দেবীচৌধুরানীর ছায়াসঙ্গী ছিলেন ভবানী পাঠক। এই দুজনকে ঘিরে জলপাইগুড়ি জেলায় ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র গল্প। সেই সব কাহিনীতেই শোনা যায় বৈকন্ঠপুর জঙ্গলের কথা। এই জঙ্গলের একটি এলাকা দিল্লিভিটা চাঁদের খাল। প্রতি বছর পৌষ পূর্ণিমায় একদিনের বনদুর্গার পুজোয় সেখানে মাতে ভক্তরা। এবছরও তার ব্যতিক্রম হল না। নামল লাখো মানুষের ঢল।
কথিত আছে জলপাইগুড়ি রাজগঞ্জ ব্লকের বৈকন্ঠপুরের জঙ্গলের ভিতর এই এলাকায় সন্ন্যাসী হাট নামে একটি গ্রাম রয়েছে। দেশপ্রেমিক সন্ন্যাসীদের নিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াই শুরু করার আগে ভবানী পাঠককে সঙ্গে নিয়ে দেবীচৌধুরানী সেই গ্রামেই সভা করেছিলেন।
স্থানীয় রাজবংশী মানুষেরা বহু দিন আগে থেকেই এই পুজো শুরু করেছিলেন। কিন্তু তখন এই পুজো ঠুনঠুনির পুজো নামে পরিচিত ছিল। গত ৪১ বছর ধরে এলাকাবাসী কমিটি গড়ে ঠুনঠুনির পুজোকেই বনদুর্গা রুপে পুজো করে আসছেন। সেই পুজো এবার ৪২ বছরে পা দিল।
বৈকন্ঠপুরের জঙ্গলের এই এলাকা আসলে হাতির করিডর। দিনে রাতে যখন তখন বৈকন্ঠপুর থেকে গজলডোবা হয়ে সরস্বতীপুর চা বাগান কিংবা কাঠামবাড়ির দিকেও হাতি চলাচল করে। তবুও হাতির ভয়কে উপেক্ষা করেই প্রতি বছর এই পুজো উপলক্ষ্যে মেলা বসে।
প্রতি বছর এই পুজো রাতে অনুষ্ঠিত হত। কিন্তু বর্তমানে বনদফতরের তরফে নিষেধ থাকায় দিনেই পুজো হচ্ছে। কমিটির সদস্য রাজু সাহা জানান, এবছর পুজো এবার ৪২ বছরে পা দিল। তিনি গত ১৭ বছর ধরে তিনি এই পুজো কমিটির সঙ্গে যুক্ত। তবে তাঁর দাবি, যোগাযোগ ব্যবস্থার খামতি রয়েছে, প্রশাসন সে দিকে নজর দিলে ভাল হয়।
এই এলাকার সঙ্গে কি দেবীচৌধুরানীর আদৌ কোনও যোগাযোগ ছিল? বৈকন্ঠপুরের গবেষক উমেশ শর্মা এ প্রসঙ্গে বলেন, মনে করা হয় ভবানী পাঠক ছিলেন উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। সেই সময় স্থানীয় মানুষেরা উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দাদের দিল্লি ভিটার বাসিন্দা বলতেন। তাই এই নাম প্রচলিত। আসলে বৈকন্ঠপুরের খরখরিয়া হাট সংলগ্ন নিম নদীর ধারে ওই এলাকার নাম চাঁদের হাট। সেখানেই নাকি ভবানী পাঠক থাকতেন। তাই এলাকাটি দিল্লিভিটা চাঁদের খাল নামে পরিচিত হয়ে ওঠে, আসলে এই নাম ডাকাতদের দেওয়া একটি সাংকেতিক নাম।
তিনি আরও জানান, কথিত আছে দেবী চৌধুরানীর চাঁদ নৌকা এখানে অবস্থিত নিম নদীর ঘাটে এসে ভিড়ত। তিস্তা পারের বৈকন্ঠপুর এলাকার জঙ্গলে ও গ্রামে দেবীচৌধুরানীর আসা-যাওয়া ছিল বলেও শোনা যায়। স্যার যে ডি হুকার ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখায় এই জায়গার উল্লেখ পাওয়া যায়। তাঁর দাবি, বঙ্কিমচন্দ্রের বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায় এই স্থান।