মঙ্গলকোট-কাণ্ডে জড়িত তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত সদস্য! সিআইডির জালে আরও ১ লিঙ্কম্যান

Mangolkot Murder Case:তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলকোট পঞ্চায়েতের ১০০ দিনের কাজের সুপারভাইজরের দায়িত্বে ছিলেন রিপন। এলাকায় সক্রিয় তৃণমূল কর্মী বলেই পরিচিত ছিলেন তিনি।

মঙ্গলকোট-কাণ্ডে জড়িত তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত সদস্য! সিআইডির জালে আরও ১ লিঙ্কম্যান
মঙ্গলকোট-কাণ্ডে মৃত তৃণমূল নেতা অসীম দাস, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 22, 2021 | 8:35 PM

পূর্ব বর্ধমান: মঙ্গলকোটে তৃণমূল (TMC) অঞ্চল সভাপতি অসীম দাসকে খুনের ঘটনায় শাসক শিবিরেরই ‘বি-টিম’ যুক্ত ছিল বলে আগেই অভিযোগ করেছিলেন মৃতের পরিবার। ক্রমেই পোক্ত হচ্ছে সেই অভিযোগ। মঙ্গলকোট-কাণ্ডে সিআইডির জালে আরও এক লিঙ্কম্যান। জানা গিয়েছে, ধৃত রিপন শেখ নামের ওই ব্যক্তি তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত সদস্য। ১০০ দিনের কাজের সমস্ত তদারকি করতেন রিপন। অসীম দাসের খুনের ঘটনায় যে মাস্টারপ্ল্য়ান ছকা হয়েছিল তার পেছনে ছিলেন রিপন শেখ। শনিবার রাতে তাঁকে নবাবহাট থেকে গ্রেফতার করেন তদন্তকারীরা।

সিআইডি ও মঙ্গলকোট পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত রিপন শেখ মঙ্গলকোটেরই সীতাহাটির বাসিন্দা। তৃণমূল নেতা অসীম দাসের খুনে মূল চক্রী রাজু শেখকে আগেই গ্রেফতার করেছিল সিআইডি। এ বার সেই তালিকায় যোগ হল রিপন শেখ। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলকোট পঞ্চায়েতের ১০০ দিনের কাজের সুপারভাইজরের দায়িত্বে ছিলেন রিপন। এলাকায় সক্রিয় তৃণমূল কর্মী বলেই পরিচিত ছিলেন তিনি। ধৃত রাজু শেখের ছায়াসঙ্গী রিপন অসীম দাস-খুনের পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিকল্পনা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। কীভাবে অসীমকে খুন করা হবে, কারা করবে এই সমস্ত কিছুর নেপথ্যে লিঙ্কম্যান ছিলেন রিপন এমনটাই খবর সিআইডি সূত্রে। ইতমধ্যে, ধৃতকে ৮ দিনের সিআইডি হেফাজতে দিয়েছে আদালত।

মঙ্গলকোটে তৃণমূল (TMC) নেতা খুনের ঘটনায় এর আগে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। রফিক শেখ ছাড়াও লাখুড়িয়ার তৃণমূল সহ-সভাপতি শাবুল শেখ ও আরও এক তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। গত ১৬ জুলাই মঙ্গলকোটে তৃণমূল নেতা অসীম দাস খুনের ঘটনার তদন্তভার হাতে নেয় সিআইডি। হোমিসাইড শাখার তদন্তকারীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সিআইডি তদন্তভার হাতে নেওয়ার ঠিক এক সপ্তাহ আগেই খুন হন তৃণমূল নেতা অসীম দাস।

নিজের বাড়ির কাছেই গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হন অসীম দাস। তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় অসীম দাসের পরিবারের দাবি ছিল শাসকদলেরই ‘বি-গোষ্ঠী’ এই কাজ করেছে। যদিও, তৃণমূলের (TMC) তরফে বারবার নিশানা করা হয়েছিল বিজেপিকে। কিন্তু বিজেপির তরফে সাফ জানানো হয়, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই মৃত্য়ু।

বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল জানান, খুনি বিজেপির হোক বা অন্য দলের কোনও ক্ষমা করা হবে না। মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দোষীকে গ্রেফতার কার হবে বলে জানান অনুব্রত। ঠিক তার পরেরদিনই গ্রেফতার করা হয় লাখুড়িয়ার তৃণমূলের অঞ্চল সহ-সভাপতি শাবুল শেখ-সহ আরও এক কর্মীকে। যদিও, খুনের ঘটনায় তাঁদের কোনও যোগ নেই বলেই দাবি করেন তৃণমূল নেতা শাবুল।

মঙ্গলকোট-কাণ্ডে আগেই সিট গঠন করেছিল বর্ধমান জেলা পুলিশ। চার সদস্যের সেই বিশেষ তদন্তকারী দলে রয়েছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, এসডিপিও, মঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত আইসি ও ওই থানারই প্রাক্তন আইসি। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ অনুমান করেছিল সুপারি কিলার দিয়ে খুন  করা হয়েছে। পরে তথ্যপ্রমাণ পেয়ে  দুই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করে জেলা পুলিশ।

জেলা পুলিশ সূ্ত্রে জানা গিয়েছিল, মৃত তৃণমূল (TMC) নেতা অসীম দাসের সঙ্গে বেশ কয়েকদিন ধরেই দলের অন্য সদস্যদের মতবিরোধ দেখা গিয়েছিল। পাশাপাশি, অঞ্চল সভাপতির পদ পরিবর্তন নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়। এই নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ ছিলেন অসীম। পাশাপাশি, বালিখাদান থেকে বালিপাচার এবং সেই পাচারের টাকা আত্মসাত্‍ ও বন্টন নিয়েও বেশ কিছু প্রভাবশালী নেতৃত্বের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছিলেন অসীম এমনটাই অনুমান গোয়েন্দাদের। তদন্তকারী অফিসারদের আরও অনুমান, বালি পাচার কাণ্ডেও যোগ ছিল  নিহত তৃণমূল নেতার। পাচারের টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে খুন হতে হয়েছে অসীমবাবুকে এমনই অনুমান করছিলেন গোয়েন্দারা। সিআইডি তদন্তভার হাতে তুলে নেওয়ার পর বালিপাচারজনিত বিতর্কে এখনও ইতি টানেননি সিআইডির গোয়েন্দারা। সমস্ত ঘটনায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেই জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। আরও পড়ুন: দুয়ারে ‘দুর্নীতি’, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম বিলি ঘিরে বিতর্কে তৃণমূল!