BJP: দাঁইহাটে দিলীপ ঘোষের উপস্থিতিতেই বিক্ষোভ, দল থেকে বহিষ্কৃত ৪ বিজেপি নেতা!

Katwa: জেলা সভাপতি কৃষ্ণ দাস জানিয়েছেন, দলের শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণেই চারজন নেতাকে বহিষ্কারের পাশাপাশি ১৪ জনকে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে।

BJP: দাঁইহাটে দিলীপ ঘোষের উপস্থিতিতেই বিক্ষোভ, দল থেকে বহিষ্কৃত ৪ বিজেপি নেতা!
বিজেপির বৈঠক ঘিরে তুমুল গোষ্ঠীকোন্দলের অভিযোগ উঠল কাটোয়ার দাঁইহাটে। নিজস্ব চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 16, 2021 | 10:19 PM

পূর্ব বর্ধমান:  বিজেপির (BJP) বৈঠক ঘিরে তুমুল গোষ্ঠীকোন্দলের অভিযোগ  উঠেছিল কাটোয়ার দাঁইহাটে। সেই কোন্দল ঘিরে ভাঙচুর, মারামারি, ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে গত অক্টোবরে। এ বার সেই ঘটনায়,  অভিযুক্ত চার দলীয় নেতাকে বহিষ্কার করল পদ্ম শিবির। পাশাপাশি, ১৪ জন নেতার কাছে পাঠানো হল বিশেষ সতর্কবার্তা। বিজেপির কাটোয়া জেলা সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষ খোদ সেই কথা ঘোষণা করেন।

জানা গিয়েছে, বহিষ্কৃত চার নেতা হলেন মৃণাল দাস, সেন্টু পাসওয়ান, চঞ্চল মণ্ডল ও আনন্দ তালুকদার। এদের প্রত্যেকের কাছেই চিঠি দিয়ে দলের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, ১৪ জন দলীয় নেতাকেও বিশেষ মর্মে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছেন, সমীর মণ্ডল, শান্তনু ঘোষ, কার্তিক পাল, দেবব্রত পাল, নীতিশ ঘরামি, অমিত কুমার মণ্ডল প্রমুখ।

জেলা সভাপতি কৃষ্ণ দাস জানিয়েছেন, দলের শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণেই চারজন নেতাকে বহিষ্কারের পাশাপাশি ১৪ জনকে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে। দলীয় কর্মী-নেতাদের বিশেষ ক্ষোভ-বিক্ষোভ, অভিযোগ থাকতেই পারে। কিন্তু তা প্রকাশের মাধ্যম দলের সাংগঠনিক বৈঠক নয় বলেই স্পষ্ট জানিয়েছেন বিজেপি জেলা সভাপতি। ভবিষ্যতে এই ঘটনা ফের ঘটলে কড়া পদক্ষেপ করতে দল দ্বিতীয়বার ভাববে না এমনটাই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কৃষ্ণ।

গত মাসে, বিজেপির (BJP) বৈঠক ঘিরে তুমুল গোষ্ঠীকোন্দলের অভিযোগ উঠল কাটোয়ার দাঁইহাটে। এই কোন্দল ঘিরে ভাঙচুর, মারামারি, ধুন্ধুমার কাণ্ড শুক্রবার সকালে। ঘটনার সময় ওই দলীয় কার্যালয়ের ভিতরেই বসে ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। দিলীপ ঘোষের এই ধরনের অভিজ্ঞতা আগেও হয়েছে। তবে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার প্রথমবার এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে কিছুটা হতবাকই হন। যদিও তাঁর বিশ্বাস, ‘এরা বিজেপির কর্মী নয়। বিজেপির পতাকা নিয়ে কেউ বিজেপির কার্যালয়ে ভাঙচুর করতেই পারে না।’

দাঁইহাটে কাটোয়া জেলা বিজেপি কার্যালয়। সেখানেই গত ২২ অক্টোবর বৈঠক করছিলেন দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদাররা। ছিলেন বিজেপির জেলা সভাপতি-সহ অন্যান্য কর্মীরা। বিক্ষোভ প্রদর্শনকারী বিজেপি কর্মীদের অভিযোগ, এই বৈঠকটি বেলা তিনটে থেকে হওয়ার কথা ছিল। সেই মতো সকলকে জানানো হয়েছিল। এরই মধ্যে হঠাৎ সকাল ১১টা থেকে কাউকে কিছু না জানিয়ে তা সারার চেষ্টা করেন জেলা সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষ। এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন দলের একাংশ।

ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটে ওই বিজেপি কার্যালয়ে। চেয়ার ভাঙচুর, ধাক্কাধাক্কি, চড় চাপাটি থেকে বিজেপির পতাকা লাগানো লাঠি দিয়ে দলীয় কর্মীদেরই মারামারি — বাদ যায়নি কিছুই। যদিও বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, “আমাদের কোনও ভাঙচুর হয়নি। প্রতিবাদ একটু চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর কিছুই না। আমরা যারা কাউন্টিংয়ে ছিলাম মরতে মরতে বেঁচেছি। ৬৮ জন কর্মী আহত হয়েছেন, ২৬টা বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। ৭টা গুমটি ভাঙচুর হয়েছে। জেলা সভাপতি ও মণ্ডল সভাপতিদের বার বার ফোন করলেও আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। আমরা অবহেলিত অবস্থায় ছিলাম।”

অভিযোগকারীরা জানান, “এখানে আমাদের রাজ্য সভাপতি ও দিলীপ ঘোষের বৈঠক। আমাদের বলা হয়েছিল সাড়ে তিনটের সময় বৈঠক হবে। কিন্তু চোরের মতো চুপি চুপি ১১টার সময় এখানকার জেলা নেতারা ওই বৈঠক সেরে ফেলতে চাইছেন। কারণ একটাই। এই জেলায় প্রচুর ভারতীয় জনতা পার্টির কর্মীরা ভোটের পর মার খেয়েছেন। পরবর্তী সময়ে বাড়ি ছাড়া হয়েছেন, ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই যে জেলা সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষ থেকে শুরু করে জেলা কমিটির কেউ আসেনি। ওরাই আজ চুপি চুপি বৈঠকটাও সেরে ফেলতে চাইছিল। ওদের লক্ষ্য কোনও ভাবেই রাজ্য সভাপতির কাছে যাতে বার্তা না যায়, এ জেলার দলের ভিতর বিক্ষোভ আছে। এর জন্য দায়ী দিলীপ ঘোষ। এই জেলা সভাপতিকে বাঁচানোর জন্যই উনি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে ঘুরছেন। দিলীপ ঘোষের সায় রয়েছে।”

এ প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, “আমাদের যাঁরা কর্মী সকলেই ঠিক আছেন। কিছু উটকো লোক নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে ভেবে এসেছিলেন দলে। বিরোধী পক্ষের রাজনীতি করাটা খুব কঠিন কাজ। শাসকদলের নানা অত্যাচার থাকে। এতেই অনেকে হতাশ হয়ে গিয়েছেন। অনেকে একটু ভয় পেয়েছেন। তবে ভয়ের কিছু নেই। আমাদের বিরোধী দলনেতা, রাজ্য সভাপতি সকলেই তরুণ, লড়াকু। পুরো রাজ্যে দল সুসংহত। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে এখানে সভাপতি আছেন, তাঁকে লিখিত জানাতে পারেন। এসব মানা যায় না।”

অন্যদিকে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, “বিজেপির পতাকা নিয়ে বিজেপির কোনও কর্মীই ভাঙচুর করতে পারেন না। আমার বিশ্বাস তাঁরা বিজেপির কর্মী নয়। থেকেও থাকেন, ভবিষ্যতে থাকবেন না। আমার মনে হয় এতে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও ইন্ধন আছে। ওদেরই পাঠানো লোক। যদি দেখা যায় বিজেপির কোনও কর্মী বা নেতৃত্ব এমন কাজ করেছে, তবে দল তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে ব্যবস্থা নেবে। আমার বিশ্বাস এরা বিজেপির কেউ নয়।”

যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতির অভিযোগ নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “এটা একটা ভিত্তিহীন হাস্যকর অভিযোগ। একটা সার্কাস পার্টি মনে হচ্ছে, মানুষও সবই বোঝেন। আর দিলীপ ঘোষ তো উল্টো কথা বললেন। বিজেপির দুই গোষ্ঠী প্রকাশ্যে মারামারি করছে, এখানেও তৃণমূলের ইন্ধন? পুরনো বিজেপির সঙ্গে হাওয়ায় ঢোকা বিজেপিদের গোলমাল। এতে আবার তৃণমূলের কী করার থাকতে পারে!”

আরও পড়ুন: Howrah Businessman Murder: দীর্ঘদিন গা-ঢাকা দিয়েছিলেন, অবশেষে ‘ভাই’ সব্যসাচীকে খুনে আদালতে আত্মসমপর্ণ সোমনাথের