শুক্রবার খুলছে, সংশয় কাটিয়ে আদৌ কতটা প্রস্তুত রাজ্যের স্কুলগুলি?

ছেলেমেয়েদের পুরনো রুটিনে ফিরিয়ে আনতে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে অভিভাবকদেরও, বলছেন মনোবিদরা। তাঁদের বক্তব্য, পরিস্থিতি যত স্বাভাবিক হবে, ধীরে ধীরে কাটবে সংশয়ও।

শুক্রবার খুলছে, সংশয় কাটিয়ে আদৌ কতটা প্রস্তুত রাজ্যের স্কুলগুলি?
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Feb 12, 2021 | 11:20 AM

কলকাতা: টিফিন শেয়ার কতদিন হয়নি, এক বছর ধরে কত না বলা কথা জমে রয়েছে মনে, স্কাইপ বা হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিয়ো কলে কতটুকুই বা কথা হয়! প্রায় এক বছর পর স্কুলে যাওয়ার আনন্দটাই আলাদা। সেই প্রস্তুতি, সেই ব্যস্ততা, সেই ছন্দে ফেরার আনন্দ। কিন্তু এসবের পরেও একটা বিষয় কাজ করছে ছাত্রছাত্রী আর অভিভাবকদের মনে। করোনার সংশয় তো কাটেনি, স্কুলগুলো ঠিক কতটা প্রস্তুতি নিল, আর কতটাই বা নিতে পারল না? প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকদের চিন্তাটা খানিকটা হলেও বেশি। প্রশ্ন তো স্বাভাবিকভাবেই উঠছে, স্কুলে এখনই পাঠানো আদৌ কতটা নিরাপদ। শুক্রবার থেকে স্কুল শুরু হবে, কিন্তু এখনও দোলাচলে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া আর তাদের অভিভাবকরা।

প্রকোপ প্রতিরোধে স্কুলগুলিকে ঠিক কী ব্যবস্থা নিতে বলেছে রাজ্য সরকার

সরকারি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক ছাত্র, শিক্ষক, অস্থায়ী কর্মীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। দূরত্ববিধি মেনে ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীদের বসার ব্যবস্থা করতে হবে। কোনও ক্লাস ঘরে বেশি ছাত্রছাত্রী হয়ে গেলে তাদের জন্য পৃথক ঘরের ব্যবস্থা করতে হবে। এক সঙ্গে সমস্ত ছাত্রছাত্রীকে প্রার্থনা সভায় হাজির থাকতেও নিষেধ করা হয়েছে। প্রতিটি ক্লাসরুমে ছাত্রছাত্রীদের পৃথক ভাবে প্রার্থনা করার কথা বলা হয়েছে।

এর সঙ্গে অত্যাবশ্যকীয় স্কুলে নিয়মিত স্যানিটাইজেশন, ক্লাসে ঢোকার আগে পড়ুয়াদের থার্মাল চেকিং। করোনা পরিস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীদের কী করণীয়, সেই সংক্রান্ত সতর্কবার্তা ক্লাসগুলিতে টাঙিয়ে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

এবার দেখার স্কুলগুলি ঠিক কতটা ব্যবস্থা করতে পারল?

সেক্ষেত্রে আমরা রাজ্যের মানচিত্রের ভিত্তিতে তিনটি ভাগে স্কুলগুলিকে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করেছি। শহর, মফ্ফস্বল ও একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেছি আমরা। উঠে এসেছে বেশ কয়েকটি এক্কেবারে সাধারণ বিষয়।

প্রথমে শহর কলকাতার স্কুলগুলির কথা বলা যাক। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৪০ লক্ষ। সরকারিভাবে, প্রতিদিন স্কুল চালু রাখতে বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে, যে সব স্কুলে ছাত্র সংখ্যা প্রচুর তাদের পক্ষে বিভিন্ন ক্লাসে ভাগ করা কঠিন। শিক্ষক কম হলে ভাগ করে করা অসুবিধা। নিয়মিত স্যানিটাইজেশনে বিপুল খরচ, তাতে ফান্ড কে দেবে? ঝাড়ুদার নিয়োগ করার খরচ কে জোগাবে?

নিজস্ব চিত্র

যাদবপুর গার্লসের প্রধান শিক্ষিকা গৌরী ঘোষের মত, “প্রতিদিন স্যানিটাইজ করতে প্রচুর খরচ। আমাদের সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল। ওত ফান্ড কোথায়? শিক্ষক কম, তাতে ভাগ করে ক্লাস নিতেও সমস্যা হবে।”

এতো গেল শহরের সরকারি স্কুলের কথা, বেসরকারি স্কুলগুলির কী অবস্থা?

বেসরকারি স্কুলগুলি বেশ কিছুটা হলেও এগিয়ে। স্যানিটাইজেশনের ওপর বিশেষ নজর দিচ্ছে তারা। অত্যাধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করতে ঢালছে ঢালাও টাকা। সেক্ষেত্রে অবশ্য পক্ষান্তরে চাপ পড়ছে অভিভাবকদেরই ওপর।

এক্ষেত্রে ডিপিএস রুবি পার্ক দিন ভাগ করে ধাপে ধাপে ছাত্রছাত্রী আনবে। আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে নিয়মিত পরিষ্কার করা হবে স্কুল।

মফ্ফস্বল স্কুলগুলির ক্ষেত্রে চিত্রটা কীরকম?

পুরসভার পক্ষ থেকে স্কুলগুলিতে স্যানিটাইজেশন করা হচ্ছে। খড়দহের রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন বয়েজ স্কুল পুরসভার সাহায্য ছাড়াও নিজেরাও স্যানিটাইজেশন করছে। প্রত্যেকদিনই স্যানিটাইজ করা হবে । এছাড়া ছাত্রদের মাস্ক পরা ও নিজেদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ছাত্রদের অভিভাবকদের অনুমতি পত্র লাগবে ক্লাস করার জন্য। স্কুলের তরফ থেকে ছাত্রদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ও স্কুলের নানা নির্দেশিকার কপি পাঠানো হয়েছে।

প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলগুলির চিত্র

আমফানে বহু স্কুলের ক্ষতি হয়েছে। কোনও স্কুলের মিড ডে মিলের রান্নাঘর বা খাওয়ার ঘর ভেঙে পড়েছে। কোথাও আবার স্কুল ভবনের ছাউনি উড়ে গিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় প্রায় ৯৬৫টি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। যার অধিকাংশই আমফানের কারণে কোনও না কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেরকমই একটি স্কুল হল সুন্দরবনের জামতলা ভগবানচন্দ্র হাইস্কুল। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মারাত্মক I ব্লকের সেরা এই স্কুলটির গোছানো কনফারেন্স রুম,পানীয় জলের ট্যাঙ্ক, ছাত্রাবাস, রান্না ঘর ঝড়ে ভেঙে গিয়েছে। স্কুলের তরফে কেবল পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাকিটা সম্ভব হয়নি।

কুলতলিতে মোট ১৭ টি হাইস্কুল রয়েছে। এগুলিও খুলবে শুক্রবারই। সরকারি নির্দেশিকা আসায় প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে I ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্কুল স্যানিটাইজ করা হয়েছে । মাস্ক পরেই স্কুলে আসার নির্দেশিকা জারি হয়েছে। তবে প্রত্যন্ত গ্রামের এই স্কুলগুলিতে মাস্ক ও স্যানিটাইজার দেওয়া হবে পড়ুয়াদের।

আরও পড়ুন: মানুষ তো ছাড়ুন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে পাখিও ঢুকতে পারবে না বাংলায়: শাহ

স্কুল খোলা,স্কুলে যাওয়া, সংক্রমণকে এড়ানো- সবেতেই সংশয় রয়েছে পড়ুয়াদের মনে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তার থেকেও বেশি সংশয় রয়েছে অভিভাবকদের মনে। সেক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের পুরনো রুটিনে ফিরিয়ে আনতে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে অভিভাবকদেরও, বলছেন মনোবিদরা। তাঁদের বক্তব্য, পরিস্থিতি যত স্বাভাবিক হবে, ধীরে ধীরে কাটবে সংশয়ও।