠি খেলেন হিন্দুরাও। আবার লাঠি খেলার আগে মন্দিরে পুজো দেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁদের হাতে লাঠি তুলে দেন হিন্দুরাই। এটাই রীতি। বহু বছর ধরে এমনই হয়ে আসছে পাহাড়পুর কারবালা ময়দানে। জলপাইগুড়ির এই মাঠ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির তীর্থস্থান। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রথা মেনে হিন্দুদের হাত থেকে লাঠি নিয়েই শুরু হয় লাঠিখেলা।
জলপাইগুড়ির পাহাড়পুর গ্রামপঞ্চায়েতের এই মাঠকে মহরমের মাঠ বলেই চেনেন সবাই। কথিত আছে আজ থেকে বহু বছর আগে এক পরিবার এই জমিতেই গ্রাম ঠাকুরের মন্দির নির্মাণ করেছিল। তারপর জমিটি মন্দির কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হয়। এদিকে, এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের মহরমে খেলার কোনও মাঠ ছিল না। শোনা যায়, তাঁরা নাকি তখন সেই মন্দির কমিটির কাছে জমি ব্যবহার করার অনুমতি চায়। অনুমতি দেয় মন্দির কমিটি।
মন্দির কমিটি জমি না দিলে মুসলিমদের সে দিন লাঠি খেলা হত না। তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেই প্রতি বার মহরমের দিন গ্রাম ঠাকুরের পুজো দিয়ে তবেই মহরম উদযাপন করেন মুসলিমরা। শোনা যায়, সেদিন নাকি স্থানীয় হিন্দু মানুষজনও লাঠি খেলায় সামিল হয়েছিল। সেই থেকে আজও বজায় আছে সেই প্রথা।
শনিবার ছিল মহরম। পরম্পরা মেনেই গ্রাম ঠাকুরের পুজো দেন হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ। এরপর সন্ধ্যায় নীরবতা পালন করেন তাঁরা। তারপর দুই সম্প্রদায় মিলে শুরু হয় লাঠি খেলা। শনিবার কারবালা ময়দানে উপস্থিত হয়েছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবী তথা প্রাক্তন প্রধান কৃষ্ণ দাস। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য বিমলা ছেত্রী রায় ও জেলাপরিষদের নব নির্বাচিত সদস্য প্রণয়িতা দাসও উপস্থিত ছিলেন এদিন। ১৪টি দল লাঠিখেলায় অংশগ্রহণ করেছিল।
মন্দিরের সেবাইত হরেন পাল জানান, এই গ্রামে হিন্দু ও মুসলিমের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ নেই। সবাই মিলেমিশে থাকেন। বিয়ে হোক বা অন্নপ্রাশন, সব মানুষ মন্দিরে পুজো দেন। মহরম উপলক্ষেও পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা হয়। মহরম কমিটির বিশেষ উপদেষ্টা মকবুল হোসেন বলেন, “আমাদের মহরমের লাঠি খেলায় অংশ নেন হিন্দুরাও। সকলে মিলেমিশে লাঠি খেলে যে যার বাড়ি ফিরে যাই। আমাদের মধ্যে কোনও ভেদ নেই।”