Jalpaiguri: দোলের সময় কি জলপাইগুড়িতে ‘আত্মগোপন’ করেছিলেন শান্তনু? TMC নেতার বাড়িতে কাকে দেখেছিলেন এলাকাবাসী?
Jalpaiguri: স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, যে ব্যক্তিকে শান্তনু বলে তাঁরা সন্দেহ করছেন, তাঁকে দোলের সময়েও দেখা গিয়েছিল সন্দীপ সান্যালের বাড়িতে। দুর্গাপুজোর সময়েও ওই ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছিল বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।
জলপাইগুড়ি: নিয়োগ দুর্নীতিতে (Recruitment Scam) গ্রেফতার শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Shantanu Banerjee) নিয়ে জোর চর্চা রাজনৈতিক মহলে। গতকালই সাংবাদিক বৈঠক করে শান্তনুকে দল থেকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছে তৃণমূল। আর সেই শান্তনুর সঙ্গে এবার জলপাইগুড়ির যোগের তত্ত্ব উঠে আসছে। কী সেই জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) কানেকশন? শোনা যাচ্ছে, জলপাইগুড়ির এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে নাকি দোলের সময়ে এসে থেকে গিয়েছেন শান্তনু। জলপাইগুড়ি পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত পুলিশ লাইন সংলগ্ন রিজিওনাল ফরেনসিক ল্যাবরেটরি এলাকায় থাকেন তৃণমূল নেতা সন্দীপ সান্যাল। তিনি তৃণমূলের জলপাইগুড়ির ১০ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি। বিজেপির অভিযোগ, নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার শান্তনু নাকি সন্দীপ সান্যালের বাড়িতে এসে থেকে গিয়েছেন।
এমন গুঞ্জন ছড়াতেই টিভি নাইন বাংলার প্রতিনিধি পৌঁছে গিয়েছিলেন জলপাইগুড়ি পুলিশ লাইন সংলগ্ন রিজিওনাল ফরেনসিক ল্যাবরেটরি এলাকায়। এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে, জানা গেল তাঁরা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির কথা সংবাদমাধ্যম থেকে জেনে অবাক হয়ে গিয়েছেন। কেন? এলাকাবাসীরা বলছেন, সন্দীপ সান্যালের বাড়ির ব্যালকনিতে যাঁকে তাঁরা মাঝে মধ্যে দেখেছেন, সেই ব্যক্তির সঙ্গে শান্তনুর চেহারার অনেক মিল রয়েছে। সেই সময় তাঁরা বিষয়টি বুঝতে পারেননি। কিন্তু এখন সংবাদমাধ্যমে শান্তনুকে দেখার পর, তাঁরা বলছেন, এলাকার তৃণমূল নেতার বাড়ির ব্যালকনিতে যাঁকে তাঁরা দেখতেন, তিনি সম্ভবত শান্তনুই। কবে শেষবার দেখা গিয়েছিল শান্তনুকে? স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, যে ব্যক্তিকে শান্তনু বলে তাঁরা সন্দেহ করছেন, তাঁকে দোলের সময়েও দেখা গিয়েছিল সন্দীপ সান্যালের বাড়িতে। দুর্গাপুজোর সময়েও ওই ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছিল বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।
কে এই সন্দীপ সান্যাল? সন্দীপ বাবু জলপাইগুড়িতে তৃণমূলের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি। এলাকায় পার্থ সান্যাল নামেই অধিক পরিচিত তিনি। উত্তর বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমার্সে স্নাতকোত্তর। কলেজ থেকেই ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। জানা যাচ্ছে, সেই সময় এসএফআই করতেন। পরবর্তীতে ডিওয়াইএফআই-এর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন বলে জানা যায়। একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন, এখন অবশ্য পেশায় ঠিকাদার। বাংলায় রাজনৈতিক পালাবদলের পরে ২০১৩ সালে তৃণমূলে আসেন তৃণমূলে আসেন তৃণমূলের তৎকালীন জেলা সভাপতি চন্দন ভৌমিকের হাত ধরে। বর্তমানে তিনি যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলেই বর্তমানে পরিচিত।
বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক বুবাই করের অভিযোগ, ‘নিয়োগ দুর্নীতির জাল রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে আছে। খুব স্বাভাবিক ভাবে জলপাইগুড়ি জেলাতেও এজেন্ট রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম মাথা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জলপাইগুড়ির তৃনমূল নেতা সন্দীপ সান্যালের বাড়িতে মাঝেমধ্যে আসতেন। সন্দীপ সান্যালের বাড়ি পুলিশ লাইন এলাকায়।’ তবে বিজেপি নেতার বক্তব্য, ‘সন্দীপ সান্যালরা চুনোপুঁটি। আসলে এরা যাদের ছত্রছায়ায় থাকে, সেই অভিযুক্তদের খুব তাড়াতাড়ি চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে হবে।’যদিও কাদের দিকে তিনি ইঙ্গিত করছেন, সেই বিষয়টি অবশ্য খোলসা করেননি তিনি।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল সন্দীপ সান্যালের সঙ্গেও। তিনি অবশ্য, এইসব কথা অস্বীকার করেছেন। তৃণমূল নেতার দাবি, তিনি শান্তনুকে চেনেন। দু’একবার মিটিং এ দেখেছেন। ব্যস, এইটুকুই। স্থানীয় বাসিন্দারা যে সব কথা বলছেন, তাও ভিত্তিহীন বলে দাবি সন্দীপ সান্যালের। আর সন্দীপবাবু যে তৃণমূল যুব নেতার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, সেই সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাঁর বক্তব্য, এইসব বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। বিষয়টি সন্দীপ সান্যাল ওরফে পার্থর ব্যক্তিগত ব্যাপার বলেই এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি।
কিন্তু বিজেপির অভিযোগ এবং তারপর স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহের পর বেশ কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে। শান্তনুই কি সেই ব্যক্তি? যদি ওই ব্যক্তি শান্তনু না হন, তাহলে তিনি কে ছিলেন? সেই নিয়েও কিন্তু ধোঁয়াশা থেকে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ক্যামেরার সামনে কিছু না বললেও, সন্দীপবাবুর দাবি তাঁর আত্মীয় এসেছিল। তবে এই শান্তনুর জলপাইগুড়ি যোগের গুঞ্জন ক্রমেই ছড়াচ্ছে জেলার রাজনীতির অন্দরমহলে।