অভাবের পাহাড় ডিঙিয়ে সংঘের প্রবেশ ও ছত্রধরের প্রত্যাবর্তন, কোন দিকে জঙ্গলমহলের মন?

পালাবদলের দল বছর পর ২০২১ সালে দাঁড়িয়েও পানীয় জলের অভাব এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় জঙ্গলমহলের একটি বড় অংশের অধিবাসীদের। উপরন্তু লেখাপড়ার উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব, রোজগারের পর্যাপ্ত সংস্থান না থাকা, কৃষিজমির খারাপ মান থেকে আধুনিক প্রযুক্তির অভাব। সব মিলিয়ে জেরবার জঙ্গলমহল।

অভাবের পাহাড় ডিঙিয়ে সংঘের প্রবেশ ও ছত্রধরের প্রত্যাবর্তন, কোন দিকে জঙ্গলমহলের মন?
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Updated on: Mar 25, 2021 | 11:41 PM

ঝাড়গ্রাম: ‘জঙ্গলমহল হাসছে’। তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের কাছে খুব আপন এই শব্দবন্ধ বিষিয়ে উঠেছিল ২০১৯ সালে। লোকসভ ভোটে যে ধাক্কা ঘাসফুল শিবির খেয়েছিল, তা মেরামত করার কম চেষ্টা হয়নি। লাভ কতটা হয়েছে তা বোঝা যাবে আগামী ২ মে। তবে একদা বামেদের শক্ত ঘাঁটি থেকে মমতার তুরুপের তাস হয়ে ওঠা মাওবাদী আন্দোলনের চেনা গড় ঝাড়গ্রামের বাসিন্দাদের মনে বর্তমানে জমেছে অভিযোগের পাহাড়।

অভিযোগ তো আর কম নেই। পালাবদলের দল বছর পর ২০২১ সালে দাঁড়িয়েও পানীয় জলের অভাব এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় জঙ্গলমহলের একটি বড় অংশের অধিবাসীদের। উপরন্তু লেখাপড়ার উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব, রোজগারের পর্যাপ্ত সংস্থান না থাকা, কৃষিজমির খারাপ মান থেকে আধুনিক প্রযুক্তির অভাব। সব মিলিয়ে জেরবার জঙ্গলমহল।

আর এই অভাব-অভিযোগ এবং অনুযোগের ফাঁক দিয়েই সন্তর্পণে জঙ্গলমহলে প্রবেশ করে আরএসএস। সালটা ২০১৪। লোকসভা ভোটে বিরাট ব্যবধানে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর তখন চতুর্দিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা সপ্তমে। সেই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ও নিত্যদিনের অভাব অভিযোগ হাতিয়ার করে সাঁওতাল-কুর্মিদের আদিবাসী গড়ে ঢুকে পড়ে আরএসএস। ঘরে ঘরে পানীয় জল পৌঁছনোর ব্যবস্থা, চাষবাসে জরুরি পরামর্শ, এলাকায় স্কুল খোলা, সবেতেই মুশকিল আসানের পথ বাতলে দেয় সংঘ।

এর ফলও মেলে হাতেহাতে। ২০১১, ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে অনেকটাই বিজেপির দখলে চলে যায়। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটেও সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে পাঁচটি আসনেই এগিয়ে যায় পদ্মশিবির। যা দেখে এ বারের ভোটেও আশাবাদী হয়ে রয়েছে মুরলীধর সেন লেন। তবে ভুলে গেলে চলবে না, এরই মধ্যে জঙ্গলমহলে ঘাসফুলের প্রতীকে প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন জনসাধারণ কমিটির প্রাক্তন নেতা ছত্রধর মাহাতো। জঙ্গলমহলে তাঁর একছত্র আধিপত্য সম্পর্কে রাজনৈতিক মহল ওয়াকিবহাল। এই অবস্থায় জঙ্গলমহলের মন কোনদিকে যায় তার উপর অনেকটাই নির্ভর করবে একুশের ফলাফল।

তবে তার আগে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক বর্তমানে ভোট বিন্যাসের দিক থেকে কোথায় দাঁড়িয়ে।

২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে ১৫ হাজার ২৭৩ ভোটে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী সুকুমার হাঁসদা। সেবার নির্দল প্রার্থী হিসেবে ছত্রধর মাহাতো তৃতীয় স্থানে ছিলেন। ২০১৬ বিধানসভা ভোটে ৫৫ হাজার ২২৮ ভোটে জয়ী তৃণমূলের সুকুমার হাঁসদা। দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর চুনীবালা হাঁসদা। কিন্তু ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোট থেকেই হাওয়া বদল শুরু হয়। ৮০৬ আসনের ৮০৫ টিতে লড়াই হয়। ৩৯৯ আসনে তৃণমূল জয়লাভ করে, বিজেপির দখলে যায় ৩২৯ টি। বামেদের দখলে থাকে ১৪ টি।

আরও পড়ুন: মতুয়া মন পেতেই কি মোদীর বাংলাদেশ সফরে গন্তব্য ওড়াকান্দি?

২০১৯ লোকসভা ভোটে লড়াইতে ছবিটা আরও পরিষ্কার হয়। বিধানসভা আসনের ভিত্তিতে বিজেপি নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর, ঝাড়গ্রাম, গড়বেতা, বান্দোয়ান আসনে এগিয়ে যায়। তৃণমূল এগিয়ে ছিল কেবল শালবনি ও বিনপুরে।

একুশের লড়াইয়ে তাই মিশন ঝাড়গ্রাম। তফশিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত কেন্দ্রে লেগেই রয়েছে হাইভোল্টেজ প্রচার, হেভিওয়েট নেতামন্ত্রীদের যাতায়াত। লাগাতার জনসভা অমিত শাহ, রাজনাথ সিং, জেপি নাড্ডাদের। নড়েচড়ে বসে প্রতিশ্রুতির ঝুলি উপুড় মমতারও। জল সরবরাহ, বিনামূল্যে রেশন থেকে কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা, আশ্বাস রয়েছে সবেরই। তবে জঙ্গলমহলের মন পাবে কে? সবার নজর এখন সেদিকেই।

আরও পড়ুন: কত শতাংশ মুসলিম ভোট দিতে পারেন বিজেপিকে? মমতার পক্ষে হিন্দুদের সমর্থন কতটা?