Subrata Mukherjee: দেবী কালীর ‘কৃপাধন্য’ ছিলেন সুব্রত, তাঁর প্রয়াণেও দেবীস্মরণ গ্রামবাসীর

Kalna: ছোট থেকেই দুরন্ত দামাল সুব্রত নাকি ছোটবেলায় নাকি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।

Subrata Mukherjee: দেবী কালীর 'কৃপাধন্য' ছিলেন সুব্রত, তাঁর প্রয়াণেও দেবীস্মরণ গ্রামবাসীর
মামাবাড়িতে সুব্রত, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 05, 2021 | 8:55 PM

পূর্ব বর্ধমান: ভূতের ভয় ছিল খুব। এতটাই যে ঘরের আলো জ্বালিয়ে মোবাইলে দেবী কালীর ছবি রেখে ঘুমোতে যেতেন। নয়ত, তাঁর ঘুম আসত না।এ হেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী, দুঁদে নেতা ছিলেন নাকি খোদ কালীর আশীর্বাদধন্য। এমনটাই মনে করতেন এলাকাবাসী। তিনি সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর প্রয়াণে আজও দেবী কালীকেই ভরসা করেছে কালনা মন্তেশ্বরের মণ্ডল গ্রাম। এই গ্রাম সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মামার বাড়ি।

নিজের ছোটবেলার অনেকটাই কাটিয়েছিলেন কালনার এই গ্রামের বাড়িতে। একদিকে নওয়াপাড়ার গ্রাম অন্যদিকে মণ্ডল গ্রাম। ছোট থেকেই দুরন্ত দামাল সুব্রত নাকি ছোটবেলায় নাকি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেইসময়ে, তাঁর মা নওয়াপাড়া থেকে পায়ে হেঁটে মণ্ডল গ্রামে নিয়ে আসেন। দেবী কালীর দাক্ষিণ্যেই নাকি ফের সুস্থ হয়ে ওঠেন সুব্রত এমনটাই জানিয়েছেন খোদ তাঁর মামাতো ভাই সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়।

স্থানীয়ারা জানিয়েছেন, যতই যাই হোক নিয়ম করে এই গ্রামে আসতেন সুব্রত। যতই ব্যস্ততা থাক, সপ্তাহান্তে একবার হলেও ঘুরে যেতেন গ্রামের বাড়িতে। তাঁর দীর্ঘ ৫০ বছরের পরিষদীয় জীবনে এর কোনও পরিবর্তন হয়নি। অকস্মাত্‍ সুব্রতর প্রয়াণে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে গোটা গ্রাম।

অন্যদিকে, আদি ভিটে নওদাপাড়ায় যাতায়াত ছিল সুব্রতর। নিয়মিত সেখানেও যোগাযোগ রাখতেন। সেখানকার এলাকাবাসী জানিয়েছেন, কলকাতায় যাওয়ার পরেও নিজের গ্রামের বাড়ির কথা ভুলে যাননি সুব্রত। নিয়ম করে যাতায়াত করতেন। খবর রাখতেন এলাকার মানুষের। কেউ কোনও সমস্যা নিয়ে ছুটে এলে তখনই তা সমাধান করার চেষ্টা করতেন। এমনটাই ছিলেন রাজ্যের সদ্য প্রয়াত পঞ্চায়েত মন্ত্রী। তাঁর মৃত্যুতে মনখারাপ নয়, নির্বাক গ্রামবাসী। অসুস্থতার খবর জানতেন সকলেই, কিন্তু প্রতিবার যে অদম্য মনোবলে জয়ী হয়েছেন সর্বক্ষেত্রে, তেমন এ বারেও হাসপাতাল থেকে ফিরে আসবেন এমনটাই ভেবেছিলেন সকলে। কিন্তু তা আর হল না।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আচমকাই সুব্রতবাবুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এসএসকেএম সূত্রে খবর, স্টেন্ট থ্রম্বোসিসে আক্রান্ত হন মন্ত্রী। কিছুদিন আগেই সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের হৃদযন্ত্রে স্টেন্ট বসানো হয়েছিল। কার্ডিওলজি বিভাগে আইসিইইতে ভর্তি তিনি। সেখানেই স্টেন্ট থ্রম্বোসিসে সুব্রত মুখোপাধ্যায় আক্রান্ত হন। সেই স্টেন্টের জায়গায় রক্ত জমা বেঁধে যায়। ফলে সেই স্টেন্ট বের করে নেওয়া ছাড়া আর কোনও পথ নেই। এরপরই দ্রুত বিশেষজ্ঞদের ডেকে পাঠানো হয়। তাঁরা সবরকম চেষ্টা করছেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার। অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাপোর্টে তাঁকে রাখার চেষ্টা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

৭৫ বছর বয়সী মন্ত্রী সম্প্রতি শ্বাসের কষ্ট নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর উচ্চ রক্তচাপ ছিল। ডায়াবেটিসের পাশাপাশি সিওপিডির সমস্যা ছিল তাঁর। ১ নভেম্বর দু’টি স্টেন্ট বসানো হয়েছিল সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের শরীরে। চিকিৎসায় সাড়াও দিচ্ছিলেন মন্ত্রী। বৃহস্পতিবার সকালেই তাঁকে কার্ডিও ওয়ার্ড থেকে উডবার্নে নিয়ে যাওয়া হয়। আচমকাই সন্ধ্যায় ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। অবশেষে রাত  ৯টা বেজে ২২ মিনিটে মৃত্যু হয় তাঁর।

দীর্ঘদিনের রাজনীতিক তথা মন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর শুনেই হাসপাতালে ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাসপাতালে প্রবেশের কিছু সময় পর বেরিয়ে আসেন দুঃসংবাদকে সঙ্গী করে। পঞ্চায়েত মন্ত্রীকে ‘দাদা’ বলেই সম্মোধন করতেন তৃণমূল নেত্রী। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের এভাবে চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না মমতা। শোকস্তব্ধ গলায় বললেন, “সুব্রতদার শেষ যাত্রায় আমার থাকা সম্ভব নয়। সুব্রতদার দেহ আমার পক্ষে দেখা সম্ভব নয়।”

গলার স্বর বসে গিয়েছে। যে মমতা তাঁর জ্বালাময়ী ভাষণের জন্য ভূ-ভারতে পরিচিত, সেই তিনিও আজ সাংবাদিকদের সঙ্গেও বেশিক্ষণ কথা বলতে পারলেন না। ম্রিয়মান গলায় বলে গেলেন, “আমি অনেক দুর্যোগের সাক্ষী। কিন্তু সুব্রতদার মৃত্যু আমার কাছে অনেকে বড় দুর্যোগ। কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমি কিছু বলার মত পরিস্থিতিতে নেই। এত হাসিখুশি একজন মানুষ…”। শুক্রবার, পিস হেভেন থেকে রবীন্দ্র সদন হয়ে বিধানসভা ভবন থেকে এগডালিয়া ক্লাব ও বালিগঞ্জের বাড়ি হয়ে শেষে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে অন্তেষ্ট্যিক্রিয়া সম্পন্ন হয় সুব্রতর।

আরও পড়ুন: ‘কলকাতার মেয়র হওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল…’, রেষারেষিতে রাখঢাক ছিল না, স্মৃতি-সফর শোভনদেবের