‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অবৈধ অপসারণ, আইনি পথে সমাধান হবে’, নির্ঘোষ শুভেন্দুর

Suvendu Adhikari: জেলার রাজনীতি অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রিত হয় সমবায়ের উপর। তাই জেলার রাজনীতিতে অধিকারী পুত্রের ক্ষমতা খর্ব করতে সমবায় ব্যবস্থার সঙ্গে তাঁর সমস্ত যোগসূত্র ছিন্ন করতে চাইছে শাসকদল এমনটাই অনুমান রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের

'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অবৈধ অপসারণ, আইনি পথে সমাধান হবে', নির্ঘোষ শুভেন্দুর
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 24, 2021 | 4:23 PM

পূর্ব মেদিনীপুর: সদ্যই কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের সভাপতি পদ থেকে অপসারিত হয়েছেন নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। অপসারণের পরেই নাম না করে তৃণমূলের বিরুদ্ধেই সুর চড়ালেন অধিকারী পুত্র (Suvendu Adhikari)। তাঁর অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই তাঁকে অপসারিত করা হয়েছে। এই অপসারণ অবৈধ বলেও উল্লেখ করেন বিজেপি নেতা।

TV9 বাংলার প্রতিনিধিকে শুভেন্দু (Suvendu Adhikari) বলেন, “এই অপসারণ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বৈধভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কারণ, অপসারণের এই বৈঠক যিনি ডেকেছিলেন, সেই ব্যাঙ্কের পরিচালন কমিটির সম্পাদক পার্থপ্রতিম নিজেই অনুপস্থিত ছিলেন। আমার কাছে এই অপসারণ সম্পূর্ণ গুরুত্বহীন। আইনি পথেই এর সমাধান হবে।” যদিও, শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠমহলের অভিযোগ, কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের ভারপ্রাপ্ত  চিন্তামণি মণ্ডলের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। পাশাপাশি, যে সদস্যরা শুভেন্দুর বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন, তার পেছনেও হাত ছিল তৃণমূলের এমনই অভিযোগ।

যদিও এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি। তাঁর কথায়, ” আদালত শুভেন্দুবাবুর অভিযোগ খারিজ করেছে আগেই শুনেছিলাম। যা হচ্ছে তা সমবায় আইন মেনেই হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আরও আগেই নেওয়া উচিত ছিল।” পাল্টা, কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, “রাজ্যের শাসক দল হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটাই তৃণমূলের থেকে আশা করা যায়। রাজ্যে এই একনায়কতন্ত্রের শাসন চলছে। কিছু ভদ্র ও সামাজিক মানুষ রয়েছেন তাঁদের পদলেহন করতে বাধ্য করছে তৃণমূল।”

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার, সাংবাদিক বৈঠকে ব্যাঙ্ক পরিচালন কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, হাইকোর্টে সমবায় মামলায় কর্তৃপক্ষের পক্ষেই রায় দিয়েছে আদালত। খারিজ হয়েছে সেই মামলা। পরিচালন কমিটির ১৯ জন সদস্যের মধ্যে  ১৪ জনের ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে। সেই ১৪ জনের মধ্যে ১০ জন সদস্য এদিন পরিচালন কমিটির সিদ্ধান্তে সহমত পোষণ করেন। শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari) পরিবর্তে ব্যাঙ্কের বর্তমান সহ-সভাপতি চিন্তামণি মণ্ডল আপাতত সভাপতির পদ সামলাবেন এমনটাই খবর সমবায় কমিটি সূত্রে। যদিও, চিন্তামণি জানিয়েছেন, কিছুদিনের মধ্যেই এ বিষয়ে বৈঠক ডাকা হবে। সেই বৈঠকেই নতুন সভাপতির নাম সর্বসম্মতিক্রমে ঠিক করা হবে। কো-অপারেটিভ ব্যাংকের অন্যতম পরিচালক আলেম আলি খান বলেন, ‘‘দীর্ঘ প্রায় চার মাসের বেশি সময় ধরে শুভেন্দুবাবু ব্যাঙ্কে আসছেন না৷ ফলে ব্যাঙ্ক ঋণ-সহ বিভিন্ন কাজ আটকে গিয়েছে ৷ সমস্যায় পড়েছেন গ্রাহকেরা৷ তাই ডিরেক্টর অফ বোর্ডের বৈঠক থেকে ভোটাভুটির মাধ্যমে শুভেন্দুবাবুকে অপসারিত করা হল৷’’

২০০৯ সালে থেকে কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের সভাপতির পদে ছিলেন অধিকারী পুত্র। সাধারণত, দুবছর পর্যন্ত সভাপতির পদে আসীন থাকা যায়। অভিযোগ, নিজ ‘পদবলে’ সভাপতির চেয়ার এতদিন ‘আঁকড়ে’ ছিলেন অধুনা বিজেপি নেতা। বিধানসভা নির্বাচন আবহে দল ও পদত্যাগ করলেও সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান পদ ছাড়েননি শুভেন্দু। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাঙ্ক পরিচালন কমিটির অনাস্থা পেশের পরেই, হাইকোর্টে মামলা করেন শুভেন্দু। রাজ্যের অর্থ দফতরের স্পেশাল অডিটের নির্দেশে সেই মামলার স্থগিতাদেশ দেওয়া হলেও পরে তা খারিজ হয়ে যায়। এরপরেই সভাপতির পদ থেকে  অপসারিত করা হয় শুভেন্দুকে।

সম্প্রতি, কাঁথি সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে শুভেন্দু অধিকারীকে। সোমবার কাঁথিতেই ইউনিয়নের পরিচালকমণ্ডলীর উপস্থিতিতে তাঁর অপসারণের সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেওয়া হয়। ইউনিয়নের ১৫ জন সদস্যের মধ্যে ১৩ জনের সম্মতিতে তাঁকে ওই পদ থেকে সরানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউনিয়নের সম্পাদক হরিসাধন দাস অধিকারী। প্রসঙ্গত, তৃণমূলে থাকার সময়ও তাঁকে ওই পদ থেকে সরাতে উদ্যোগী হয়েছিল তৃণমূলের অধিকারী-বিরোধী গোষ্ঠী। কিন্তু, সেই সময়ে ‘অধিকারী প্রতাপ’-এর জেরে  সরাতে সফল হননি শুভেন্দু-বিরোধী ওই তৃণমূল নেতারা। জেলার রাজনীতি অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রিত হয় সমবায়ের উপর। তাই জেলার রাজনীতিতে অধিকারী পুত্রের ক্ষমতা খর্ব করতে সমবায় ব্যবস্থার সঙ্গে তাঁর সমস্ত যোগসূত্র ছিন্ন করতে চাইছে শাসকদল এমনটাই অনুমান রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। আরও পড়ুন: অপসারিত শুভেন্দু! অধিকারী পুত্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ কাঁথি সমবায় দফতরের