ভুবনডাঙার জেলবন্দি আসামীর শিল্প এখন মেদিনীপুর শহরের ঘরে ঘরে

দীর্ঘ উনিশ বছর জেলবন্দি সুজিত দোলুই (Sujit Dalui) এখন মুক্তির অপেক্ষায়, চান শান্তিনিকেতনে শিল্পকর্ম করতে

ভুবনডাঙার জেলবন্দি আসামীর শিল্প এখন মেদিনীপুর শহরের ঘরে ঘরে
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Feb 20, 2021 | 6:09 PM

পশ্চিম মেদিনীপুর: বন্দিজীবন। তবে তাঁর কল্পনার আকাশ মুক্ত। আর সেই কল্পনাকে বাস্তব রূপ দিয়ে একের পর এক শিল্পকর্ম করে চলেছেন খুনের মামলায় বন্দি আসামী সুজিত দোলুই (Sujit Dalui)। সেই শিল্পকর্ম দিয়ে বাড়ি সাজাচ্ছেন মেদিনীপুরের মানুষ।

১৯৯৬ সালের এক খুনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী সুজিত দোলুই। এখন তিনি মেদিনীপুর মুক্ত সংশোধনাগারের বন্দি। তবে মেদিনীপুর শহরবাসীর কাছে সুজিত দোলুইয়ের পরিচয় কোনও খুনী আসামী নয়। সুজিতকে তাঁরা চেনেন একজন জাত শিল্পী হিসেবে। মেদিনীপুর মুক্ত সংশোধনাগারের বন্দি সুজিতের হাতে তৈরি কাঠের আসবাব থেকে ঘর সাজানোর শৌখিন উপকরণ, শহরজুড়ে রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছে সেসব। বলা যায় মেদিনীপুর জুড়ে ফার্নিচার ব্যবসার একাধিপত্য চালাচ্ছেন সুজিত দোলুই। মুক্ত সংশোধনাগার থেকে যখন একের পর এক বন্দি পালানোর খবর পাওয়া যায়, সে জায়গায় বন্দি সুজিত দোলুই যেন স্বতন্ত্র। মুক্ত সংশোধনাগার থেকেই রমরমিয়ে ফার্নিচার ব্যবসা চালাচ্ছেন তিনি। সুজিতের তৈরি কাঠের ফার্নিচারে ঘর সাজাচ্ছেন শহরবাসী।

আদতে শান্তিনিকেতনের ভুবনডাঙ্গার বাসিন্দা সুজিত দোলুই ১৯৯৬ সালে ২ অক্টোবর একটি খুনের মামলায় গ্রেফতার হন। ৭২ দিনের মাথায় সিউড়ি আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেলেও দীর্ঘ ছয় বছর চলে বিচার পর্ব। এরপর ২০০২ সালের ১৪ অক্টোবর তাঁকে যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করে সিউড়ি আদালত। তারপর তাঁর জায়গা হয় বহরমপুর সংশোধনাগার, সেখান থেকে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার। তবে কয়েক বছর থাকার পর সুজিতকে মুক্ত সংশোধনাগারে থাকার জন্য বাছাই করে জেল কর্তৃপক্ষ। তারপর থেকে সুজিত দোলুইয়ের জায়গা হয় মেদিনীপুরের মুক্ত সংশোধনাগার। আর সেখান থেকেই আসামী সুজিতের উত্তরণ শিল্পী সুজিতের। মেদিনীপুর শহরের উদয় পল্লীতে দোকান ভাড়া নিয়ে শুরু করেন ফার্নিচার ব্যবসা। আর তার সঙ্গে চলছে খেয়াল গানের তালিম।

আরও পড়ুন: সম্পর্কে ‘না’ প্রেমিকার, গামছা গলায় ‘আত্মঘাতী’ প্রেমিক

শান্তিনিকেতনে শিল্পভাস্কর্য ফুটিয়ে তোলার জন্য চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনাক্রমে সে চাকরি আর করা হয়ে ওঠেনি। তবে গাছের গুড়ি কেটে বিভিন্ন মডেল তৈরির নেশা এই দীর্ঘ বন্দিদশাতেও যায়নি তাঁর। তেমনি গানের নেশাতেও মজে থাকেন সুজিত। ২০১১ সালে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বন্দিদের নিয়ে তৈরি করেছিলেন মুক্তবেড়ি গানের দল। এখন মেদিনীপুরে শুরু করেছেন খেয়াল গানের তালিম নেওয়া। এসবের মধ্যেও সুজিত দোলুইয়ের মন পড়ে সেই ভুবনডাঙায়। তাই বন্দিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় দিন গোনেন তিনি। ইচ্ছে রয়েছে শান্তিনিকেতনে নিজের ব্যবসা শুরু করবেন। সেখান থেকে যাতে দেশ-বিদেশ তাঁর শিল্পকর্ম ছড়িয়ে পড়ে সেই স্বপ্নে বিভোর বন্দি সুজিত। তাঁর আক্ষেপ, যে দোষে তিনি দোষী নন তাতে দীর্ঘ উনিশ বছর বন্দি হয়ে আছেন। যদিও শোনা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই মুক্ত সংশোধনাগারের ৬৬ জন বন্দির মধ্যে বেশ কয়েকজন ছাড়া পেয়ে যাবেন। সেই তালিকায় সুজিতও থাকতে পারেন।