West Bengal School: তিনি হেড মাস্টার! তিনি মিডডে মিলের রাঁধুনি, তিনিই বাজান ঘণ্টা! আহা, বাংলার শিক্ষকের হাল

School: শিশুশ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পঠন পাঠন হয় ওই স্কুলে। স্কুলের ৬ টি ক্লাসে সব মিলিয়ে ৩৮ জন পড়ুয়া রয়েছে। তাঁদের উপস্থিতির হার একশো শতাংশ। পড়ুয়াদের ৬ টি ক্লাসরুমে না বসিয়ে দু'টি ঘরে বসিয়ে মধুবাবু একবার একটি ঘরে গিয়ে পড়ুয়াদের কিছুক্ষণ পড়ান।

West Bengal School: তিনি হেড মাস্টার! তিনি মিডডে মিলের রাঁধুনি, তিনিই বাজান ঘণ্টা! আহা, বাংলার শিক্ষকের হাল
একাই কুম্ভ সামলাচ্ছেন প্রধান শিক্ষকImage Credit source: Tv9 Bangla
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 31, 2024 | 2:05 PM

আসানসোল: রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে চাকরি প্রার্থীরা যখন পথে নামছেন। হকের চাকরির দাবিতে দিনের পর দিন রাত কাটাচ্ছেন ফুটপাতে, সেই সময় আসানসোলে শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে সরকারি স্কুল। আগে এই স্কুলে পড়াতেন তিনজন। তবে বদলি নিয়ে চলে যান দুই শিক্ষক। ফলে সংখ্যাটা ঠেকেছে একে। সম্প্রতি, একজন শিক্ষিকাকে ওই স্কুলে যাওয়ার নির্দেশিকা দিলেও বেহাল রাস্তার জন্য তিনিও যেতে নারাজ। ফলে একাই ‘কুম্ভ’ রক্ষা করছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মধুসূদন পাল।

আসানসোল পুরনিগমের ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের কুলটি বিধানসভার হিরাপুর চক্রে বিনোদবাঁধ অবৈতনিক (এফপি) স্কুল দীর্ঘদিন চলছে এই ভাবে। এখন সেই স্কুলে পড়াচ্ছেন একমাত্র শিক্ষক মধুসূদন পাল। তিনিই প্রধান শিক্ষক। কার্যত তাঁর একার কাঁধেই গোটা স্কুলের দায়িত্ব। স্কুলের ‘জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ’ অর্থাৎ পাঠদান থেকে স্কুলের প্রশাসনিক সব কাজ, মিড ডে মিল এক হাতে সামলাতে হচ্ছে তাঁকে। পঞ্চায়েত এলাকা নয়,পুরনিগমের অন্তর্গত এলাকা হয়েও এভাবেই শিক্ষার ভার বয়ে চলেছেন শিক্ষক মধুসূদন বাবু। নতুন শিক্ষক না আসা পর্যন্ত সমস্যার সুরাহা যে সম্ভয় তা হারে-হারে বুঝেছেন তিনি।

শিশুশ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পঠন পাঠন হয় ওই স্কুলে। স্কুলের ৬ টি ক্লাসে সব মিলিয়ে ৩৮ জন পড়ুয়া রয়েছে। তাঁদের উপস্থিতির হার একশো শতাংশ। পড়ুয়াদের ৬ টি ক্লাসরুমে না বসিয়ে দু’টি ঘরে বসিয়ে মধুবাবু একবার একটি ঘরে গিয়ে পড়ুয়াদের কিছুক্ষণ পড়ান। তারপরে আবার কিছুক্ষণ অন্য ঘরে গিয়ে পড়ান। এর মাঝে আবার দেখে আসেন মিড ডে মিলের রান্নাবান্না। আন্তরিকতায় কোনও অভাব না রাখলেও পঠনপাঠনে প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন প্রধান শিক্ষক মধুসূদন পাল।

গত কয়েক মাস ধরে এইভাবেই চলছে স্কুল। আদিবাসী অধ্যুষিত পড়ুয়াদের দাবি, এই স্কুলে ‘নতুন স্যার দিদিমণি’ দরকার। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত জেলা স্কুল পরিদর্শক দেবাশিস সরকার। তিনি জানান, “বিদ্যালয়টিতে শূন্য পদ তৈরি হয়েছে। একজন শিক্ষিকা নিয়োগ হয়েছিলেন। কিন্তু ওই গ্রামে যাওয়ার রাস্তা এতটাই বেহাল, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেই। বিনোদবাঁধ যেতে অসুবিধা বলে তিনি অন্য স্কুলে বদলি নেওয়ার আবেদন করেছেন। ওই স্কুলে অন্য শিক্ষক পাঠানোর চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু মূল সমস্যা রাস্তা। আমরা প্রয়োজনে স্থানীয় কাউন্সিলর বা মেয়রের সঙ্গে কথা বলব। বিষয়টি শিক্ষা দফতরকেও জানানো হয়েছে। দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।” আসানসোল পৌরনিগমের মেয়র পরিষদ (শিক্ষা ) সুব্রত অধিকারী আবার বেহাল রাস্তার জন্য স্কুলের এই অবস্থা তা মানতে নারাজ। তিনি মনে করেন যে শিক্ষিকাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিনি যখন আসছেন না সেখানে তাঁরই গাফিলতি রয়েছে।

স্কুলের একমাত্র শিক্ষক মধুসূদন বাবু বলেন, “অমানসিক চাপ নিয়ে সব দিক সামলাচ্ছি। আমারও অন্যত্র চলে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। কিন্ত আমি পড়ুয়াদের কথা ভেবে আর যাইনি। আমি স্থানীয় তাই কষ্ট করে হলেও স্কুলে সময় মত পৌঁছে যাই। কয়েক মাস ধরে ছুটি নিতে পারিনি। আমার একদিন অনুপস্থিতিতে স্কুলে তালা পড়ে যাবে। তবে এমন পরিস্থিতি দীর্ঘদিন চলতে পারে না। উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ ফেরাতে অবিলম্বে শিক্ষক নিয়োগ দরকার।”

উল্লেখ্য বার্নপুর ইসকো বাইপাস থেকে বিনোদবাঁধ গ্রামে যাওয়া রাস্তা তিন থেকে তিন কিলোমিটারের মতো দূরত্ব। কিন্তু এই রাস্তায় বড় বড় পাথর আর বোল্ডারে ভর্তি। রাস্তার মাঝেই হয়ে গেছে ঝোঁপঝাড় জঙ্গল। বর্ষাকালে হাঁটা পর্যন্ত যায় না ওই রাস্তা দিয়ে। অথচ ওই তিন কিলোমিটার সংযোগ হলেই আদিবাসী অধ্যুষিত বিনোদবাঁধ গ্রামের স্কুলের মিটে যাবে সমস্ত সমস্যা। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে রাস্তা তৈরি হয়নি। আর রাস্তা তৈরি হয়নি বলেই এই সমস্যার সম্মুখীন পড়ুয়ারা। শুধু আসানসোল নয়, আকছাড় এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুল থেকে। খোদ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও স্বীকার করে বলেছিলেন, ‘নিয়োগ না হলে এই সমস্যার সমাধান নেই।’