Subrata Mukherjee: দু’দণ্ড শান্তি দিত গ্রামের ভিটে, সুব্রত-প্রয়াণে কেবলই বেদনা নওয়াপাড়া জুড়ে…

Kalna: স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কলকাতায় যাওয়ার পরেও নিজের গ্রামের বাড়ির কথা ভুলে যাননি সুব্রত। নিয়ম করে যাতায়াত করতেন। খবর রাখতেন এলাকার মানুষের

Subrata Mukherjee: দু'দণ্ড শান্তি দিত গ্রামের ভিটে, সুব্রত-প্রয়াণে কেবলই বেদনা নওয়াপাড়া জুড়ে...
সুব্রতর আদিভিটে, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 05, 2021 | 8:19 PM

পূর্ব বর্ধমান: পরিষদীয় কাজ। প্রশাসনিক কাজ। তারপরে ছিল ‘অনুরোধের আসর’। ব্যস্ততার শেষ ছিল না। তবুও নিয়মে কোনও খামতি ছিল না। মাঝেমধ্যেই  নিজের আদিভিটেতে পা দিতেন রাজ্যের সদ্য প্রয়াত পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukherjee)। তাঁর ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এর  কোনও পরিবর্তন হয়নি। পূর্বস্থলীর ১ নম্বর ব্লকরে নওয়াপাড়া গ্রাম আজ নিস্তব্ধ। আলোর উত্‍সবে আজ অন্ধকার এলাকা জুড়ে।

নওয়াপাড়াতেই জন্মেছিলেন সুব্রত। বাবা অশোক মুখোপাধ্যায় ছিলেন এলাকার সাধারণ স্কুল শিক্ষক। ছোটবেলা কেটেছে ওই গ্রামেই। গ্রামের মাটিতে বেড়ে ওঠা সুব্রতর বজবজ আসা আরও পরে। কিন্তু, কলকাতায় গিয়েও ভুলে যাননি নিজের কর্তব্য। নিয়ম করে আসতেন গ্রামের ভিটেতে। সুব্রতর বাল্যবন্ধু তিনকড়ি বৈরাগ্য এখনও জীবিত। শোকাহত। বুঝতে পারছেন না কীভাবে কোথা থেকে কী হয়ে গেল।

তিনকড়িবাবুর কথায়, “একদিন ছোটবেলায় কাদা মেখে বাড়ি ফিরেছিল। বকুনির ভয়ে আমার কাছে আসে। আমি স্নানটান করিয়ে সব সেরে ওকে বাড়ি পাঠাই। পরে যখন মন্ত্রী হয়ে গ্রামে এসেছে, কথা হয়েছে, আমার চোখের সমস্যা শুনেই আর দেরি করেনি। সঙ্গে সঙ্গে চিকিত্‍সার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। গ্রামে আমাদের জোড়া মন্ডা পাওয়া যায়। সেসব খেতে খুব ভালবাসত। এখন শুনলাম ওর নাকি মিষ্টি খাওয়া বারণ ছিল। তাও তো খেত। জানতামই না। লুকিয়ে লুকিয়ে এভাবে দিনের পর দিন মিষ্টি খেয়ে গিয়েছে।”

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কলকাতায় যাওয়ার পরেও নিজের গ্রামের বাড়ির কথা ভুলে যাননি সুব্রত। নিয়ম করে যাতায়াত করতেন। খবর রাখতেন এলাকার মানুষের। কেউ কোনও সমস্যা নিয়ে ছুটে এলে তখনই তা সমাধান করার চেষ্টা করতেন। এমনটাই ছিলেন রাজ্যের সদ্য প্রয়াত পঞ্চায়েত মন্ত্রী। তাঁর মৃত্যুতে মনখারাপ নয়, নির্বাক গ্রামবাসী। অসুস্থতার খবর জানতেন সকলেই, কিন্তু প্রতিবার যে অদম্য মনোবলে জয়ী হয়েছেন সর্বক্ষেত্রে, তেমন এ বারেও হাসপাতাল থেকে ফিরে আসবেন এমনটাই ভেবেছিলেন সকলে। কিন্তু তা আর হল না।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আচমকাই সুব্রতবাবুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এসএসকেএম সূত্রে খবর, স্টেন্ট থ্রম্বোসিসে আক্রান্ত হন মন্ত্রী। কিছুদিন আগেই সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের হৃদযন্ত্রে স্টেন্ট বসানো হয়েছিল। কার্ডিওলজি বিভাগে আইসিইইতে ভর্তি তিনি। সেখানেই স্টেন্ট থ্রম্বোসিসে সুব্রত মুখোপাধ্যায় আক্রান্ত হন। সেই স্টেন্টের জায়গায় রক্ত জমা বেঁধে যায়। ফলে সেই স্টেন্ট বের করে নেওয়া ছাড়া আর কোনও পথ নেই। এরপরই দ্রুত বিশেষজ্ঞদের ডেকে পাঠানো হয়। তাঁরা সবরকম চেষ্টা করছেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার। অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাপোর্টে তাঁকে রাখার চেষ্টা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

৭৫ বছর বয়সী মন্ত্রী সম্প্রতি শ্বাসের কষ্ট নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর উচ্চ রক্তচাপ ছিল। ডায়াবেটিসের পাশাপাশি সিওপিডির সমস্যা ছিল তাঁর। ১ নভেম্বর দু’টি স্টেন্ট বসানো হয়েছিল সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের শরীরে। চিকিৎসায় সাড়াও দিচ্ছিলেন মন্ত্রী। বৃহস্পতিবার সকালেই তাঁকে কার্ডিও ওয়ার্ড থেকে উডবার্নে নিয়ে যাওয়া হয়। আচমকাই সন্ধ্যায় ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। অবশেষে রাত  ৯টা বেজে ২২ মিনিটে মৃত্যু হয় তাঁর।

দীর্ঘদিনের রাজনীতিক তথা মন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর শুনেই হাসপাতালে ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাসপাতালে প্রবেশের কিছু সময় পর বেরিয়ে আসেন দুঃসংবাদকে সঙ্গী করে। পঞ্চায়েত মন্ত্রীকে ‘দাদা’ বলেই সম্মোধন করতেন তৃণমূল নেত্রী। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের এভাবে চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না মমতা। শোকস্তব্ধ গলায় বললেন, “সুব্রতদার শেষ যাত্রায় আমার থাকা সম্ভব নয়। সুব্রতদার দেহ আমার পক্ষে দেখা সম্ভব নয়।”

গলার স্বর বসে গিয়েছে। যে মমতা তাঁর জ্বালাময়ী ভাষণের জন্য ভূ-ভারতে পরিচিত, সেই তিনিও আজ সাংবাদিকদের সঙ্গেও বেশিক্ষণ কথা বলতে পারলেন না। ম্রিয়মান গলায় বলে গেলেন, “আমি অনেক দুর্যোগের সাক্ষী। কিন্তু সুব্রতদার মৃত্যু আমার কাছে অনেকে বড় দুর্যোগ। কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমি কিছু বলার মত পরিস্থিতিতে নেই। এত হাসিখুশি একজন মানুষ…”। শুক্রবার, পিস হেভেন থেকে রবীন্দ্র সদন হয়ে বিধানসভা ভবন থেকে এগডালিয়া ক্লাব ও বালিগঞ্জের বাড়ি হয়ে শেষে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে অন্তেষ্ট্যিক্রিয়া সম্পন্ন হয় সুব্রতর।

আরও পড়ুন: ‘কলকাতার মেয়র হওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল…’, রেষারেষিতে রাখঢাক ছিল না, স্মৃতি-সফর শোভনদেবের