Nadia child murder: দিদির সঙ্গে এসেছিল ছোট্ট ভাই, ৬ বছরের নাবালকের সঙ্গে স্বামীই যে এমন করবেন ভাবেননি শাহাজাদী
Nadia child murder: মোটরবাইক না এনে শ্যালককে সঙ্গে করে এনেছিলেন কেন, তা নিয়েই ক্ষোভ ছিল স্বামীর।
নদিয়া : দিদির বাড়ি বেড়াতে এসেছিল ভাই। সেখান থেকেই আচমকা নিখোঁজ হয়ে যায় সে। খোঁজ না পেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয় পরিবার। পরে নাবালকের পচা গলা মৃতদেহ উদ্ধার করে থানারপাড়া থানার পুলিশ। দিদির অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়। তারপরই পুলিশের হাতে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। নাবালককে খুন করে জঙ্গলে ফেলে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে খোদ জামাইবাবুর বিরুদ্ধে। পুলিশ জানতে পেরেছে শ্বশুরবাড়ির কাছে যে যৌতুক চেয়েছিলেন অভিযুক্ত, তা দিতে পারেনি পরিবার। সেই রাগেই শ্যালককে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
ছয় বছরের শ্যালককে গলা টিপে খুন করার অভিযোগ উঠেছে জামাইবাবু বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত বছর ২৪-এর সোহেল শেখকে শুক্রবারই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাড়ি থানারপাড়া থানা এলাকার সাহেবপাড়ার মালিতা পাড়ায়। মৃত নাবালকের নাম দিল ইসলাম (৬)। তার বাড়ি বিহারের পূর্ণিয়া জেলার গটপুর গ্রামে।
মৃতের দিদি জানিয়েছেন, সাড়ে তিন মাস আগে বিহারের পূর্ণিয়ার বাসিন্দা মহম্মদ মনিরুলের মেয়ে শাহজাদী বিবির সঙ্গে বিয়ে হয় সোহেলের। বিয়ের সময় শ্বশুরের কাছে সোহেলের দাবি ছিল, যৌতুক হিসাবে একটি মোটরসাইকেলের। এই নিয়ে মাঝেমধ্যে শাহাজাদীর সঙ্গে ঝামেলাও হত। মাসখানেক আগে শাহাজাদী বিহারে পূর্ণিয়ায় বাবার বাড়িতে বেড়াতে যান।
কয়েকদিন আগে সোহেলের বাবা সহিদুল শেখ বউমাকে আনতে বিহারে যান। সাত দিন আগে বিহার থেকে বউমাকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন সহিদুল বাবু। বউমাকে নিয়ে আসার সময় তার ছয় বছরের ছোট ভাই দিল ইসলামও দিদির সঙ্গে আসার জন্য বায়না করতে থাকে। বাধ্য হয়ে ভাইকে সঙ্গে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে আসেন শাহাজাদী বিবি।
সোহেলের প্রথম থেকে দাবি ছিল একটি মোটরসাইকেলের। বাবার বাড়ি থেকে ফেরার সময় সোহেলের স্ত্রী মোটরসাইকেল না নিয়ে এসে ভাইকে নিয়ে আসায় স্ত্রীকে মারধর করতে শুরু করেন সোহেল। এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতবিরোধ হয় বলেও জানিয়েছেন শাহাজাদী। মাঝেমধ্যে শ্বশুরকেও মোটরসাইকেলের জন্য ফোন করে চাপ দিতেন বলে অভিযোগ ওই যুবকের বিরুদ্ধে। তবে এর পরিণতি যে এত ভয়ঙ্কর হতে পারে তা ভাবেননি শাহাজাদী।
গত বুধবার বিকেলে ছোট্ট শ্যালক দিল ইসলামকে নিয়ে ধোড়াদহ বাজারে ঘুরতে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরন সোহেল। তারপর থেকে আর দিল ইসলামের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার পর আসল ঘটনা চাপা দিতে এলাকার লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন সোহেল নিজে। এমনকি বৃহস্পতিবার নিজের পয়সা খরচ করে বিভিন্ন এলাকায় শ্যালককে খুঁজতে মাইকিং শুরু করেন।
ঘটনাচক্রে ধোড়াদহ বাজারে এক ব্যবসায়ীর সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় বুধবার রাত ১০ টা নাগাদ সাইকেলে চেপে শিশুটিকে কাঁধে করে জলঙ্গী নদীর দিকে যাচ্ছেন সোহেল। সেই সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সোহেল শেখকে পুলিশ শনাক্ত করে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল স্বীকার করেন শ্বশুরবাড়ি থেকে স্ত্রী মোটরসাইকেল না এনে শ্যালককে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন, সেই ক্ষোভে ধোড়াদহ বাজারের কাছে স্কুলের পাঁচিলের আড়ালে ছোট শ্যালককে শ্বাসরোধ করে খুন করেন। খুনের পর কেউ যাতে সন্দেহ না করে তার জন্য সাইকেল করে নিয়ে গিয়ে জলঙ্গি নদী পেরিয়ে মুর্শিদাবাদের ডোমকল এলাকার দিকে ফুলবাড়ি নদীর পাড়ে জঙ্গলের মধ্যে ফেলে দেন দেহ। শুক্রবার বিকেলে থানারপাড়া থানার পুলিশ সোহেলকে সঙ্গে নিয়ে জলঙ্গী নদী পেরিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। শিশুটির পচা-গলা দেহ উদ্ধার হয়। শনিবার দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে।