Basirhat Clash:যাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে হজে গিয়েছিলেন, ফিরে দেখেন তিনিই রাজ করছেন! বসিরহাট গুলিকাণ্ড যেন সিনেমার প্লট
Basirhat Clash: নেপথ্যে উঠে আসছে সিরাজুল বেশ নামে এক তৃণমূল কর্মীর নাম। যদিও তৃণমূলেরই একাংশ তাঁর বিরুদ্ধে পথে নেমে দাবি করেছেন, সিরাজুল তৃণমূলের কেউ নন।
উত্তর ২৪ পরগনা: ক্ষমতা দখল আর ক্ষমতা জাহিরের লড়াই। আর তার জেরে রাতারাতি শিরোনামে বসিরহাটের সীমান্তবর্তী শাঁকচুড়া বাজার। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর রাজনৈতিক তরজাও। সোমবার রাতে গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে গুলিবিদ্ধ হতে হয়েছে এক পুলিশ কনস্টেবলকে। কাঁধের বাঁদিকে গুলি বিদ্ধ হয়েছেন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর ঘটনায় কাঠগড়ায় তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল। সিরাজুল বেশ নামে এক তৃণমূল কর্মীর নাম জড়িয়েছে। যদিও তৃণমূলেরই একাংশ তাঁর বিরুদ্ধে পথে নেমে দাবি করেছেন, সিরাজুল তৃণমূলের কেউ নন।
কিন্তু কে এই সিরাজুল বেশে? সেটার জন্য পিছিয়ে যেতে হবে এক যুগেরও বেশি সময় আগে। ঘটনাপরম্পরা পড়লে মনে হতেই পারে, এ যেন কোনও চলচিত্রের পট। ২০০৮ সালে কংগ্রেসের টিকিটে জেলা পরিষদের সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন সিরাজুল বেশে। ২০১১ সালে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। এলাকায় তাঁর প্রভাব ছিল তুঙ্গে। ২০১৬ সালে ছন্দপতন হয়। নিজের দায়িত্ব শাহানুর মণ্ডলকে বুঝিয়ে হজে দিয়েছিলেন সিরাজুল। ভরসা করেছিলেন তাঁকে। যখন ফেরেন, তখন এলাকায় শাহানুরের একচ্ছত্র আধিপত্য।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, তারপর থেকেই শুরু হয় ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার লড়াই। লড়াই জারির মাঝেই ব্লক সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হন নজরুল হক। নজরুলের ঘনিষ্ঠ সিরাজুল হাতে চাঁদ পান। ফের নিজের জায়গাটা তৈরি করছিলেন তিনি।
সংঘাতের আবহ তৈরিই ছিল। বর্তমানে এলাকায় রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী জেলা পরিষদ সদস্য শাহানুর মণ্ডলের সঙ্গে বিবাদ আরও গাঢ় হয়। একসময় ব্লক সভাপতি থাকলেও ২০২২ সালের শুরুর দিকে তাঁকে সেই পদ থেকে সরিয়ে দেয় দল। দায়িত্ব পান নজরুল হক।
তৃণমূল অন্দরে খবর, নজরুল ঘনিষ্ঠ সিরাজুল বেশে নানা কারণে দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের একাংশের দাবি, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে আই এস এফ জোটের হয়ে কাজ করেন সিরাজুল। পরে আবার তৃণমূলের হয়ে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেন।
শাহানুরের উত্থান এবং সিরাজুলের ব্যাকফুটে চলে যাওয়াই প্রধান কারণ, অনুঘটক হিসাবে কাজ করেছে জমি,ইটভাটা দখল সহ একাধিক ইস্যু। মাঝে মধ্যেই দু-পক্ষের বিবাদ হত, নজরুল হক ব্লক সভাপতি হওয়ার পর বিবাদ আরও তুঙ্গে ওঠে।
সূত্রের খবর, একাধিকবার জেলা ও ব্লক নেতৃত্বকে সিরাজুলের নামে জানিয়েছিলেন শাহানুর। কিন্তু দাপুটে ব্লক সভাপতি নজরুল বারবার আগলে রাখেন সিরাজুলকে। মূলত এই ড্যামেজ কন্ট্রোলের লক্ষ্যেই সিরাজুলের অনুগামীদের মধ্যে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের ঘটনা ঘটে।
সোমবার রাতের ঘটনা তার চূড়ান্ত পরিণতি। কার্যালয়ের সামনেই কাজিয়া বাধে। চলে গুলিও। থামাতে গিয়ে আক্রান্ত হন পুলিশ কনস্টেবল। এই ঝামেলার নেপথ্যে তৃণমূল নেতৃত্বই একাধিক তত্ত্ব খাঁড়া করছেন। উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পরিষদের সদস্য শাহানুজ মণ্ডল এই ঘটনার নেপথ্যে দুষ্কৃতী তত্ত্ব খাঁড়া করেছেন। তাঁর যুক্তি, “দুষ্কৃতীদের আখড়া। অভিযুক্ত আমাদের দলের কেউ নন। দুষ্কৃতীরা এক জায়গায় হয়েছিল। ওখানকার লোকই থানায় ফোন করেছিল। পুলিশের সঙ্গেই আমাদের ছাত্রনেতা বুলবুল ছিল। সে সময় বুলবুলকে লক্ষ্য করে গুলি করে দুষ্কৃতীরা। ওই ছাত্রনেতাকে সরাতে গিয়েই পুলিশ গুলি খায়।”
এই ঘটনাকে গ্রাম্য বিবাদ বলেই উল্লেখ করেছেন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন। তিনি বলেন, “ঘটনাটা অনভিপ্রেত। স্থানীয় কোনও বিবাদ থেকে হয়ে থাকতে পারে। আমাদের এখানে অন্য কোনও গ্রুপিজম নেই। যেমন ওদের সুকান্ত, দিলীপ, লকেটের এক একটা করে গোষ্ঠী রয়েছে। আমাদের একটাই পরিবার। সেই পরিবারে যদি কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকে, সেটা দেখতে হবে। এটা দেখতে হবে প্রশাসন কতটা তৎপরতার সঙ্গে দোষীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করেছে।