দুয়ারে জল! নৌকায় পরিষেবা দিতে আসছে সরকার
Duare Sarkar: সম্প্রতি, নিম্নচাপের জেরে বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে বঙ্গ। গঙ্গায় ভাঙনের জেরে প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। সেই প্লাবন-পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি।
মুর্শিদাবাদ: দুয়ারে সরকারের শিবির চলছে। তবে, জমিতে নয়। নৌকায়। গোটা এলাকা জল থইথই। তারমধ্যেই নৌকার মধ্যে চলছে দুয়ারে সরকার শিবির। জলের মধ্যেই লাইন দিয়েছেন শতাধিক মানুষ। রঘুনাাথগঞ্জের ২ নম্বর ব্লকে এভাবেই চলছে রাজ্য সরকারের এই বহু প্রতীক্ষিত কর্মসূচি।
সম্প্রতি, নিম্নচাপের জেরে বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে বঙ্গ। গঙ্গায় ভাঙনের জেরে প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। সেই প্লাবন-পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর রঘুনাথগঞ্জ, চরবাজিতপুর, চরপিরোজপুর, রিফিউজিপাড়া-সহ একাধিক গ্রাম এখন জলের তলায়। কিন্তু, নিয়ম মেনে সরকারি কর্মসূচির পরিষেবা দিতে হবে। অগত্যা, নৌকায় চড়েই বানভাসি এলাকায় পৌঁছলেন রঘুনাথগঞ্জের ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা। কোথাও এক হাঁটু, কোথাও কোমর ছুঁইছুঁই জলে দাঁড়িয়েই দুয়ারে সরকারের জন্য আবেদন জমা দিলেন গ্রামবাসীরা।
দুয়ারে সরকার শিবিরে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম জমা দিতে আসা এক আবেদনকারি মহিলার কথায়, “চারিদিক জলে ডুবে রয়েছে। আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসাটাও একটা ঝামেলা। তাও জলের মধ্যেই এসেই ফর্ম জমা দিচ্ছি। অফিসারসাহেবরাও নৌকায় বসে ফর্ম জমা নিচ্ছেন। এছাড়া আর উপায় নেই। কী করা যাবে। বন্য়ায় তো সবই ভেসে গিয়েছিল। এখনও সেই জল নামেনি। রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ।”
রঘুনাথগঞ্জের ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক বলেন, “সীমান্ত বরাবর মোট চার-পাঁচটা গ্রামেরই এই অবস্থা। তাই বাধ্য হয়েই আমরা নৌকা নিয়ে ক্যাম্প করছি। যাতে সাধারণ মানুষকে সবরকম সুযোগ-সুবিধা দিতে পারি। দুয়ারে সরকারের যে যে পরিষেবাগুলি সাধারণ মানুষের প্রাপ্য় সেই পরিষেবাগুলির ব্যবস্থা করা হল। যতদিন না জল নামে ততদিন পর্যন্ত এভাবেই চলবে।”
রঘুনাথগঞ্জ, রিফিউজপাড়া-সহ সীমান্ত বরাবর চারটি গ্রাম ছিল প্রায় নদীগর্ভে। জল খানিকটা কমতেই শুরু হয়েছে নদীপারে ভাঙন। একাধিক বাড়ির দুয়ারে গঙ্গা। গত সপ্তাহে গঙ্গার জলস্তর চরম বিপদসীমা ২২.৫১ মিটারের সামান্য কম ছিল। তারপর জল কমলেও ভাঙন অব্য়াহত। রঘুনাথগঞ্জ সেচ দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “জল কমলে ভাঙন হবেই। স্পার বাঁধানোর কাজ শুরু না হলে এরকম ভাঙন হতেই থাকবে। বালির বস্তা ফেলে যতটুকু ঠেকানো যায় চেষ্টা হচ্ছে।”
গত ১৬ অগস্ট থেকে রাজ্যে চালু হয়েছে দুয়ারে সরকার কর্মসূচি। প্রকল্প চালু হওয়ার পরেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যে দুর্নীতি বিশৃঙ্খলার ছবি সামনে এসেছে, সেখানে এইভাবে সরকারি আধিকারিকদের পরিষেবা দিতে নৌকা করে গ্রামে পৌঁছে যাওয়ার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মহল। কিন্তু, প্রশ্ন উঠছে, বন্যা পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রিত নয় কেন? যদি, প্লাবন-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তবে কি এভাবেই চলবে সরকারি পরিষেবা দেওয়ার কাজ? রয়েছে আরও প্রশ্ন, ভাঙন না রুখলে যে-কোনও মুহূর্তে জলের তলায় চলে যেতে পারে আস্ত চারটি গ্রাম, সেক্ষেত্র কী পদক্ষেপ করা হবে? স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য় জানিয়েছেন, কিছুদিন ধরেই ভাঙছে নদী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ইতিমধ্যেই সেচ দফতর ও গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। দ্রুত এই পরিস্থিতির যাতে নিষ্পত্তি হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। আরও পড়ুন: ২০ মিনিট থানায়, বিষ্ণুপুরের ‘কত্তাবাবু’-র সঙ্গে ‘সৌজন্য সাক্ষাত্’ সৌমিত্রর!