দুয়ারে ‘দুর্নীতি’, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম বিলি ঘিরে বিতর্কে তৃণমূল!
Duare Sarkar: ঘটনায়, তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্য়ায় ফোন মারফত জানান, এরকম কোনও অভিযোগ এখনও এসে পৌঁছয়নি। তবে গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে। এরকম কোনও ঘটনা ঘটে থাকলে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।
পূর্ব বর্ধমান: দুয়ারে সরকার ক্যাম্প চালুই হল না। অথচ, তার আগেই থেকেই চালু হয়ে গিয়েছে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর ফর্ম বিলি জমা নেওয়া। আর এই ফর্ম বিলির কাজ করছেন তৃণমূল নেতারা! কাটোয়ার ফুলবাগানে তৃণমূলের (TMC) দলীয় কার্যালয়ে ফুটে উঠল এমনই ছবি। আর এই ছবি ঘিরেই বিতর্ক। যেখানে, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার-এর ফর্ম নিয়ে কোনও দুর্নীতি করা যাবে না সেখানে কী করে চলছে এমন ফর্ম বিলি ও জমা?
বৃহস্পতিবার বিকেলে, কাটোয়া ১ নম্বর ব্লকের কেশীগ্রাম গ্রামপঞ্চায়েতের ফুলবাগানে তৃণমূলের (TMC) দলীয় কার্যালয় শুরু হয় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের ফর্ম বিলি ও জমা নেওয়া। এদিকে চলতি মাসের ২৭ তারিখে ওই গ্রামে দুয়ারে সরকারের শিবির হওয়ার কথা। সরকারি নির্দেশমতো ওইদিনই উপভোক্তাদের দেওয়া হবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম। সেখান থেকেই তা জমা নেওয়া হবে। তাহলে শিবির শুরুর আগেই কীভাবে তৃণমূল নেতাদের হাতে ফর্ম পৌঁছল? কেনই বা তাঁরা ফর্ম বিলি করছেন? এই ফর্মের উত্স কী? আদৌ কি ওই ফর্ম আসল? সামনে আসছে এমন নানা প্রশ্ন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই বিকেল হলেই ওই তৃণমূল কার্যালয়ে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের ফর্ম বিলি চলছে। তাই অনেকেই সেখানে ভিড় করছেন। প্রশ্ন উঠছে নবান্নে যখন মুখ্যমন্ত্রী খোদ নির্দেশ দিয়েছেন দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প ছাড়া কোথাও থেকে এই ফর্ম পূরণ করা বা জমা দেওয়া যাবে না, সেখানে কী করে এই ফর্ম বিলি চলছে! তাহলে কি সরকার থেকে উপভোক্তা পর্যন্ত সঠিক নির্দেশ পৌঁছচ্ছে না? ফর্ম নিতে আসা এক উপভোক্তার কথায়, “জানি দুয়ারে সরকারেও ফর্ম দেওয়া হবে। কিন্তু আগে থেকে তো ফর্ম পেলেই ভাল। তাহলে আর পরে চিন্তা থাকবে না। ভিড়ে দাঁড়াতে হবে না।” অর্থাত্, স্পষ্ট উপভোক্তারা আদৌ আসল ফর্মে সই করছেন কি না তাও জানেন না। এমনকী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের টাকা তাঁরা পাবেন কি না তাও স্পষ্ট নয়।
ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, দুয়ারে সরকারের ক্য়াম্প হলে যে ভিড় হবে, সেই ভিড় এড়াতেই এই ফর্ম সরাসরি বিলি করা হচ্ছে। পাশাপাশি, তাঁরা আরও জানিয়েছেন, এই প্রকল্প সরকারি প্রকল্প নয়, তৃণমূলের (TMC) দলীয় প্রকল্প। তাই, এখানে ফর্ম বিলি করা হচ্ছে। ঘটনায়, তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্য়ায় ফোন মারফত জানান, এরকম কোনও অভিযোগ এখনও এসে পৌঁছয়নি। তবে গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে। এরকম কোনও ঘটনা ঘটে থাকলে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।
পাল্টা, বিজেপি জেলা-সহ সভাপতি অনিল দত্ত বলেন, “তৃণমূল যা করছে তা অন্যায়। যেখানে সরকার থেকে বলা হয়েছে দুয়ারে সরকার ছাড়া আর কোথাও এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম মিলবে না, সেখানে, কী করে এই ফর্ম দেওয়া হচ্ছে? রাজনৈতিক প্রকল্পকে দলীয় প্রকল্পের মতো ব্যবহার করছেন। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা দেওয়ার নামে এইভাবে নিয়ম বহির্ভূত ফর্ম বিলি চলছে?” কাটায়োর মনহকুমা শাসক জামিলা ফতেমা জেবা বলেন, “এইভাবে ফর্ম বিলি করা যায় না। কেউ যদি এই ধরনের কাজ করে থাকেন তবে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।”
উল্লেখ্য, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পে ‘দুর্নীতি’ এই প্রথম নয়। সরকারিভাবে প্রকল্প চালু হওয়ার কথা ঘোষণার পর থেকেই ধূপগুড়ি, মালদা-সহ একাধিক এলাকায় এই দুর্নীতির ছবি সামনে এসেছে। এমনকী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম তুলতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়েছেন এই ছবিও ধরা পড়েছে। কোথাও বা প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে মোটা টাকা নেওয়ার অভিযোগও সামনে এসেছে। সম্প্রতি, বিজেপি রাজ্য় সভাপতি দিলীপ ঘোষ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে বলেছেন, “বাংলার মানুষকে ভিখারি বানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ৫০০ টাকার জন্য মানুষ লাইনে দাঁড়াচ্ছে। মারপিট করছে। পদপিষ্ট হচ্ছে।”
উল্লেখ্য, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের দুর্নীতি প্রসঙ্গে প্রথম থেকেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্য়মন্ত্রী। সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বলেছিলেন, “দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য কাউন্টার থাকবে, সবার প্রথম সেখানে যেতে হবে। সেখানে গেলেই একটি ফর্ম পাওয়া যাবে। সেই ফর্মে একটি নির্দিষ্ট নম্বর থাকবে। সেই নম্বরের রেকর্ড সরকারের কাছেও থাকবে।” তাঁর কথায়, “এই ফর্ম কোনও ভাবে জেরক্স বা ডুপ্লিকেট করা যাবে না। এই ফর্ম ছাড়া অন্য কোনও ফর্ম নেওয়াও হবে না। কেউ যাতে এই ফর্মের অপব্যবহার করতে না পারে তার জন্যই এই ব্যবস্থা।”
মমতা আরও জানান, ফর্মের সঙ্গেই কম্পিউটার জেনারেটেড ইউনিক নম্বর থাকবে। তার সঙ্গে আধার কার্ডও লিঙ্ক করে দেওয়া হবে। এই নম্বরটাই ফর্ম ফিলাপের জন্য স্বীকার্য হবে। ঘুরপথে যদি কেউ অন্যভাবে ফর্ম জোগাড় করে তা জমা দেওয়ার চেষ্টা করে, তা মেনে নেওয়া হবে না। শুধুমাত্র দুয়ারে সরকার শিবির থেকেই ফর্ম নিতে হবে। রাজ্য সরকারের বহু প্রতীক্ষিত ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পে সংখ্য়ালঘু ও আদিবাসী মহিলাদের মাসিক ১০০০ টাকা ও জেনারেল ক্যাটাগরির মহিলাদের মাসিক ৫০০ টাকা ভাতা দেওয়া হবে। আরও পড়ুন: ‘মাদার ডেয়ারি নয়, মায়ের দুধ খেয়েছি’, চা-চক্রে দিলীপের নিশানায় ফের মমতাই