Partha Chatterjee: ৪৫ কোটির জমি, গ্রানাইট-মার্বেলে মোড়া স্কুলেও জড়িয়ে পার্থ-র নাম, কী ভাবে এত ধনী হলেন কৃষ্ণরা?
Partha Chatterjee: শনিবারই পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়কে গ্রেফতার করেছে ইডি। পিংলার ঝাঁ চকচকে স্কুল ঘিরেও উঠছে প্রশ্ন।
পিংলা: পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে ধানের গোলা, বাগানবাড়ি। সে পর্যন্তও ঠিক ছিল। তবে গ্রামের ভিতর এমন ঝাঁ চকচকে স্কুল দেখলে একটু অবাক হতে হয় বৈকি! প্রায় দেড় লক্ষ বর্গ ফুট জমিতে সেই অট্টালিকা দেখে চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েচিল গ্রামের মানুষের। আর নিয়োগ দুর্নীতি সামনে আসার পর বিরোধীরা সেই স্কুলের তথ্য সামনে আনেন, কারণ স্কুলটির চেয়ারম্যানের নাম কল্যাণময় ভট্টাচার্য, যিনি সম্পর্কে মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামাই, আর স্কুলের মালিকের নাম কৃষ্ণ অধিকারী, সম্পর্কে পার্থ-র জামাইয়ের মামা। শুক্রবার পার্থ-র নাকতলার বাড়ির পাশাপাশি, পিংলার সেই বাগানবাড়িতেও পৌঁছে গিয়েছিল ইডি। প্রায় ১১ ঘণ্টা ধরে চলে তল্লাশি। বেশ কিছু কাগজপত্রও উদ্ধার হয়েছে।
৪৫ কোটির জমি
প্রত্যন্ত গ্রাম পিংলার খীরিন্দা মৌজা। সেখানেই চাষের জমির ওপর তৈরি হয়েছে ওই স্কুল। জানা যায়, কারখানার নাম করেই এই জমি কেনা হয়েছিল। যাঁদের কাছ থেকে জমি কেনা হয়েছিল, তাঁরা বলছেন, নোটবন্দির সময় নগদ টাকা দিয়ে জমি কেনা হয়েছিল। শুধু স্কুলের জমি নয়, আরও দুটি প্লট কেনা হয়েছিল, যাতে রয়েছে বাগানবাড়ি। সব মিলিয়ে জমি প্রায় ২৭ বিঘা বা ৫৪০ কাঠা বা দেড় লক্ষ বর্গ ফুট। ওই জমির দাম প্রায় ৪৫ কোটি।
স্কুল গড়েছেন পার্থবাবু, দাবি স্থানীয়দের
এলাকাটাকে শহরতলিও বলা চলে না। সেখানেই তিন ফসলি জমি। স্কুলের ভবন তৈরি হয়েছে গ্রানাইট পাথর আর বিদেশি মার্বেল দিয়ে। কেজি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার ব্যবস্থা রয়েছে। স্কুলের বিল্ডিং-এর সামনে আধুনিক মডেলের অন্তত ৬-৭ টি বাস দাঁড়িয়ে থাকে। এ ছাড়াও রয়েছে একাধিক ছোট গাড়ি। ১৫ বিঘার ওপর তৈরি হয়েছে ওই বি সি এম ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, নিজের তত্ত্বাবধানে স্কুল তৈরি করেছেন খোদ পার্থবাবু। গত এপ্রিলে সেই স্কুল তৈরি হয়েছে। চলতি বছরে দুবার সেখানে গিয়েছেন মন্ত্রী।
কারখানা হল না, মিলল না চাকরিও!
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন নোটবন্দির সময় কারখানা হবে বলেই জমির খোঁজ টালানো হচ্ছিল। ওই মৌজার কৃষকদের বলা হয়েছিল, সব পরিবারের দুজন করে চাকরি পাবেন। জমি দিয়েছিলেন দুলাল দে, মুক্তি ভঞ্জ, শক্তি ভঞ্জ, গৌতম হুই, কৃষ্ণচন্দ্র রাউৎ সহ বেশ কয়েকজন। কারখানা তো হয়নি, গড়ে ওঠে স্কুল। আর চাকরিও মেলেনি বলে দাবি কৃষকদের।
জামাইয়ের মামা ঘোরেন বোলেরো গাড়িতে
এই স্কুলে ভর্তি হতে গেলে লাগে ১৫ হাজার টাকা, আর মাসিক বেতন দিতে হয় ২৪০০ টাকা। যাতায়াতের জন্য দিতে হয় ২৫০০ থেকে থেকে তিন হাজার টাকা। এলাকায় কান পাতলে শোনা যায়, পার্থ-র জামাইয়ের দুই মামা মধু অধিকারী, কৃষ্ণ অধিকারীর একসময় ছিল টানাটানির সংসার। আর এখন তাঁরা বোলেরো গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করেন। বাড়ির মেয়েরা স্কুটি নিয়ে যাতাযাত করেন। মাত্র পাঁচ ছয় বছরে এমন পরিবর্তন কী ভাবে হল, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেকের মনেই। শুধু স্কুল নয়, গোপীনাথপুর মৌজার কাছেই আট বিঘা জমিতে হয় ফল চাষ। সেখানে আছে এসি কটেজ।
জানা যায়, বাবলি চট্টোপাধ্যায় মেমোরিয়াল থেকে ওই জমি-বাড়ির টাকা খরচ করা হয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াত স্ত্রীর নাম বাবলি। এই সম্পত্তি তাই রয়েছে ইডির নজরে। শুক্রবার ১১ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালানো হয় সেখানে। পার্থ-র জামাইয়ের মামাকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি জানান, ইডি আধিকারিকরা এসেছিলেন, তবে তাঁকে তেমন কিছু জিজ্ঞাসা করেননি। শুধু কাগজ নিয়ে চলে গিয়েছেন।