Sagardighi Bye Election: উপনির্বাচনের ট্রেন্ড ভেঙে সাগরদিঘিতে বাম-কংগ্রেস জোটের জয়জয়াকার, পঞ্চায়েতের আগে নতুন সমীকরণ?
Sagardighi: সামনেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। তারপর ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনও রয়েছে। তার আগে বাম-কংগ্রেস জোটের এই জয় কি নতুন কোনও সমীকরণের জন্ম দেবে? এমন প্রশ্ন ইতিমধ্যেই ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে রাজ্য রাজনীতির অন্দরমহলে।
কলকাতা: খুব ব্যতিক্রমী ঘটনা ছাড়া, কোনও উপনির্বাচনের ফলাফল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শাসক দলের পক্ষেই যেতে দেখা যায়। দীর্ঘদিন ধরে এটাই ট্রেন্ড হয়ে এসেছে। কিন্তু সেই সমীকরণ এবার বদলে দিল সাগরদিঘির উপনির্বাচন। হাওয়া লেগেছে জোটের পালে। শাসক দল তৃণমূলকে পিছনে ফেলে জয়ী হয়েছেন বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস। বিজেপি আরও পিছনে, তৃতীয় স্থানে। সামনেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। তারপর ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনও রয়েছে। তার আগে বাম-কংগ্রেস জোটের এই জয় কি নতুন কোনও সমীকরণের জন্ম দেবে? এমন প্রশ্ন ইতিমধ্যেই ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে রাজ্য রাজনীতির অন্দরমহলে।
রাজনৈতিক কারবারিদের মতে, উপনির্বাচন নিয়ে সাধারণত কোনও দলই খুব একটা মাথা ঘামায় না। খুব ব্যতিক্রমী কিছু না হলে সাধারণত শাসকদলই ক্ষমতায় আসে। কিন্তু এবারের সাগরদিঘির উপনির্বাচনের প্রেক্ষাপট আলাদা। সামনেই পঞ্চায়েত ভোট, তারপর লোকসভা নির্বাচন। এদিকে রাজ্যের শাসক দলেরও একাধিক নেতা দুর্নীতির অভিযোগে গারদে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডলের মতো নেতারা গ্রেফতার হয়েছেন। দুর্নীতি ও বেনিয়মের অভিযোগে নাগাড়ে আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছে বিরোধী দলগুলি। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ, গরু পাচার কাণ্ড, কয়লা পাচার কাণ্ড থেকে শুরু করে একের পর এক অভিযোগ। এমন অবস্থায় সাগরদিঘির উপনির্বাচন অতীতের সমস্ত নজিরকে পিছনে ফেলে আসন হাতছাড়া হল তৃণমূলের।
জোড়়াফুলের প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে ২৫ হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়ে দিলেন বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস। আর এই উপনির্বাচনের ফল দেখে বেশ আত্মবিশ্বাসী বাম-কংগ্রেস শিবির। অতীত ও সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, সব নির্বাচনেই মুখ থুবড়ে পড়েছে বাম-কংগ্রেস জোট। কিন্তু সাগরদিঘির জোট অনেক সমীকরণই বদলে দিল বলে মনে করছেন রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। উল্লেখ্য, ২০২১ সালের নির্বাচনে সাগরদিঘিতে ভোটদানের হার ছিল ৭৮.৮৭ শতাংশ। আর উপনির্বাচনে ভোটের হার ৭৫.১৮ শতাংশ। এরমধ্যে বাম-কংগ্রেস জোট পেয়েছে ৪৮ শতাংশ আর তৃণমূল পেয়েছে মাত্র ১৯.৪ শতাংশ।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী তো বলেই দিলেন, ‘সাগরদিঘির ভোটের ফলাফলই প্রমাণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অপরাজেয় নন।’ সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম আবার বললেন, ‘মার্চ মাস, বসন্ত কাল, নতুন দিকের উন্মেষ ঘটছে। তার ইঙ্গিত দিচ্ছে ফলাফল। সাগরদিঘিতে বাংলার মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পেরেছে। এখন দেখা যাবে তৃণমূল বিজেপি আরও কাছাকাছি আসবে।’ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলছেন, ‘বাংলার এই জোট তাৎপর্যপূর্ণ। তৃণমূলের বিকল্প ভেবে অনেকেই বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু মানুষের সেই ভুল ধারনা ভেঙেছে।’
অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, সাগরদিঘিতে পারস্পরিক বোঝাপড়ায় ভোট ময়দানে নেমে যে সাফল্য এসেছে, তাতে উচ্ছ্বসিত বাম কংগ্রেস শিবির। বিধানসভায় এতদিন শূন্য হয়ে থাকা বাম-কংগ্রেস এবার সাগরদিঘিতে জয়ী হওয়ায় বাড়তি অক্সিজেন পেল, বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। এখন দেখার আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে কিংবা তারও পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে কতটা ছাপ ফেলতে পারে সাগরদিঘির এই সাফল্য।