Dev and Hiran: দেবের লক্ষ্মী এগিয়ে, হিরণের সরস্বতী

Dev and Hiran: ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের ২ বারের সাংসদ দেব। এবারও তাঁকেই প্রার্থী করেছে তৃণমূল। অন্যদিকে, খড়্গপুর সদরের বিজেপি বিধায়ক হিরণ। এবার তিনি ঘাটালে দেবের প্রতিদ্বন্দ্বী। নির্বাচনী হলফনামায় কী জানিয়েছেন দুই তারকা প্রার্থী?

Dev and Hiran: দেবের লক্ষ্মী এগিয়ে, হিরণের সরস্বতী
ঘাটালের দুই তারকা প্রার্থী দেব ও হিরণ
Follow Us:
| Updated on: May 06, 2024 | 7:05 PM

কলকাতা ও ঘাটাল: দু’জনেই নায়ক। বয়সের ব্যবধান ৬ বছর। দু’জনে টলিউডে পা রেখেছেন ২ বছরের ব্যবধানে। একসময় দু’জনেই একই দলে ছিলেন। আর আজ তাঁরা পরস্পরের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। একই লোকসভা আসন থেকে পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন। ভোটের ফল কী হবে, সেটা জানা যাবে ৪ জুন। কিন্তু, তার আগে জেনে নেওয়া যাক, হলফনামায় ঘাটালের দুই তারকা প্রার্থী কী জানিয়েছেন। কার কত সম্পত্তি? পড়াশোনাই বা কতদূর? কী বলছে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী দেব ও বিজেপির তারকা প্রার্থী হিরণের নির্বাচনী হলফনামা?

দীপক অধিকারী। সিনেপ্রেমীদের কাছে অবশ্য তিনি দেব। পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে আদি বাড়ি। ১৯৮২ সালের ২৫ ডিসেম্বর জন্ম দেবের। বাংলা সিনেমায় পদার্পণ ২০০৫ সালে। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর ২১ জুলাই তৃণমূলের শহিদ দিবসের মঞ্চে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। কিন্তু, প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে তখনও দেখা যায়নি তাঁকে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাঁর নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে তৃণমূল। তার পর দশ বছর ঘাটালের সাংসদ বছর একচল্লিশের দেব। এবারও এই কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন। তবে দেব জানিয়েছেন, এবার প্রার্থী হতে চাইছিলেন না তিনি। কিন্তু, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পেয়ে ফের প্রার্থী হতে রাজি হয়েছেন।

দেবের প্রতিদ্বন্দ্বী হিরণও টলিউডের নায়ক। পুরো নাম হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায়। জন্ম হাওড়ার উলুবেড়িয়ায়। ২০০৭ সালে বাংলা সিনেমায় পদার্পণ করেন। বছর সাতচল্লিশের হিরণ একসময় দেবের সঙ্গেই তৃণমূলে ছিলেন। কিন্তু, একুশের নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগ দেন। খড়্গপুর সদর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তৃণমূল প্রার্থীকে পরাজিত করেন। বিধায়ক হওয়ার পাশাপাশি খড়্গপুর পুরসভার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও তিনি। এবার ঘাটাল লোকসভায় দেবের বিরুদ্ধে বিজেপির তারকা প্রার্থী তিনি।

এই খবরটিও পড়ুন

নির্বাচনী হলফনামায় কী জানিয়েছেন দুই তারকা প্রার্থী?

হলফনামায় ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষ পর্যন্ত আয়ের উল্লেখ করেছেন দেব। হলফনামায় দেব জানিয়েছেন, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে আয় করেছেন ৪ কোটি ৯৯ লক্ষ ১৫ হাজার ৭৭০ টাকা। ২০২১-২২-এ তাঁর আয় ছিল ২ কোটি ৬৮ লক্ষ ৩৫ হাজার ৯৩০ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে তিনি আয় করেন ২ কোটি ৮৪ লক্ষ ৮২ হাজার ১৩০ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে দেবের আয় ছিল ১ কোটি ৯৯ লক্ষ ৩৬ হাজার ৭০০ টাকা। আর ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে তাঁর আয় ছিল ১ কোটি ৩৫ লক্ষ ৮ হাজার ১৪০ টাকা।

আয়ের দিক থেকে দেবের থেকে অনেকটাই পিছনে হিরণ। হলফনামায় তিনি জানিয়েছেন, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে তাঁর আয় ছিল ৫ লক্ষ ৪২ হাজার ৫৭০ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে তাঁর আয় কয়েক লক্ষ বেশি ছিল। ওই অর্থবর্ষে মোট ৯ লক্ষ ১ হাজার ৯১০ টাকা আয় করেছিলেন তিনি। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে বিজেপি প্রার্থীর আয় ছিল ৫ লক্ষ ১ হাজার ৬৭০ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে তা ছিল ৭ লক্ষ ৮০ হাজার ২৫০ টাকা। আর ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে হিরণের আয় ছিল ৮ লক্ষ ৬৮ হাজার ১২৩ টাকা।

বিজেপি প্রার্থী হিরণ তাঁর স্ত্রী অনিন্দিতা চট্টোপাধ্যায়ের আয়ের হিসেবও জানিয়েছেন হলফনামায়। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে অনিন্দিতার আয় ছিল ৫ লক্ষ ৪৭ হাজার ১০০ টাকা। ৪ লক্ষ ৫ হাজার ৫৭০ টাকা আয় ছিল ২০২১-২২ অর্থবর্ষে। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে হিরণের স্ত্রীর আয় ছিল ৫ লক্ষ ৫ হাজার ২৭০ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে অনিন্দিতার আয় ছিল ৪ লক্ষ ৮২ হাজার ৯৩০ টাকা। আর ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে ৭ লক্ষ ৬৩ হাজার ৪৭৯ টাকা আয় করেছিলেন হিরণের স্ত্রী।

হলফনামায় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির হিসেব দিয়েছেন দুই তারকা প্রার্থী-

একাধিক ব্যাঙ্কে সেভিংস অ্যাকাউন্টে কয়েক কোটি টাকা জমা আছে দেবের। এছাড়াও বেশ কিছু স্কিমে বিনিয়োগও করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে তাঁর মোট ৯ কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে। সেভিংস অ্যাকাউন্টে রয়েছে মোট ১ কোটি ২০ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা। ২ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা দেব বিনিয়োগ করেছেন মিউচুয়াল ফান্ডে।

হলফনামার তথ্য বলছে, দেবের কাছে রয়েছে একটি মার্সিডিজ বেনজ গাড়ি, যার মূল্য ১ কোটি ১২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। এছাড়া তাঁর কাছে রয়েছে ২২০০ গ্রাম সোনা, যার মূল্য ৪৯ লক্ষ ১৮ হাজার। এছাড়াও অভিনেতার সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে ১২ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকার হাতঘড়ি। দেবের মোট অস্থাবর সম্পত্তি ১৭ কোটি ২২ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকার।

স্থাবর সম্পত্তির মধ্য়ে রয়েছে দেবের একাধিক ফ্ল্যাট। হলফনামায় উল্লেখ আছে, সাউথ সিটি-র দুটি ফ্ল্যাটের কথা। এছাড়া আর্বানা টাওয়ার ও বেদিক ভিলেজের দুটি ফ্ল্যাটের কথাও বলা হয়েছে।

সাউথ সিটি-র একটি ফ্ল্যাটের বর্তমান মূল্য ৩ কোটি ১০ লক্ষ ৭০ হাজার, অপর একটি ফ্ল্যাটের দাম ১ কোটি ৫৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। আর্বানা টাওয়ারের ফ্ল্যাটের দাম ১৩ কোটি ৩২ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা আর বেদিক ভিলেজের ফ্ল্যাটের বর্তমান মূল্য ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে দেবের স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১৯ কোটি ৯১ লক্ষ ১২ হাজার টাকা। দেব তাঁর আয়ের উৎস হিসেবে অভিনয় ও সাংসদ পদের কথাই উল্লেখ করেছেন।

হলফনামায় হিরণ জানিয়েছেন, একাধিক ব্যাঙ্কে টাকা রয়েছে তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর। ৪ লক্ষ ৭১ হাজার ৬৯৬ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি রয়েছে তাঁর। আর তাঁর স্ত্রীরও ৫ লক্ষ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি রয়েছে। হিরণের কাছে রয়েছে ১৫ লক্ষ টাকার সোনার গয়না। আর তাঁর স্ত্রীর কাছে রয়েছে ১৮ লক্ষ টাকার সোনার গয়না। সবমিলিয়ে হিরণের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৩ কোটি ১৩ লক্ষ ১৫ হাজার ৮২৮ টাকা। আর তাঁর স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি ৯২ লক্ষ ২৪ হাজার ৭৭৯ টাকা। তাঁর পরিবারের এক সদস্যের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৪২ লক্ষ ৩ হাজার ৩২৬ টাকা।

২০১৫ সালে কসবায় ৩২ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট কেনেন হিরণ। যার বর্তমান বাজারমূল্য ৯০ লক্ষ টাকা। বিজেপি প্রার্থী মোট ঋণ রয়েছে ১ কোটি ৫২ হাজার ৩৭ টাকা। নিজের আয়ের উৎস হিসেবে অভিনয়, বিধায়ক হিসেবে পাওয়া ভাতা, ব্যবসার কথা উল্লেখ করেছেন হিরণ। তাঁর স্ত্রীর আয়ের উৎস ব্যবসা।

সবমিলিয়ে দু’জনের হলফনামা বলছে, হিরণের থেকে দেবের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কয়েকগুণ বেশি।

কতদূর পড়াশোনা করেছেন ঘাটালের দুই তারকা প্রার্থী?

দেব হলফনামায় জানিয়েছেন, ২০০৩ সালে কম্পিউটার টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা সম্পূর্ণ করেছেন তিনি। অন্যদিকে, হলফনামায় হিরণ জানিয়েছেন, ২০২১ সালে গ্রামীণ উন্নয়ন নিয়ে PhD করেছেন তিনি। ২০২৩ সালের মে মাস থেকে IIT খড়্গপুরে পোস্ট PhD রিসার্চ ফেলো করছেন তিনি।

দুই তারকা প্রার্থীর নির্বাচনী হলফনামা বলছে, লক্ষ্মীর ভারে এগিয়ে দেব। আর সরস্বতী ঝুঁকে হিরণের দিকে। নির্বাচনে কে কাকে টেক্কা দেবে, সেটাই এখন দেখার। ২৫ মে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ। ফল প্রকাশ ৪ জুন। জনতার রায় কার দিকে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা।