Jalpaiguri: TV9 বাংলার খবরের জের! ই-চালানে পাচার রুখতে দিনভর অভিযানে ভূমি সংস্কার দফতর
Sand Smuggling: মেটেলি ব্লকের ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে খবর, অবৈধ পাচার রুখতে ইতিমধ্য়েই দিনভর অভিযানে নেমেছে পুলিশ। লাটাগুড়িমুখী ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের গরুমারা অভয়ারণ্য গেট এলাকায় ট্রাক ও ডাম্পারদের দাঁড় করিয়ে এদিন চালান পরীক্ষা করা হয়
জলপাইগুড়ি: টিভি নাইন বাংলার খবরের জেরে অবশেষে ই-চালানের মাধ্যমে বালি পাচার রুখতে তত্পর হল প্রশাসন। মেটেলি ব্লকে বেশ কিছুদিন ধরেই অবাধে চলছিল অবৈধ বালি ব্যবসা (Sand Smuggling)। বালি পাচার করতে ব্যবহার করা হচ্ছিল জাল ই-চালান। ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মীদের তত্পরতায় ও টিভি নাইনের খবরের জেরে বেশ কিছু ওভারলোডেড গাড়ি ধরাও পড়ে। এরপরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
মেটেলি ব্লকের ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে খবর, অবৈধ পাচার রুখতে ইতিমধ্য়েই দিনভর অভিযানে নেমেছে পুলিশ। লাটাগুড়িমুখী ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের গরুমারা অভয়ারণ্য গেট এলাকায় ট্রাক ও ডাম্পারদের দাঁড় করিয়ে এদিন চালান পরীক্ষা করা হয়। সূত্রের খবর, এখন থেকে নিয়ম করেই এই অভিযান চলবে। মেটেলি ব্লকের রেভিনিউ অফিসার দীপঙ্কর রায় বলেন, “মেটেলি থানার পুলিশের সহযোগিতায় এই অভিযান হল। এখনও পর্যন্ত দুটি ওভারলোড ডাম্পার আটক করা হয়েছে। এই অভিযান চলতেই থাকবে। অবৈধ বালি পাচার রুখতেই এই বিশেষ উদ্যোগ।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বালি মাফিয়ারা এ বার সরকারি ই-চালান জাল তৈরি করে বালি পাচার করছে। আরও নিঁখুতভাবে ই-চালান জাল করে সেই জাল চালান দিয়েই বালির পাশাপাশি বালি, পাথরের গাড়ি ওভারলোড করে পাচার হয়ে যাচ্ছে। পাচার রোধের অভিযানে নেমে এমনই তথ্য উঠে এল ভূমি সংস্কার আধিকারিকদের হাতে। শুক্রবার মেটেলি ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর বিশেষ অভিযান চালিয়ে ওই জাল ই-চালানের হদিশ মিলেছে।
ঠিক কীভাবে কাজ করছে বালি মাফিয়ারা? ভূমি সংস্কার দফতরের তরফে জানা গিয়েছে, নতুন নিয়মে বালি ব্যবসায়ীরা কতটা বালি তুলবেন তা পুরোটাই সরকারি নজরে আনতে তত্পর হয়েছে প্রশাসন। ই-চালান ছাড়া তোলা যাবে না বালি। সেই চালানে রয়েছে ব্যবসায়ীর নাম, কত পরিমাণ বালি তোলা হচ্ছে তার হিসেব ও একটি বিশেষ কিউ-আর কোড। সেই কিউ-আর কোড সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত হবে সরকারি দফতর দ্বারা। কিন্তু, অভিযোগ, বালি মাফিয়ারা ওই কিউ-আর কোডটিও জাল করে নিচ্ছে। ফলে জাল চালান দিয়েই প্রচুর পরিমাণে বালি তোলা হচ্ছে।
শুক্রবার মেটেলি ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর বিশেষ অভিযান চালিয়ে ওই জাল ই-চালানের হদিশ মেলে। দু’মাস নদী থেকে বালি, বজরি, বোল্ডার উত্তোলন বন্ধ থাকার পর গত ৭ অক্টোবর থেকে সরকারি নির্দেশে ই-চালানের মাধ্যমে নদী পণ্য পরিবহণের নির্দেশ জারি হয়।
শুক্রবার মেটেলি ব্লক ভূমি সংস্কার দফতরের একটি দল বাতাবাড়ি লাটাগুড়িমুখী ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের গরুমারা অভয়ারণ্য গেট এলাকায় অভিযান শুরু করে। বালি, বজরি, বোল্ডার পরিবহণকারী ট্রাক আটকে তাদের ই-চালান পরীক্ষা করে। কিন্তু একটি ট্রাকের ই-চালানের কিউআর কোড পরীক্ষা করার পর কর্মীরা বুঝতে পারে গাড়িতে যে ই-চালানের কাগজ রয়েছে তার সঙ্গে কিউআর কোডের তথ্যের কোনও মিল নেই। গাড়ির নম্বর ও পণ্য পরিবহণের তারিখের অমিল রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ওই ট্রাকটিকে আটক করেন আধিকারিকরা।
নদী থেকে অবৈধ বালি উত্তোলন কোনও নতুন ঘটনা নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে এই অবৈধ বালি উত্তোলন করা হয়েছে। এক প্রশাসনিক আধিকারিক জানিয়েছেন, নদীতীরে ১০০ মিটার দূরে দূরে বালি তোলায় বরাবরই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু বহু জায়গাতেই ১০০ মিটারের মধ্যে বালি তোলা হচ্ছে। অনেক জায়গায় আবার জলপ্রবাহ রুখে নদীর মাঝবরাবর বাঁধ দেওয়া হচ্ছে। ফলে পাড় ঘেঁষে জলস্রোত বইতে থাকায় ভূমিক্ষয় ঘটছে।
বালি মাফিয়া রুখতে কড়া পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার। নতুন স্যান্ড মাইনিং পলিসির কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে মমতা জানান, বালি খনন নিয়ে অনেক অভিযোগ সামনে আসছে। তাই ‘স্যান্ড মাইনিং পলিসি ২০২১ আনা হয়েছে। স্থানীয় মাফিয়ারা বালি, কয়লা, পাথর পাচার করে বলে অনেক জায়গায় অভিযোগ উঠেছে। আবার কাউকে খননের দায়িত্ব দিলে তিনি চারগুণ বেশি খনন করে নেন। ফলে প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। এতদিন কেবল জেলাশাসকের হাতেই খননের দায়িত্ব থাকত। সেই দায়িত্ব এ বার মাইনিং কমিটির হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মুখ্য়মন্ত্রী।
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh: তৃণমূলে যোগ না দিলে খেলায় ‘না’! লিয়েন্ডার নিয়ে বিস্ফোরক দিলীপ